স্ত্রীকে নির্যাতন করে শাস্তির হাত থেকে রক্ষা পেতে থানার গেটে বিষ পানে আত্মহত্যার চেষ্টা চালিয়েছে শাহাজান মোড়ল লিটন (৩৫) নামে একজন অটোরিকশা চালক। পুলিশ তাকে উদ্ধার করে যশোর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করে। সোমবার (২৯ এপ্রিল) রাতে যশোর কোতোয়ালি থানার সামনে এই ঘটনা ঘটে।
অটো রিকশাচালক লিটন যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার বাদে নাভারণ এলাকার জহির মোড়লের ছেলে। তিনি প্রথম স্ত্রী রেকসোনাকে নিয়ে যশোর সদরের চাঁচড়া ইউনিয়নের ভাতুড়িয়া এলাকায় তার খালুশ্বশুর রহমত আলীর বাড়িতে থাকতেন।
আজ মঙ্গলবার সকালে হাসপাতালে লিটনের প্রথম স্ত্রী রেকসোনা খাতুন সাংবাদিকদের জানান, তাদের সংসারে এক ছেলে দুই মেয়ে। শারীরিকভাবে প্রচণ্ড অসুস্থ হওয়ায় তিনি রাগ করে লিটনকে আরেকটা বিয়ে করতে বলেন। এই সুযোগে সে কয়েকটি মেয়ের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলে। এর মধ্যে মণিরামপুরের একটি মেয়ের সঙ্গে তার দ্বিতীয় বিয়ে হয়। কয়েকদিন হলো ওই মেয়ের সঙ্গে তার ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। এই ঘটনার জন্যে লিটন তাকে দায়ী করে এবং সোমবার সকালে মারপিট করে। এদিকে, রেকসোনাকে মারপিট করায় ঘটনায় তার ভাই এবং প্রতিবেশীরা লিটনকে মারধর করে এবং তার বিরুদ্ধে নারী নির্যাতন মামলা দেওয়া হবে বলে ভয় দেখায়। সেকারণে লিটন নিজে মামলা থেকে রক্ষা পেতে থানায় যান রেকসোনাদের নামে অভিযোগ দিতে।
রেকসোনা বলেন, ‘এরপরে কী হয়েছে জানি না। শুনেছি থানার গেটে সে বিষ খেয়েছে। খবর পেয়ে আজ মঙ্গলবার সকালে হাসপাতালে তাকে দেখতে এসেছি।’
শাহাজান মোড়ল লিটন বলেন, ‘মানসিকভাবে খুব ভেঙে পড়েছি। মাথায় কিছু কাজ করছে না। আমি থানায় অভিযোগ দিতে গিয়েছিলাম। থানার ডিউটি অফিসার এসআই হাবিব সব কথা শুনে আমাকে বলেন- আপনি অভিযোগ দিয়ে যান খোঁজ খবর নিয়ে ব্যবস্থা নেব। তখন ভয় পেয়ে যাই। স্ত্রী আমার নামে নারী-শিশু মামলা দিয়ে জেলাহাজতে পাঠাতে পারে। তখনই থানার বাইরে চলে আসি আর পকেটে থাকা বোতল থেকে বিষ খাই। তখন মাথা ঘুরাতে থাকে। পুলিশ টের পেয়ে আমাকে গাড়িতে ওঠায়। এরপরে আর কিছু মনে নেই। জ্ঞান ফিরলে দেখি আমি হাসপাতালে ভর্তি।’
যশোর জেনারেল হাসপাতালের মেডিসিন ওয়ার্ডের ডাক্তার এমডি নাইম শেখ বলেন, ‘বিষপানের রোগীর অবস্থা আসলে নির্দিষ্ট করে কিছু বলা যায় না। এক ঘণ্টা পরপর কাউন্সেলিং করতে হয়। এরপরও তার অবস্থা এখন ভালো।’
কোতোয়ালি থানার ওসি অপুর্ব হাসান বলেন, ‘লিটন তার প্রথম স্ত্রীকে নির্যাতন করছে দীর্ঘদিন ধরে। স্ত্রী মামলা দিয়ে তাকে জেলহাজতে পাঠাতে পারে, সেই ভয়ে বিষ খেয়েছে।’ তিনি আরও জানান, ‘এ বিষয়ে থানায় কেউ অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ দিলে পুলিশ আইনগত ব্যবস্থাতো সবসময়ই নিয়ে থাকে। তারপরেও পুলিশ বিষয়টি খতিয়ে দেখছে।’