X
মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪
১৭ বৈশাখ ১৪৩১

ইবিতে নিয়োগ বাণিজ্যের অডিও ফাঁস!

ইবি প্রতিনিধি
১৫ জুলাই ২০১৮, ২১:১৩আপডেট : ১৫ জুলাই ২০১৮, ২১:৩০





ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে আবারও টাকা লেনদেনের অভিযোগ উঠেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন শিক্ষকের নাম উঠে এসেছে ফাঁস হওয়া এ-সংক্রান্ত অডিওতে। ২০ লাখ টাকায় প্রার্থীকে চাকরি দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে তা বাস্তবায়ন না হওয়ায় টাকা ফেরত দেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে শিক্ষক ও চাকরি প্রার্থীর কথোপকথনের অডিও ফাঁস হয়েছে।
রবিবার (১৫ জুলাই) এ অভিযোগ খতিয়ে দেখতে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী ১৫ কর্মদিবসের মধ্যে কমিটিকে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।
ওই নিয়োগ বাণিজ্যে সহযোগী হিসেবে টাকা লেনদেনের চুক্তি করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষক। তারা হলেন বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. বাকী বিল্লাহ বিকুল এবং ইংরেজি বিভাগের প্রফেসর ড. শাহাদৎ হোসেন আজাদ। আরেক শিক্ষক ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর হোসেনের নামও উঠে এসেছে অডিওতে।
চাকরিপ্রত্যাশী ফারজানা নামের এক নারী ও তার স্বামী মামুনের সঙ্গে টাকা লেনদেনের তিনটি রেকর্ড ফাঁস হয়েছে।
অডিওর কথপোকথন অনুযায়ী, নগদ ১০ লাখ এবং বাকি ১০ লাখ টাকার চেক দেওয়া হয়েছে। তবে ওই প্রার্থীর নিয়োগ নিশ্চিত না করতে পারায় টাকা ফেরত দেওয়া হয়েছে। গত ১৩ জুলাই রাতে ওই প্রার্থীর স্বামীকে ফোনে ডেকে নিয়ে টাকা ফেরত দেওয়া হয়।
ওই চাকরি প্রার্থীর স্বামী শাহরিয়ার রাজ মামুন বলেন, ‘তারা আমাকে চাকরির আশ্বাস দিয়েছিলেন বলেই টাকা দিয়েছিলাম। কিন্তু শেষ মুহূর্তে এসে তারা এমন করলেন। আমার স্ত্রীর আর চাকরির বয়স নেই। আমি তাদের বিচার চাই।’
এ বিষয়ে অভিযুক্ত বাংলা বিভাগের শিক্ষক ড. বাকী বিল্লাহ বিকুল বলেন, ‘এগুলো আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র। আমি ব্ল্যাকমেইলিংয়ের শিকার। আমি একজনের উপকার করতে চেয়েছি। সে বিষয়টি রেকর্ড করে আমাকে ফাঁসিয়ে দিয়েছে।’
এসময় অডিও ক্লিপের সত্যতার বিষয়ে বলেন, ‘এটি ইডিট করা হয়েছে।’

এ বিষয়ে কথা বলার জন্য বঙ্গবন্ধু হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. শাহাদৎ হোসেন আজাদকে একাধিকবারন ফোন দিয়েও পাওয়া যায়নি।
আর অভিযোগের ব্যাপারে ড. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘আমার বিভাগে নিয়োগ সুষ্ঠু হয়েছে এবং মেধাবীদের নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া আমার নাম দিয়ে যদি কেউ কিছু করে থাকে আমি তার সঠিক তদন্ত ও বিচার চাই।’
উপাচার্য অধ্যাপক ড. রাশিদ আসকারী বলেন, ‘আমি দুর্নীতির ব্যাপারে জিরো টলারেন্স। যদি এমন ধরনের কোনও চুক্তি তারা করে থাকে, সেটি কার্যকর হোক বা না হোক তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
তিনি বলেন, ‘এমন অসৎ এবং অশুভ চুক্তি করার জন্য অভিযোগ আকারে এলে আমরা অবশ্যই তদন্ত সাপেক্ষে বিচারের আওতায় আনবো।’
তদন্ত কমিটি
নিয়োগ বাণিজ্যে অডিও ক্লিপ ফাঁস হওয়ার বিষয়টি খতিয়ে দেখতে রবিবার বিকাল ৫টায় আইসিই বিভাগের জ্যেষ্ঠ অধ্যাপক ড. মাহবুবুর রহমানকে প্রধান করে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার এস এম আব্দুল লতিফ। কমিটির বাকি দুই সদস্য হলেন ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক ড.রেজওয়ানুল ইসলাম এবং ইংরেজি বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. আক্তারুল ইসলাম জিল্লু।
কমিটিকে আগামী ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
কথোপকথনের চুম্বক অংশ
ফারজানা: স্যার, আমি তো আপনাদের কথা শুনে অনেকখানি একদম ডিপেন্ডেবল। যে কালকে আপনারা আমাকে এত করে বললেন, জাহাঙ্গীর স্যার যখন বলল, আপনাকে, আপনার মাধ্যমে টাকাটাও ডিল-ট্রিল করবে। আপনার কথা শুনে আমি একদম ২০ লাখ টাকাও হাতে ধরায় দিলাম। তুলে দিলাম। আশা করলাম। স্যার, কেন এমনটা করল জাহাঙ্গীর হোসেন স্যার।
ড. বাকী: এখন আমি তোমার স্যারের সাথে এতক্ষণ বসে থেকে কথা বললাম।
ফারজানা: স্যার তো সিগনেচার না করলে নিয়োগ হতো না। স্যার তো আমাকে বলতে পারত। আমাকে আরও অ্যামাউন্ট দেয়া লাগত। আমি তাতেও রাজি ছিলাম।
ড. বাকী: না না, ওসব না, ওসব না। মনি, ওসব কোনো কিছুই না।
ফারজানা: তাহলে কেন আপনারা আমাকে কনফার্ম দিলেন? আমি রিটেনে ভালো করলাম। ভাইভাতেও ভালো করলাম। আমাকে সব আশ্বস্ত করে দিলেন। আর এখন শেষ মুহূর্তে এসে এমন করলেন আপনারা আমার সাথে।
ড. বাকী: এখন কুষ্টিয়া থেকে তোমাকে বলি, হয়তো অন্য কারও হয়েছে বা, যাহোক আমি তো বলতে পারব না।
ফারজানা: স্যার কাইন্ডলি, আপনারা যদি একটু দেখতেন।
ড. বাকী: না না, আমি তো জাহাঙ্গীর স্যারের সাথে এখনই উঠে এলাম। এখন এই জিনিসটা এখনই আবার। মামুন ভাই জিনিসটা বারবারই জানতে চাচ্ছে। আমি কিন্তু তাকে জানাচ্ছিলাম না। আমি তাকে পরে জানাব। কালকে সিন্ডিকেট হবে। সিন্ডিকেটের পরে জানাব। কিন্তু আগে জানিয়েই আমি আরও বিব্রত হলাম দেখছি।

ফারজানা: জ্বি স্যার, আপনি আমাকে কনফার্ম করলেন। তোমার এইটটি পারসেন্ট হয়ে গেছে। তোমার কোনও অসুবিধা নেই। এর জন্য আপনি যখন যে শর্ত দিয়েছেন, টাকা দেয়া বলেন, জাহাঙ্গীর স্যারের কোনো সত্যতা যাচাইও করতে যাইনি। আপনাকে সঙ্গে সঙ্গে টাকাটা পে করে দিয়েছি। সব করে দিয়েছি স্যার।
ড. বাকী: সেটা নিয়ে তো আর সমস্যা নাই। আমরা তো কোনও মিসইউজ করিনি। জাহাঙ্গীর স্যার তো এটা মিসইউজ করেননি। তাই না? এখন সে না পারলে, আমি তো মাঝখানে থেকে মানুষের উপকার করে এখানে তো কোনো ইন্টারেস্ট নেই।
ফারজানা: জাহাঙ্গীর স্যার এটা করত না?
ড. বাকী: পারত কিনা সেটা আমার জানা নেই। রাতে ব্যস্ত হয়ে গেছেন। সরি বলেছেন উনি। এখন কী করবো বলো? কিছু করার নেই বাবু। মামুন ভাইকে, আমি তো বসে আছি। উনি আসলে আমি তো উনাকে পৌঁছে দিয়ে...।
ফারজানা: আচ্ছা আপনি উনার (স্বামী) সাথে কথা বলেন।
ড. বাকী: হ্যাঁ।
ফারজানার স্বামী: হ্যালো।
ড. বাকী: হ্যাঁ, মামুন ভাই ভয় পাচ্ছেন কেন? কুষ্টিয়ার ছেলে। আপনি আসেন। আমি তো আপনাকে নিজে পৌঁছে দেব। কি মুশকিল রে ভাই...মানুষের উপকার করতে গিয়ে আমি নিজেই তো একটা বিব্রতকর অবস্থার মধ্যে পড়েছি।

/এইচআই/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
ধর্ষণের পর ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ, ৩ জন গ্রেফতার
ধর্ষণের পর ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ, ৩ জন গ্রেফতার
রাজধানীতে মাদকদ্রব্যসহ গ্রেফতার ২০
রাজধানীতে মাদকদ্রব্যসহ গ্রেফতার ২০
আজকের আবহাওয়া: তাপ প্রবাহ অব্যাহত থাকার আভাস
আজকের আবহাওয়া: তাপ প্রবাহ অব্যাহত থাকার আভাস
সাত দিনে হিট স্ট্রোকে ১০ জনের মৃত্যু: স্বাস্থ্য অধিদফতর
সাত দিনে হিট স্ট্রোকে ১০ জনের মৃত্যু: স্বাস্থ্য অধিদফতর
সর্বাধিক পঠিত
‘পুলিশ’ স্টিকার লাগানো গাড়িতে অভিযান চালাবে পুলিশ
‘পুলিশ’ স্টিকার লাগানো গাড়িতে অভিযান চালাবে পুলিশ
এসি কেনার আগে মনে রাখতে হবে এই ৭ বিষয়
এসি কেনার আগে মনে রাখতে হবে এই ৭ বিষয়
জালিয়াতির মামলায় সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তার ২৬ বছরের কারাদণ্ড
জালিয়াতির মামলায় সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তার ২৬ বছরের কারাদণ্ড
মঙ্গলবার দুই বিভাগের সব, তিন বিভাগের আংশিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে
মঙ্গলবার দুই বিভাগের সব, তিন বিভাগের আংশিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে
খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি বন্ধের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসছে সরকার
খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি বন্ধের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসছে সরকার