X
শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫
২০ আষাঢ় ১৪৩২
বঙ্গবন্ধু প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি-আসবাব কিনতে জাহাজ নির্মাণ কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি!

নজরুল ইসলাম, বশেমুরবিপ্রবি
১০ অক্টোবর ২০১৯, ২১:১৫আপডেট : ১০ অক্টোবর ২০১৯, ২১:৪২

বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি কেনার ভাউচার গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরবিপ্রবি) বৈজ্ঞানিক ও অফিস যন্ত্রপাতি, আসবাবপত্র কেনার জন্য একটি জাহাজ নির্মাণ কোম্পানির সঙ্গে চুক্তির অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাব দফতরের বক্তব্য অনুযায়ী, চুক্তির পর খুলনা শিপইয়ার্ড নামে ওই কোম্পানিকে নিয়মবহির্ভূতভাবে প্রায় ১৯ কোটি টাকা অগ্রিম দেওয়া হয়েছে। তবে,  কর্তৃপক্ষ বলছে এ ধরনের চুক্তি করা যায়।

এ বিষয়ে অনুসন্ধান করে বশেমুরবিপ্রবির সদ্য পদত্যাগকারী উপাচার্য প্রফেসর ড. খোন্দকার নাসিরউদ্দিনের অনুমোদন করা তিনটি ভাউচারপত্র পাওয়া গেছে। বশেমুরবিপ্রবি অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের অধীনে এসব ভাউচারপত্রে দেখা যায়, বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি কেনা বাবদ গত ২৪ জুলাই খুলনা শিপইয়ার্ডকে ১৮ কোটি ২৫ লাখ টাকা অগ্রিম দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। ৭.৫% ভ্যাট, ৭% আয়কর এবং ১০% জামানত বাদে এ টাকার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৩ কোটি ৭৭ লাখ ৮৭ হাজার ৫০০। একই দিনে ওই প্রতিষ্ঠানকে আসবাবপত্র এবং অফিস যন্ত্রপাতি কেনার জন্য অগ্রিম দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে যথাক্রমে ৭ কোটি ২০ লাখ ও ৮০ লাখ টাকা। ভ্যাট, আয়কর এবং জামানত বাদে তা হয়েছে যথাক্রমে ৫ কোটি ৭ লাখ ৬০ হাজার ও ৬০ লাখ ৪০ হাজার টাকা।

ভাউচারপত্রে সুপারিশকারী হিসেবে স্বাক্ষরকারী প্রকল্প পরিচালক মো. আশিকুজ্জামান ভুঁইয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি অগ্রিম অর্থ দেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেন। জাহাজ তৈরি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কেনো বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি, আসবাবপত্র ও অফিস যন্ত্রপাতি ক্রয়ের চুক্তি করা হয়েছে? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি  বলেন, ‘খুলনা শিপইয়ার্ড সরকারি প্রতিষ্ঠান। তাই আমরা তাদের সঙ্গে চুক্তি করেছি। তারা এগুলো সরবরাহ করতে পারবে বলেই চুক্তি করা হয়েছে।’ পণ্য বুঝে পাওয়ার আগেই এত বিপুল অর্থ  অগ্রিম দেওয়া যায় কিনা? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সরকারি প্রতিষ্ঠানকে যেকোনও পরিমাণ অর্থ অগ্রিম দেওয়া যায়।’

আসবাবপত্র ও অফিস যন্ত্রপাতি কেনার ভাউচার তবে প্রকল্প পরিচালকের বক্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত করেছেন অর্থ ও হিসাব দফতরের উপপরিচালক শেখ সুজাউদ্দিন। তিনি বলেন, ‘এই চুক্তিগুলো করা হয়েছে নিয়মবহির্ভূতভাবে। তিনটি চুক্তিই টেন্ডারবিহীন ডিপিএম প্রক্রিয়ায় করা হয়েছে। যেটি শুধুমাত্র জরুরি পণ্য কেনার ক্ষেত্রে করা যায়। তাছাড়া কাজ শুরু হওয়ার আগে বা কোনও পণ্য পাওয়ার আগেই এভাবে অগ্রিম অর্থ দেওয়া যায় না।’ নিয়মবহির্ভূত হওয়ার পরেও কেনো অর্থ ও হিসাব দফতর বিল পাস করলো? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা আপত্তি জানিয়েছিলাম। কিন্তু প্রকল্প পরিচালক ও উপাচার্যের নির্দেশে আমরা অর্থ প্রদানে বাধ্য হয়েছি।’

এ বিষয়ে কথা বলতে ভাউচারগুলোর অনুমোদনকারী প্রফেসর ড. খোন্দকার নাসিরউদ্দিনকে একাধিকবার ফোন করেও পাওয়া যায়নি।

এদিকে, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন শিক্ষক, কর্মকর্তা ও শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, খোন্দকার নাসিরউদ্দিন ব্যক্তিগত স্বার্থেই এসব নিয়মবহির্ভূত কাজ করেছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, ‘খুলনা শিপইয়ার্ডকে মূলত মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করা হতো। যেহেতু সরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে পণ্য কিনতে হয়, তাই খুলনা শিপইয়ার্ডের সঙ্গে চুক্তি করা হতো। পরে খুলনা শিপইয়ার্ডের মাধ্যমে উপাচার্যের ঘনিষ্ঠ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে এসব পণ্য সরবরাহের দায়িত্ব দেওয়া হতো।’ ইতোপূর্বে বই কেনার জন্যও খুলনা শিপইয়ার্ডকে দুই কোটি টাকা অগ্রিম দিয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয়টি। পরে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে তারা চুক্তি বাতিল করে অর্থ ফেরত চাইতে বাধ্য হয়।

উল্লেখ্য, গত ১১ সেপ্টেম্বর আইন বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী ও ক্যাম্পাস সাংবাদিক ফাতেমা-তুজ-জিনিয়াকে সাময়িক বহিষ্কারের ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। সে সময় স্বেচ্ছাচারিতা, আর্থিক দুর্নীতিসহ বিভিন্ন অভিযোগে উপাচার্যের পদত্যাগ দাবি করে গত ১৯ সেপ্টেম্বর আন্দোলনে নামেন বশেমুরবিপ্রবির শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে গঠিত বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) তদন্ত কমিটি শিক্ষার্থীদের অভিযোগের সত্যতা পায়। তারা উপাচার্যের অপসারণসহ আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করে। এরপর গত ৩০ সেপ্টেম্বর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পদত্যাগপত্র জমা দেন খোন্দকার নাসিরউদ্দিন।

/এমএএ/
সম্পর্কিত
‘বাংলাদেশ ভারতের ওপর নির্ভর করে থাকবে না, নিজের পায়ে দাঁড়াবে’
গোপালগঞ্জে ভ্যান চুরির মীমাংসা করতে বসে উল্টো সংঘর্ষ, আহত অর্ধশতাধিক
গোপালগঞ্জে ‘কিশোর গ্যাংয়ের’ ৮ সদস্য গ্রেফতার
সর্বশেষ খবর
সমস্যা মানেই অসুখ নয়: মেডিক্যালাইজেশন কি বাংলাদেশের নতুন ব্যাধি?
সমস্যা মানেই অসুখ নয়: মেডিক্যালাইজেশন কি বাংলাদেশের নতুন ব্যাধি?
দুই ভাইয়ের বিরোধে মুরাদনগরের সেই ঘটনার ভিডিও ছড়ানো হয়: র‌্যাব
দুই ভাইয়ের বিরোধে মুরাদনগরের সেই ঘটনার ভিডিও ছড়ানো হয়: র‌্যাব
গাজায় যুদ্ধবিরতির নতুন প্রস্তাবের নিশ্চয়তা চায় হামাস
গাজায় যুদ্ধবিরতির নতুন প্রস্তাবের নিশ্চয়তা চায় হামাস
জুলাই আন্দোলনে নিহত ৬ সাংবাদিক: কেমন আছে তাদের পরিবার
জুলাই আন্দোলনে নিহত ৬ সাংবাদিক: কেমন আছে তাদের পরিবার
সর্বাধিক পঠিত
সরকারি চাকরি অধ্যাদেশের দ্বিতীয় সংশোধন উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদন
সরকারি চাকরি অধ্যাদেশের দ্বিতীয় সংশোধন উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদন
এনবিআর নিয়ে ‘কঠোর’ সরকার, আতঙ্কে শীর্ষ কর্মকর্তারা
এনবিআর নিয়ে ‘কঠোর’ সরকার, আতঙ্কে শীর্ষ কর্মকর্তারা
সচিবালয়ে দখলের দ্বন্দ্ব : আন্দোলনের নেতৃত্বে বিভক্তি
সচিবালয়ে দখলের দ্বন্দ্ব : আন্দোলনের নেতৃত্বে বিভক্তি
খেলাপিতে ধসে পড়ছে আর্থিক প্রতিষ্ঠান: বিপদে আমানতকারীরা
খেলাপিতে ধসে পড়ছে আর্থিক প্রতিষ্ঠান: বিপদে আমানতকারীরা
প্রশ্নপত্রে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়ির গল্প, পরীক্ষা বাতিল
প্রশ্নপত্রে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়ির গল্প, পরীক্ষা বাতিল