রাজবাড়ীতে পুলিশের সহায়তায় রবিউল বিশ্বাস (৩২) নামে এক যুবলীগ কর্মীকে পানিতে চুবিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। শনিবার (১৫ আগস্ট) ভোরে স্থানীয় মোনাই বিল থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়। নিহতের বাড়ি জেলার কালুখালী উপজেলার মাঝবাড়ির বেতবাড়িয়া গ্রামে।
নিহত রবিউল বিশ্বাসের পরিবারের অভিযোগ, পুলিশের সহায়তায় এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এর জের ধরে শনিবার কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তাকে কয়েক ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রাখে বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী।
রবিউল মাঝবাড়ী ইউনিয়নের বেতবাড়িয়া গ্রামের আছিরদ্দিন বিশ্বাসের ছেলে।
পরিবার ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এলাকার ইলিয়াস, রাকিব, রফিকসহ স্থানীয় কয়েকজন যুবক এলাকায় মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় স্থানীয়দের সঙ্গে রবিউল বিশ্বাস ও তার পরিবার সদস্যদের বাগবিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে উভয়পক্ষের মধ্যে মারামারি ঘটে এবং মাদকের জন্য অভিযুক্তদের তাড়িয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটে। তাড়িয়ে দেওয়া যুবকদের সঙ্গে ইউপি সদস্য ইউসুফ হোসেনের ঘনিষ্ঠতা রয়েছে। এরপর ইউসুফ মেম্বার স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে সমঝোতা করার উদ্যোগ নেন। গত শুক্রবার বিকেলে বাবুল বিশ্বাসের বাড়িতে সালিশ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেখানে সালিশ হয়নি।
এ ঘটনার পর রাতে কালুখালী থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) ফজলুল হক ফোর্স নিয়ে প্রথমে বাবুল বিশ্বাস নামে এক ব্যক্তিকে তার বাড়ি থেকে আটক করেন। তাকে ইউসুফ মেম্বারের বাড়িতে আটকে রেখে রবিউল বিশ্বাস (৩২) ও তার ভাই আক্তারকে ধরতে বাড়িতে হানা দেন। এসময় পুলিশ দেখে বাড়ি থেকে পালিয়ে যান তারা। পেছন পেছন পুলিশও তাদের তাড়া দেয়। পরে মুনাইয়ের বিলে ঝাঁপ দিলে সেখানে রবিউলকে ধরে ফেলে তাকে পানিতে চুবিয়ে হত্যা করা হয়। আজ ভোররাতে তার মরদেহ পাওয়া যায়।
এদিকে এ ঘটনায় স্থানীয়রা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। তারা পুলিশ কর্মকর্তাদের অবরুদ্ধ করে রেখে লাঞ্ছিত করেন। তারা মরদেহ নিতে বাধা দেন। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেওয়া হয়।
এ বিষয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্য ইউসুফ হোসেন জানান, ‘ওই এলাকা দুর্গম। এটি আমার বাড়ি থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরে। আমি এবার চেয়ারম্যান প্রার্থী। এ কারণে চেয়ারম্যানের লোকজন আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে এসব কথা বলছে।’
নিহতের স্ত্রী সাবানা বেগম অভিযোগ করেন, গতকাল রাত দুইটার দিকে ইউসুফ মেম্বার, রাকিব এসে বলে দরজা খোল। পরে ঘরের দরজা ভেঙে ঘরে স্বামীকে ধরে নিয়ে যায়। এ সময় তাদের সঙ্গে পুলিশও ছিল। এরপর বিলে নিয়ে পানিতে চুবিয়ে হত্যা করা হয়। এই হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই।
নিহত রবিউলের ভাই আক্তার বিশ্বাস বলেন, রাতে পুলিশ আসলে আমরা দুই ভাই পুলিশের ধাওয়া খেয়ে পালিয়ে নৌকাতে যাই। পরে আমাদের পেছনে পুলিশ ও ইউসুফ মেম্বারের লোকজন আরেকটি নৌকা নিয়ে ধাওয়া করে। তাড়াহুড়া করতে গিয়ে আমাদের নৌকার বৈইঠা ভেঙে যায়। পরে আমি এক পাশে আর রবিউল এক পাশে দুজন দুই দিকে ঝাঁপ দেই। পরে আমি পালিয়ে তীরে উঠি। আর ওরা রবিউলকে ধরে ফেলে। আমার ভাই চিৎকার করে যে ভাই আমারে বাঁচা আমারে মেরে ফেললো। পরে আর কোনও সাড়া শব্দ পাইনি। আবার আমার মামাতো ভাই বাবুল ভাইকে রাত ১২টার দিকে আটক করে ইউসুফ মেম্বারের বাড়িতে রেখে আমাদেরকে ধরার জন্য ধাওয়া করে। ঐ ইউসুফ মেম্বারের লোকজন বাবুল ভাইকে মেরে মারাত্মক ভাবে আহত করে। পরে ভোরে আমার ভাই এর লাশ পাওয়া যায়। তখন এলাকার মানুষ পুলিশকে অবরুদ্ধ করে রাখে। পরে বাবুলকে সকাল ১০টার দিকে থানায় নিয়ে যায়।
নিহত রবিউলের চাচা মিরাজ জানান, এলাকায় পূর্ব শত্রুতার জেরে এ ঘটনা ঘটেছে। আমাদের অভিযোগ পুলিশ হত্যাকাণ্ডে সহযোগিতা করেছে। আমরা এ হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই।
মাঝবাড়ী ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ড সদস্য মো. হাবিব জানান, শনিবার সকালে সংবাদ পেয়ে দেখতে এসেছি। ঘটনার সুষ্ঠ তদন্ত দরকার।
কালুখালী থানার অফিসার ইনচার্জ ( ওসি) কামরুল হাসান জানান, আমরা লাশ উদ্ধার করে সুরতহাল রিপোর্ট শেষে ময়নাতদন্তের জন্য রাজবাড়ী সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়েছি। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. সালাউদ্দিন জানান, সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। গ্রামবাসী ভুল বুঝে উত্তেজিত হয়েছে। ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে দোষীদের আইনের আওতায় আনা হবে।