দাদা এজাহার আলী গাজী চার মাস আগে মারা গেলেও সেকথা জানতো না মুক্তামনি। বাড়িতে ফেরার পর দাদার মৃত্যুর খবর শুনে কাঁদলো এবং সবাইকে কাঁদালো মুক্তামনি।
রক্তনালীর টিউমারে আক্রান্ত মুক্তামনি ঢামেক হাসপাতালে ছয় মাস চিকিৎসা নিয়ে শুক্রবার (২২ ডিসেম্বর) সন্ধ্যার পরে বাড়িতে এসে পৌঁছায়। শনিবার (২৩ ডিসেম্বর) সকাল থেকে তার দাদাকে বাব বার খুঁজতে থাকে। বলতে থাকে, ‘বাবা, সবাইকে দেখছি ভাইয়াকে (দাদা) দেখছি নাতো। রাতে (শুক্রবার) ভাইয়া (দাদা) আমাকে একবারও দেখতে এলো না যে। ভাইয়া কোথায়?’
শনিবার দুপুরে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার দক্ষিণ কামারবায়সা গ্রামের বাড়িতে দাদার কথা বার বার জানতে চাওয়ায় মুক্তামনির বাবা তাকে জানান যে, ‘তিনি (দাদা) মারা গেছেন চার মাস আগে।’ শুনেই উচ্চ স্বরে কাঁদতে থাকে মুক্তামনি। তার কান্না দেখে বাবা ইব্রাহিম হোসেন, মা আসমা খাতুন, বোন হিরামনি, চাচা আহসান হাবিব, দাদীসহ উপস্থিত সবাই কাঁদেন।
কাঁদতে কাঁদতে মুক্তামনি বলে, ‘বাবা, তুমি ভাইয়ার (দাদা) মৃত্যু খবর কেন আমাকে জানালে না। এত বড় একটি বিষয় কেন আমার কাছে লুকিয়ে রাখলে। আমি যত কষ্টই পেতাম আমাকে তো বলতে পারতে।’
মুক্তামনি তার বাবাকে বলে, ‘আমি মরে গেলেও আর ঢাকায় যাবো না। আমি আর ঘর থেকে বের হবো না। ছয় মাস ঢাকায় থাকলাম আমার তো কোনও উন্নতি হলো না।’
সাতক্ষীরা সদর উপজেলার দক্ষিণ কামারবায়সা গ্রামের মুদি দোকানি মো. ইব্রাহিমের মেয়ে মুক্তামনি। ইব্রাহিম হোসেন বলেন, ‘মুক্তামনি ঢাকা মেডিক্যালে ভর্তি হওয়ার কিছু দিন পর আমার বাবা মারা যান। কিন্তু ওকে জানানো হয়নি। শনিবার ও একাধিকবার জানতে চাওয়ায় বাবার মৃত্যুর কথা বলতে আমি বাধ্য হয়েছি। এটি শোনার পর ও অনেক কেঁদেছে। ওর কান্না দেখে আমরা কেউ চোখের পানি ধরে রাখতে পারিনি। মুক্তামনি ওর দাদাকে অনেক ভালোবাসতো। দাদা এবং দাদী ওর অনেক প্রিয়। আজ (শনিবার) ঘর থেকে ওকে বের করা হয়নি। সে হুইল চেয়ার কিনে দেওয়ার জন্য আবদার করেছে। রবিবার হুইল চেয়ার কেনা হবে। হুইল চেয়ারে করে আমার বাবার কবর দেখতে যাবে মুক্তামনি।’
তিনি আরও বলেন, ‘চিকিৎকসরা বলেছেন, ওর হাতের অবস্থা স্বাভাবিক হতে দুই বছরের বেশি সময় লাগবে। একমাস পর আবারও চেকআপের জন্য ঢাকায় যেতে বলেছেন তারা। কিন্তু মুক্তামনি আর ঢাকায় যেতে চাচ্ছে না। সে আমাকে বলেছে, কোনও অবস্থাতেই আর ঢাকায় যাবে না।’
উল্লেখ্য, এ বছরের ১২ জুলাই ঢামেক হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে ভর্তি হয় সে। প্রথমে তার রোগটিকে বিরল রোগ হিসেবে উল্লেখ করা হয়। পরে বায়োপসি করে জানা যায়, তার রক্তনালীতে টিউমার হয়েছে। তখন তার উন্নত চিকিৎসার জন্য সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে যোগাযোগ করেন বার্ন ইউনিটের চিকিৎসকরা। মুক্তামনির সব রিপোর্ট দেখে সিঙ্গাপুরের চিকিৎসকরা তার চিকিৎসা করতে অস্বীকৃতি জানান। এরপর ঢামেকের চিকিৎসকরাই তার অপারেশনের সিদ্ধান্ত নেন। পরে মুক্তামনির চিকিৎসার সব ধরনের খরচের দায়িত্ব নেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
মুক্তামনির হাতে ৫ আগস্ট প্রথম অস্ত্রোপচার হয়। তার হাতের ফোলা অংশ অস্ত্রোপচার করে ফেলে দেন চিকিৎসকরা। পরে দুই পায়ের চামড়া নিয়ে দু’দফায় তার হাতে লাগানো হয়। ঢামেকের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের পরিচালক অধ্যাপক আবুল কালামের নেতৃত্বে বিশেষজ্ঞ একদল চিকিৎসক মুক্তামনির স্কিন গ্রাফটিং (চামড়া লাগানো) অপারেশনে অংশ নেন। পরে মুক্তামনির হাত আবার ফুলে যাওয়ায়, ফোলা কমানোর উদ্দেশ্যে হাতে প্রেসার ব্যান্ডেজ বেঁধে দেওয়া হয়।
আরও পড়ুন: ‘আমার হাত তো ভালো হয়নি কো’