X
শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪
৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

সীতাকুণ্ডে জঙ্গি আস্তানার চার জনের বাড়ি বান্দরবানে

এস বাসু দাশ, বান্দরবান
১৮ মার্চ ২০১৭, ১৫:৩৫আপডেট : ১৮ মার্চ ২০১৭, ২০:৩৪

নুরুল আলম ও জান্নাত আরা

চট্টগ্রামে সীতাকুণ্ড উপজেলার প্রেমতলা এলাকায় ‘ছায়ানীড়’ নামের বাড়িতে জঙ্গি আস্তানায় নিহত পাঁচজনের মধ্যে তিন জনের বাড়ি বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলায়। একইসঙ্গে 'সাধনকুটিরে' গ্রেফতারের বাড়িও একই স্থানে। নিহতরা হলেন নাইক্ষ্যংছড়ির বাইশারী এলাকার বাসিন্দা কামাল হোসেন, তার স্ত্রী জুবাইরা ইয়াসমিন ও তাদের শিশু সন্তান। আর আরামবাগে 'সাধনকুটির' থেকে গ্রেফতার একজন জুবাইরা ইয়াসমিনের ভাই জহিরুল হক (জসিম)।

নাইক্ষ্যংছড়ির স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, জুবাইরা ইয়াসমিন ও তার ভাই জহিরুল হক (জসিম) এর বাড়ি নাইক্ষ্যংছড়ির বাইশারী ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের যৌথ খামারপাড়ায়। তারা সেখানে বসবাসকারী নুরুল আলম ও জান্নাত আরার সন্তান। জুবাইরা ইয়াসমিনের স্বামী কামাল হোসেনের বাড়িও বাইশারীর যৌথ খামারপাড়ায়।

জুবাইরা ইয়াসমিনের মা জান্নাত আরা জানান, তার আট ছেলে এবং চার মেয়ের মধ্যে তিনজনের কোনও হদিস নেই। স্বামী কামাল হোসেন জুবাইরা ইয়াসমিনকে নিয়ে যায় এবং কিছুদিন পর ছেলে জহিরুল হকও তাদের সঙ্গে চলে যায়। জুবাইরার একটি ছেলে হলে সন্তানের দেখাশুনার কথা বলে তার আরেক মেয়ে মনজি বেগমকে (১৬) চট্টগ্রামে নিয়ে যায়। গত আট মাস ধরে তাদের কোনও খবর পান না বলেও জানান তিনি। জান্নাত আরা আরও জানান, কামাল ও জুবাইরা বেশ ধার্মিক ছিল।

সীতাকুণ্ডের সাধন কুটির থেকে আটক হওয়া জঙ্গি দম্পতি

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত জানুয়ারি মাসে কক্সবাজারের রামুর মো. জসিম উদ্দিন পরিচয়ে প্রথমে প্রেমতলার ‘ছায়ানীড়’ বাড়ির নিচতলার একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নেয় জঙ্গিরা। এরপর ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ দিকে জসিম উদ্দিন পরিচয়ে প্রেমতলা থেকে এক কিলোমিটার দূরে হিন্দু অধ্যুষিত এলাকা আমিরাবাদের ‘সাধন কুটির’ নামের বাড়ির ফ্ল্যাটটিও ভাড়া নেওয়া হয়।

সীতাকুণ্ড পৌরসভার প্রেমতলা ও আমিরাবাদ এলাকার দুটি বাসা ভাড়া নিয়েছিল এই জঙ্গিরা। দুই বাসায় থাকা ছয় জঙ্গির চারজনই আত্মীয়। তাদের মধ্যে দুজন আত্মঘাতী বিস্ফোরণে মারা গেছে। অন্য দুজনকে অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করেছে পুলিশ। জুবাইয়ারা ইয়াসমিন ও জহিরুল হক (জসিম) আপন ভাই বোন।

আরও জানা গেছে, এই জঙ্গিরা গত ডিসেম্বর থেকে চট্টগ্রামের পটিয়া পৌর সদরের ৩নং ওয়ার্ডের আমির ভান্ডার রেলগেট এলাকার  নুরুল আমিন মুন্সির পাকা ভবনের তৃতীয় তলায় ভাড়া থাকতেন। ফেব্রুয়ারির শেষ দিকে বাসা ছেড়ে চলে যান। পরে তারা সীতাকুণ্ডের ওই বাড়ি ভাড়া নেন।

এই ব্যাপারে পটিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শেখ মো. নেয়ামত উল্লাহ বলেন, শুক্রবার (১৭ মার্চ) বিকালে পটিয়ায় বাড়ির মালিক নুরুল আমিনকে সীতাকুণ্ডে নিহতদের ছবি দেখালে তিনি তার বাড়িতে নিহতরা ছিলেন বলে শনাক্ত করেন।

আরও জানা গেছে, গত ৭ মার্চ টঙ্গীতে ‘জঙ্গি নেতা’ মুফতি হান্নানকে প্রিজন ভ্যান থেকে ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টার পরের দিন কুমিল্লায় পুলিশের ওপর বোমা হামলা করে দুই জঙ্গি। যাত্রীবাহী বাসে নিরাপত্তা তল্লাশির সময় এ হামলার ঘটনা ঘটে। স্থানীয়দের সহায়তায় গুলিবিদ্ধ অবস্থায় জঙ্গি জহির ওরফে জসিম (২৫) এবং হাসানকে (২৪) আটক করা হয়। এই হাসানের বাড়ি বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির বাইশারীর করলিয়া মোড়া এলাকায়, তার বাবার নাম নুর হোসেন।

এই ব্যাপারে বাইশারী পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক (এসআই) আবু মুসা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সীতাকুণ্ডে নিহত বাইশারির জুবাইরা ইয়াসমিন তার স্বামী ও ভাইদের সঙ্গে কুমিল্লায় বাসে জঙ্গি হামলার ঘটনায় গ্রেফতার হাসানের পারিবারিক সম্পর্ক ছিল বলে আমরা তথ্য পেয়েছি।’

এদিকে দেশের আলোচিত এই জঙ্গি হামলা এবং হতাহতের ঘটনায় বান্দরবান জেলা জুড়ে আলোচনা-সমালোচনা তৈরি হয়েছে। মিয়ানমার সীমান্তবর্তী এলাকা হওয়ায় অনেকে ধারণা করছেন জঙ্গিরা মিয়ানমারের বিদ্রোহী সংগঠন রোহিঙ্গা সলিডারি অর্গানাইজেশন (আরএসও) সহ বিভিন্ন সশস্ত্র সংগঠন থেকে বিস্ফোরক দ্রব্য ও অস্ত্র সংগ্রহ করে জেএমবিসহ বিভিন্ন জঙ্গি গ্রুপের অনুসারী হয়ে হামলা করছে।

নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ন আহ্বায়ক তসলিম ইকবাল চৌধুরী বলেন, ‘বাইশারীতে কিছু মৌলভি ধর্মের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে সন্ত্রাসী কাজে স্থানীয়দের উদ্ভুদ্ধ করছে। এটা নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে। বাইশারীর লোক যে জঙ্গি কাজে জড়িত এই ঘটনায় আমরা বেশ লজ্জিত।’

বান্দরবানের পুলিশ সুপার সঞ্জিত রায় বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমরা এই বিষয়ে কাজ করছি এবং নাইক্ষ্যংছড়ির বিভিন্ন এলাকায় জঙ্গিবিরোধী অভিযানের প্রস্তুতি নিচ্ছি। যেকোনও সময় এই অভিযান চলবে।’

প্রসঙ্গত, সীতাকুণ্ডের ছায়ানীড় বাড়ি থেকে গ্রেনেড ও বিস্ফোরক উদ্ধার এবং পাঁচজন নিহত হওয়ার ঘটনায় গত বৃহস্পতিবার রাতে সীতাকুণ্ড থানায় পুলিশ বাদী হয়ে দুটি মামলা করে। অন্যদিকে সাধনকুটির থেকে অস্ত্র ও বিস্ফোরক উদ্ধারের ঘটনায় জসিম ওরফে জহুরুল ইসলাম এবং আরজিনা ওরফে রাজিয়া সুলতানার বিরুদ্ধে একই থানায় সন্ত্রাস দমন আইন, অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনায় দুটি মামলা হয়েছে।

/এফএস/টিএন/

 

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
আসছে না পাকিস্তান, প্রথমবার খেলবে উগান্ডা 
আসছে না পাকিস্তান, প্রথমবার খেলবে উগান্ডা 
‘গডফাদার’ স্রষ্টাকে শুরুতে ৪, শেষে ৭ মিনিটের করতালি
কান উৎসব ২০২৪‘গডফাদার’ স্রষ্টাকে শুরুতে ৪, শেষে ৭ মিনিটের করতালি
আসিফ-অনুরাধার সেই গানটি এলো অন্তর্জালে
আসিফ-অনুরাধার সেই গানটি এলো অন্তর্জালে
পুতিন ও শি ‘ক্ষতি করার’ পরিকল্পনা করতে এক হচ্ছেন: ট্রাম্প
পুতিন ও শি ‘ক্ষতি করার’ পরিকল্পনা করতে এক হচ্ছেন: ট্রাম্প
সর্বাধিক পঠিত
সিলেটে বছরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
সিলেটে বছরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
জাহাজে ওঠার পর কোরআনের সুরা শুনিয়ে দস্যুদের নিবৃত্ত করা হয়
জাহাজে ওঠার পর কোরআনের সুরা শুনিয়ে দস্যুদের নিবৃত্ত করা হয়
এমপিও আবেদন সরাসরি অধিদফতরে পাঠানো যাবে না
এমপিও আবেদন সরাসরি অধিদফতরে পাঠানো যাবে না
ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদধারীদের বিরুদ্ধে আসতে পারে আইনি ব্যবস্থা
ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদধারীদের বিরুদ্ধে আসতে পারে আইনি ব্যবস্থা
ফুল দিয়ে বরণ, রিট দিয়ে শুরু কোন্দল!
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতিফুল দিয়ে বরণ, রিট দিয়ে শুরু কোন্দল!