X
শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪
২০ বৈশাখ ১৪৩১

চার জেলার বাসিন্দাদের সংযোগ বাঁশের সাঁকো!

বিপুল সরকার সানি, দিনাজপুর
২০ জুলাই ২০১৯, ০৮:৩০আপডেট : ২০ জুলাই ২০১৯, ০৮:৪২

বীরগঞ্জের আত্রাই নদীতে বাঁশের সাঁকো দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড় ও নীলফামারী পাশাপাশি চার জেলা। এই চার জেলার বেশ কয়েকটি উপজেলার মানুষের সংযোগস্থলে পরিণত হয়েছে একটি বাঁশের সাঁকো। বীরগঞ্জ ও খানসামা উপজেলার ভিতর দিয়ে বয়ে যাওয়া আত্রাই নদীর ওপর নির্মিত এ সাঁকো দিয়েই চার জেলার মানুষ পারাপার হচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে কর্তৃপক্ষের কাছে ধর্ণা দিয়েও সেতু নির্মাণ না হওয়ায় কয়েক লাখ মানুষকে চরম দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে। আর এই দুর্ভোগ এড়াতে চাইলে ঘুরতে হবে প্রায় ৩০-৪০ কিলোমিটার রাস্তা।

দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার শতগ্রাম ইউনিয়নের বলদিয়াপাড়া গ্রাম। গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে আত্রাই নদী। বর্তমান সময়ে উত্তরাঞ্চলের অনেক নদীই মরা হিসেবে প্রতীয়মান হলেও খরস্রোতা রূপ ধারণ করে চলেছে আত্রাই। খানসামা ও বীরগঞ্জ উপজেলার মাঝখান দিয়ে বয়ে যাওয়া এই নদীর বেশিরভাগ অংশ শুকিয়ে গেছে। তবে যে স্থান দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে তার উপর দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে ৮০ মিটার দীর্ঘ বাঁশের সাঁকো। যে সাঁকো দিয়ে চলাচল করে জেলার বীরগঞ্জ উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়ন, পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ উপজেলার একাংশ, ঠাকুরগাঁওয়ের সদর উপজেলার একাংশ ও নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলার একাংশের মানুষ। কারণ এই সাঁকো ব্যবহার না করলে তাদের গন্তব্যস্থলে পৌছাঁতে প্রায় ৩০ থেকে ৪০ কিলোমিটার পথ ঘুরে যেতে হবে। অবশ্য ভরা বর্ষায় এইসব মানুষকে নৌকায় পারাপার হতে হয়। রাতের আঁধারে কিংবা যানবাহন পারাপারে সমস্যা হলে বাধ্য হয়ে ওই দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হয়। বাঁশের সাঁকো হলেও টাকা দিয়েই পারাপার হতে হয় যাত্রীদের। কারণ ওই টাকা দিয়েই আবার মেরামত হয় সাঁকোটি।

ঝাড়বাড়ী-জয়গঞ্জ ঘাটের ইজারাদার নুর আলম হোসেন, সাঁকোটি নির্মাণের মূল উদ্যোক্তা ও অর্থদাতা তিনি। তিনি জানান, এই সাঁকো দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার কৃষক, কর্মজীবী নারী-পুরুষ, শিক্ষার্থী ও সাধারণ যাত্রী পারাপার হয়। ঝুঁকি নিয়েই সাইকেল, মোটরসাইকেল, ভ্যান, অটোবাইকের মত যানবাহন চলাচল করে এই সাঁকো দিয়ে। ভরা বর্ষায় নদীর পানি বেড়ে গেলে মানুষজনকে পারাপার হতে হয় নৌকায়। রাতের আঁধারে কিংবা ডিঙ্গি নৌকায় জায়গা না হলে তাদের ঘুরতে হয় দীর্ঘ পথ।

সাঁকোর দুই পাশে বালু মাটির কারণে চলাচলে ভোগান্তি আলোকঝাড়ী গ্রামের বৃদ্ধা মরিয়ম বেগম বলেন, ‘ছোটবেলা থেকে দেখি আসিছু নদীটির ওপর দিয়ে বাঁশের সাঁকো। এলাও ওই রকমই আছে। বিয়া হয়াও শ্বশুরবাড়ী গেনু, ছাওয়ালের মা হনু, আযালাও ব্রিজ হলি না।’ ভবানীগঞ্জের কাঁচামাল ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান বলেন, ‘রবিবার ও বুধবার গড়েয়া হাট করি। তবে বর্ষার সময় রাতে ঘাটে নৌকা পাওয়া কষ্টকর হয়ে যায়। একটি সেতু এই নদীতে হলে এ অঞ্চলের মানুষের ব্যাপক সুবিধা ভোগ করতে পাবে।’ ঝাড়বাড়ী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘আত্রাই নদীতে সেতু না হওয়ায় বর্ষাকালে খেয়া নৌকায় আর শুষ্ক মৌসুমে বাঁশের সাঁকো দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে শতশত শিক্ষার্থীকে চলাচল করতে হয়।’

এলাকায় একটি সেতু নির্মাণের জন্য মানববন্ধন কর্মসূচি, মন্ত্রী-এমপি কিংবা জনপ্রতিনিধিদের কাছে ধর্ণা দেওয়া বা প্রশাসনকে অবহিত করার জন্য দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছে ঝাড়বাড়ী-জয়গঞ্জ খেয়াঘাট সেতু বাস্তবায়ন কমিটি। এ কমিটির আহ্বায়ক শেখ জাকির হোসেন জানান, দিনাজপুর জেলার বীরগঞ্জ উপজেলার শতগ্রাম ইউনিয়নের ঝাড়বাড়ী চৌরাস্তা মোড় থেকে আত্রাই নদী পার হয়ে পূর্ব দক্ষিণে নীলফামারী ১৭ কিলোমিটার আর আত্রাই নদীর পশ্চিমে ঠাকুরগাঁও জেলা সদর ২২ কিলোমিটার। আমরা সংশ্লিষ্ট এলাকার মানুষ মনে করি, এখানে একটি সেতু হলে দিনাজপুর, পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও ও নীলফামারী জেলা শহরের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ সম্ভব হবে। এতে সহজ হয়ে উঠবে শিক্ষা, চিকিৎসা, বাণিজ্যসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রের উন্নয়ন। যোগাযোগ ব্যবস্থার নতুন দ্বার উন্মোচিত হলে আর্থসামাজিক উন্নয়ন সাধিত হবে, কৃষিক্ষেত্রে বিপ্লব সাধিত হবে। অথচ একটি সেতু নির্মাণের অভাবে এলাকার লোকজন পিছিয়ে পড়ছে। কৃষকরা তাদের ফসলের ন্যায্যমূল্য পাচ্ছে না পরিবহন খরচ বেশি হওয়ার কারণে।

স্থানীয় মানুষের যাতায়াতের প্রধান ভরসা এই সাঁকো কমিটির আহ্বায়ক শেখ জাকির হোসেন বলেন, ‘নির্বাচনের আগে সেতু নির্মাণে জনপ্রতিনিধিরা আশার ফুলঝুড়ি দিলেও স্বাধীনতার ৪৭ বছরেও নির্মিত হয়নি সেতুটি। মন্ত্রী, সংসদ সদস্যদের কাছে ধর্ণা দিয়েও কোনও কাজ হচ্ছে না। এর আগে কমিটির পক্ষ থেকে গত বছরের মে মাসে বীরগঞ্জ উপজেলার ঝাড়বাড়ী চৌরাস্তা মোড়ে ঘন্টাব্যাপী মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়। ওই মাসেই সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নুর, পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী ও দিনাজপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য মনোরঞ্জন শীল গোপালকে স্মারকলিপিও দেওয়া হয়। ওই তিনজন মন্ত্রী-এমপির এলাকার মানুষেরাই কষ্ট করে এই বাঁশের সাকো দিয়ে যাওয়া-আসা করে। কিন্তু এরপরও কোনও কাজ হয়নি। দিনাজপুর জেলা প্রশাসককেও এ ব্যাপারে স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে। অবশ্য এর আগে খানসামা উপজেলা প্রকৌশল বিভাগ থেকে স্থানটি পরিদর্শন করা হয়েছিল।

খানসামা উপ-সহকারী প্রকৌশলী তাপস কুমার বাগচী বলেন, ‘ইতিমধ্যেই ওখানে একটি সেতু নির্মাণের জন্য প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছে। ঢাকা থেকে ঊর্ধতন কর্তৃপক্ষ স্থানটি পরিদর্শন করেছেন। এখন কাগজপত্র চালাচালি হচ্ছে। শিগগিরই এখানে সার্ভে হবে এবং অবস্থান নির্ণয়ের পর সেতু নির্মাণের কার্যক্রম শুরু হবে। যেহেতু এখানে যে সেতুটি হবে সেটি অনেক বড়, কমপক্ষে ৫০০ মিটার। তাই প্রক্রিয়া হতেও একটু সময় লাগবে।’ তবে যাবতীয় কার্যক্রম শুরু হয়েছে।

 

 

/এমপি/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
গাজীপুরে ট্রেন দুর্ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন
গাজীপুরে ট্রেন দুর্ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন
‘সরকারকে যারা চাপ দেবে তারা নিজেরাই যথেষ্ট চাপে রয়েছে’
‘সরকারকে যারা চাপ দেবে তারা নিজেরাই যথেষ্ট চাপে রয়েছে’
তাইওয়ান প্রণালীতে আবারও চীনা সামরিক বিমান শনাক্ত
তাইওয়ান প্রণালীতে আবারও চীনা সামরিক বিমান শনাক্ত
দলবল নিয়ে উঠান বৈঠকে ফাঁকা গুলি ছোড়ার অভিযোগ বদির বিরুদ্ধে
দলবল নিয়ে উঠান বৈঠকে ফাঁকা গুলি ছোড়ার অভিযোগ বদির বিরুদ্ধে
সর্বাধিক পঠিত
পদ্মা নদীতে চুবানো নিয়ে যা বললেন ড. ইউনূস
পদ্মা নদীতে চুবানো নিয়ে যা বললেন ড. ইউনূস
কুমিল্লায় বজ্রাঘাতে ৪ জনের মৃত্যু
কুমিল্লায় বজ্রাঘাতে ৪ জনের মৃত্যু
কামরাঙ্গীরচরে নতুন ভবন নির্মাণের অনুমতি দিলো ডিএসসিসি
কামরাঙ্গীরচরে নতুন ভবন নির্মাণের অনুমতি দিলো ডিএসসিসি
মুক্তি পেলেন মামুনুল হক
মুক্তি পেলেন মামুনুল হক
আরও কমলো সোনার দাম
আরও কমলো সোনার দাম