X
মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪
১৭ বৈশাখ ১৪৩১

ভূমিমন্ত্রীর ‘পারিবারিক’ কোন্দলে বিপর্যস্ত ঈশ্বরদী আ.লীগ

পাবনা প্রতিনিধি
২১ মে ২০১৭, ১৩:২৫আপডেট : ২২ মে ২০১৭, ২০:১২


ঈশ্বরদীতে ভূমিমন্ত্রীর ছেলেকে গ্রেফতার করে নিয়ে যাচ্ছে আইন-শৃঙ্খলাবাহিনী

আওয়ামী লীগের ঘাঁটি বলে পরিচিত পাবনার ঈশ্বরদীতে ‘পারিবারিক কোন্দলে’ বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে দলীয় রাজনীতি। ভূমিমন্ত্রীর ছেলে আর জামাতার আধিপত্য বিস্তার নিয়ে সৃষ্ট ঘরোয়া বিবাদে দলীয় নেতাকর্মীদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষও অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন। আধিপত্য বিস্তার নিয়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগও দু’টি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। তবে এ বিরোধ মূলত জামাই-শ্বশুরের দ্বন্দ্ব বলেই মনে করছেন স্থানীয়রা। প্রায় প্রতিদিনই জামাই-শ্বশুরের দুই গ্রুপের বিবাদে ঈশ্বরদী এখন আতঙ্কের শহরে পরিণত হয়েছে বলে অভিযোগ তাদের।
এদিকে, আগামী সংসদ নির্বাচনে পাবনা-৪ (ঈশ্বরদী-আটঘরিয়া উপজেলা) আসন থেকে দলীয় মনোনয়নের বিষয়টি নিয়েও নানা আলোচনা রয়েছে। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ভূমিমন্ত্রী শামসুর রহমান শরীফ ডিলুর জামাতা ও ঈশ্বরদীর পৌর মেয়র আবুল কামাল আজাদ মিন্টু চান শ্বশুরের জায়গায় স্থান পেতে। অন্যদিকে, মিন্টুর স্ত্রী ভূমিমন্ত্রীর মেয়ে মেহজাবিন শিরিন পিয়াও নির্বাচনে অংশ নেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। এ নিয়েও নতুন করে দ্বন্দ্ব দেখা দিয়েছে।

ভূমিমন্ত্রীর পারিবারিক বিরোধে ঈশ্বরদীতে প্রায়ই এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। (ফাইল ছবি)
ভূমিমন্ত্রী শামসুর রহমান শরীফ ডিলু পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। তার পক্ষে রয়েছেন মেয়ে জেলা আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক মেহজাবিন শিরিন পিয়া, ছেলে উপজেলা যুবলীগের সভাপতি শিরহান শরীফ তমাল ও সাধারণ সম্পাদক রাজীব সরকার, ঈশ্বরদী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোখলেছুর রহমান মিন্টু, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও এপিএস বশির আহমেদ বকুল।
অন্যদিকে, ভূমিমন্ত্রীর জামাতা (মেহজাবিন শিরিন পিয়ার স্বামী) পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ঈশ্বরদীর পৌর মেয়র আবুল কামাল আজাদ মিন্টুর পক্ষে রয়েছেন ঈশ্বরদী উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান নুরুজ্জামান বিশ্বাস, শ্রমিক লীগের কেন্দ্রীয় নেতা রশিদুল্লা, উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি যুবায়ের বিশ্বাস, উপজেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি সালাম খানসহ স্থানীয় ঠিকাদারদের বড় একটি অংশ।
নাম প্রকাশ না শর্তে একাধিক দলীয় নেতাকর্মী জানান, একসময় ঈশ্বরদীতে একক আধিপত্য ছিল মন্ত্রীর জামাতা মিন্টুর। তার কথাতেই সবকিছু হতো। ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে মিন্টুর বিভিন্ন নির্দেশ পালন করতেন উপজেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি আবদুস সালাম খান ও ছাত্রলীগ সভাপতি যুবায়ের বিশ্বাস। তাদের নেতৃত্বেই গত বছরের ১০ আগস্ট ঈশ্বরদীতে মন্ত্রী-সমর্থকদের জঙ্গিবিরোধী মিছিলে গুলি ও হামলা চালানো হয়েছিল।

গত বৃহস্পতিবারের সংঘর্ষে গ্রেফতারকৃতদের আদালত থেকে নেওয়া হচ্ছে জেলখানায়

দলীয় সূত্র জানায়, মিছিলে হামলার পর থেকেই মূলত জামাই-শ্বশুরের দ্বন্দ্ব প্রকাশ্য রূপ নেয়। তখন সালাম খান ও যুবায়ের বিশ্বাসকে দলীয় পদ থেকে বহিষ্কারের ঘোষণা দেন মন্ত্রী। এরপরই মিন্টু কোণঠাসা হয়ে পড়েন। এতে তাদের পদ্মা নদীর বালুমহাল, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাজসহ বিভিন্ন দফতরের ঠিকাদারি হাতছাড়া হয়ে যায়। তখন ঠিকাদারি ও কর্তৃত্ব ধরে রাখতে মন্ত্রী বিকেএসপিতে অধ্যয়নরত ছেলে শিরহান শরীফ তমালকে ঈশ্বরদী এনে উপজেলা যুবলীগের সভাপতি করেন। এরপর ছেলের নেতৃত্বে এলাকায় ফের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা শুরু করেন ভূমিমন্ত্রী। তবে এতে হাল ছাড়েননি জামাই আবুল কামাল আজাদ। দখল-আধিপত্য বজায় রাখতে তিনিও মাঠে রয়েছেন।
অন্যদিকে, পাবনা জেলা পরিষদ নির্বাচন নিয়েও জেলা আওয়ামী লীগের নেতাদের মঙ্গে মন্ত্রীর বিরোধ তৈরি হয়। নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি রেজাউল রহিম লালের বিপরীতে প্রার্থী হন মন্ত্রীর মেয়ে মেহজাবিন শিরিন পিয়া। নির্বাচনে মন্ত্রীর মেয়ের ভরাডুবি ঘটে।
ভূমিমন্ত্রীর ‘পারিবারিক’ কোন্দলে বিপর্যস্ত ঈশ্বরদী আ.লীগ এ ব্যাপারে পৌর মেয়র আবুল কালাম আজাদ মিন্টু বলেন, ‘বর্তমান সরকারের সময় অন্যায়কারীদের স্থান নেই। ঈশ্বরদীতে অন্যায়-অপকর্মের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।’ এসময় তিনি এসব অপকর্মের সঙ্গে কারা জড়িত তা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ঈশ্বরদীর সবাই তা জানেন, নতুন করে বলবার কিছু নেই।’
উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি যুবায়ের বিশ্বাস বলেন, ‘ঈশ্বরদীতে তমাল ও রাজীব সরকারের নেতৃত্বে নানা অপকর্ম হচ্ছে। তাদের ভয়ে সাধারণ মানুষ কোনও কথা বলতে পারে না।’
ভূমিমন্ত্রী শামসুর রহমান শরীফ ডিলুর মোবাইলে ফোন করা হলে তার ছেলে তাকিবুর রহমান শরীফ ফোনটি রিসিভ করে বলেন, ‘বাবা অসুস্থ, বিশ্রামে আছেন। পরে কথা বলবেন।’ পরে একাধিকবার ফোন করেও মন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।
পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ সভাপতি ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান রেজাউল রহিম লাল বলেন, ‘সভাপতি দলের স্বার্থ না দেখে নিজের পরিবারের স্বার্থ নিয়ে ব্যস্ত। কে নেতৃত্বে আসবে, পরিবারের হাতে নেতৃত্ব থাকবে কি না তার সিদ্ধান্ত নেওয়া কোনও রাজনৈতিক নেতার কাজ নয়। ঈশ্বরদীর বর্তমান অবস্থা দলের চরম ক্ষতি করছে।’

উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার (১৮ মে) ভূমিমন্ত্রীর জামাতা ও ঈশ্বরদীর পৌর মেয়র আবুল কামাল আজাদ মিন্টুর ব্যবসা প্রতিষ্ঠান চালানো হয় সশস্ত্র হামলা। পাশাপাশি মিন্টুর ঘনিষ্ঠ সহযোগী ও উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি যুবায়ের বিশ্বাসের বাড়িতেও ভাঙচুর করা হয়। এ ঘটনায় ভূমিমন্ত্রীর ছেলেসহ ছাত্রলীগ ও যুবলীগের ১১ নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠায় পুলিশ।

/এমও/এফএস/টিএন 

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ইন্দোনেশিয়ার রুয়াং আগ্নেয়গিরিতে আবারও অগ্ন্যুৎপাত,সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি
ইন্দোনেশিয়ার রুয়াং আগ্নেয়গিরিতে আবারও অগ্ন্যুৎপাত,সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি
ধর্ষণের পর ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ, ৩ জন গ্রেফতার
ধর্ষণের পর ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ, ৩ জন গ্রেফতার
রাজধানীতে মাদকদ্রব্যসহ গ্রেফতার ২০
রাজধানীতে মাদকদ্রব্যসহ গ্রেফতার ২০
লেভার হ্যাটট্রিকে দুইয়ে ফিরেছে বার্সা
লেভার হ্যাটট্রিকে দুইয়ে ফিরেছে বার্সা
সর্বাধিক পঠিত
‘পুলিশ’ স্টিকার লাগানো গাড়িতে অভিযান চালাবে পুলিশ
‘পুলিশ’ স্টিকার লাগানো গাড়িতে অভিযান চালাবে পুলিশ
এসি কেনার আগে মনে রাখতে হবে এই ৭ বিষয়
এসি কেনার আগে মনে রাখতে হবে এই ৭ বিষয়
জালিয়াতির মামলায় সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তার ২৬ বছরের কারাদণ্ড
জালিয়াতির মামলায় সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তার ২৬ বছরের কারাদণ্ড
মঙ্গলবার দুই বিভাগের সব, তিন বিভাগের আংশিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে
মঙ্গলবার দুই বিভাগের সব, তিন বিভাগের আংশিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে
খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি বন্ধের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসছে সরকার
খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি বন্ধের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসছে সরকার