X
সোমবার, ০৫ মে ২০২৫
২২ বৈশাখ ১৪৩২

আদালতে ধর্ষণ ও হত্যার স্বীকারোক্তির পর কিশোরী জীবিত উদ্ধার!

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি
২৪ আগস্ট ২০২০, ১৯:৪০আপডেট : ২৪ আগস্ট ২০২০, ২১:২১

(স্বীকারোক্তি দেওয়া তিন আসামি) বাম দিক থেকে রকিব, খলিল ও আব্দুল্লাহ নারায়ণগঞ্জের দেওভোগ এলাকার ১৫ বছরের এক কিশোরীর অপহরণ মামলায় গ্রেফতার তিন আসামি আদালতে ১৬৪ ধারায় দেওয়া জবানবন্দিতে ওই কিশোরীকে ধর্ষণের পর হত্যা করে লাশ নদীতে ভাসিয়ে দেওয়ার কথা জানায়। তবে নিখোঁজের দেড় মাস পর ওই কিশোরীকে জীবিত উদ্ধার করায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে পুলিশের তদন্ত ও তিন আসামির আদালতে দেওয়া জবানবন্দি নিয়ে।

পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বিষয়টি নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তে জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ডিবি জাহেদ পারভেজ চৌধুরীকে আহবায়ক করে তিন সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটিকে দ্রুত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এদিকে ওই কিশোরী জীবিত উদ্ধার হওয়ায় তার পরিবারে স্বস্তি ফিরলেও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তিন আসামির স্বজনরা। তাদের দাবি, মামলার তদন্ত কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক (এস আই) শামীম আল মামুন সঠিক তদন্ত না করে আসামিদের দিয়ে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। পাশাপাশি রিমান্ডে আসামিদের মারধর না করার কথা বলে ৪৭ হাজার টাকা ঘুষ নিয়েছেন।

তবে জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জানিয়েছেন, এস আই শামীমের মামলা তদন্তের বিষয় ও আসামির পরিবারের থেকে ঘুষ নেওয়াসহ পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তদন্তে এস আই শামীমের বিরুদ্ধে মামলা তদন্তে গাফিলতির অভিযোগ প্রমাণিত হলে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ওই কিশোরীকে অপহরণ মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, শহরের দেওভোগ পাক্কা রোডের বাসিন্দা ১৫ বছরের ওই কিশোরী গত ৪ জুলাই বিকালে বাসা থেকে নিখোঁজ হয়। দীর্ঘদিন খোঁজ করেও না পেয়ে এক মাস পর ৬ আগস্ট নারায়ণগঞ্জ সদর থানায় অপহরণ মামলা করেন তার বাবা। এ ঘটনায় কিশোরীর মোবাইল ফোনের কললিস্টের সূত্র ধরে গত ৭ ও ৮ আগস্ট পুলিশ একই এলাকার রকিব, আবদুল্লাহ ও খলিল নামে তিন জনকে গ্রেফতার করে। এদের মধ্যে খলিল নৌকার মাঝি এবং রকিব অটোরিকশাচালক।

গ্রেফতারের পর তিন আসামি দুই দফা রিমান্ড শেষে কিশোরীকে ধর্ষণের পর হত্যা ও লাশ নদীতে ভাসিয়ে দেওয়ার কথা স্বীকার করে ৯ আগস্ট জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে জবানবন্দি দেয় বলে পুলিশ সে সময় গণমাধ্যমকে জানায়। বর্তমানে আসামিরা জেলহাজতে রয়েছে।

তবে ঘটনার প্রায় দেড় মাস পর রবিবার (২৩ আগস্ট) মোবাইল ফোনে ওই কিশোরীর প্রেমিক ইকবাল হোসেন তার জীবিত থাকার কথা জানায়। ইকবাল ফোন করে জানায়, তারা বন্দরের নবীগঞ্জে একটি বাড়িতে স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে বসবাস করছে। তাদের কাছে টাকা নেই। ঘর ভাড়া দিতে হবে। এজন্য চার হাজার টাকা বিকাশ করার অনুরোধ জানায় সে। এ সময় ওই কিশোরীর সঙ্গে তার মাকে কথা বলিয়ে দেওয়া হয়। ফোন পেয়ে কিশোরীর মা নারায়ণগঞ্জ সদর থানা পুলিশকে বিষয়টি জানান।

পুলিশের পরামর্শে কিছু টাকা বিকাশ করা হয়। পরে বিকাশের দোকান থেকে তাদের জানানো হয় টাকা পাঠানো হয়েছে। এ সময় কিশোরীর মা-বাবা ওই দোকানের কাছে অবস্থান নেয়। পরে পুলিশ তাদের আটক করে।

নারায়ণগঞ্জ সদর থানার ওসি আসাদুজ্জামান জানান, ওই কিশোরীর সঙ্গে আসামি আব্দুল্লাহর প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। আব্দুল্লাহর সঙ্গে দেখা করতেই গত ৪ জুলাই সে নারায়ণগঞ্জ বাস টার্মিনালে আসে। কিন্তু তার সঙ্গে দেখা হওয়ার পর খাবার কেনার কথা বলে আব্দুল্লাহ পালিয়ে যায়। এ সময় পুরনো প্রেমিক ইকবালকে ডেকে এনে তার সঙ্গে পালিয়ে যায় ওই কিশোরী। পরে বন্দরের নবীগঞ্জে মহসিন মিয়ার বাড়ির একটি ঘর ২১০০ টাকা মাসিক ভাড়া নিয়ে বসবাস শুরু করে তারা।

ওসি জানান, উদ্ধার হওয়া কিশোরী সোমবার (২৪ আগস্ট) দুপুরে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ২২ ধারায় সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আফতাবুজ্জামানের আদালতে জবানবন্দি দেন। প্রেমিক ইকবাল হোসেনকে কারাগারে পাঠানো নির্দেশ দেন বিচারক।

এ সময় কিশোরীর মা জানান, আসামিদের বিরুদ্ধে এখন আর তাদের কোনও অভিযোগ নেই। তাদের বিরুদ্ধে করা মামলা প্রত্যাহার করে নেবেন বলেও জানান তিনি।

এদিকে মামলায় গ্রেফতার তিন আসামি আব্দুল্লাহ, নৌকার মাঝি খলিল ও অটোচালক রকিব আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেওয়ার পর ১৫ দিন ধরে কারাগারে রয়েছেন। আদালতে জবানবন্দি দেওয়ার বিষয়টিসহ পুলিশের তদন্তের বিষয়ে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। খোদ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাই তিন আসামির ১৬৪ ধরায় দেওয়া জবানবন্দি নিয়ে বিস্মিত।

এ বিষয়ে আসামি নৌকার মাঝি খলিলের স্ত্রী শারমিন বেগম অভিযোগ করেন, মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এস আই শামীম আল মামুন তিন পরিবারের কাছ থেকে কয়েক দফায় মোট ৪৭ হাজার টাকা ঘুষ নিয়েছেন।

অভিযোগের বিষয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শামীম আল মামুন জানান, ওই মামলায় আব্দুল্লাহ্ ও রকিব দুই আসামিকে দুই দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছিল। রিমান্ড শেষে ওই দুই আসামিসহ তিন জন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন করে স্বীকারোক্তি আদায় ও আসামিদের পরিবারের কাছ থেকে ঘুষ আদায়ের অভিযোগ অস্বীকার করেন তিনি।

এদিকে এস আই শামীমের বিরুদ্ধে আসা অভিযোগের তদন্ত চলছে জানিয়ে নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার মো. জায়েদুল আলম বলেন, তদন্ত কমিটিকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য বলা হয়েছে। কমিটি যদি মামলার তদন্ত কর্মকর্তার কাজে গাফেলতি এবং আসামিদের পরিবারের থেকে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগের প্রমাণ পান তাহলে আইনত ও বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।



/টিটি/এমওএফ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
হ্যাটট্রিক জয়ের পর হার দেখলো বাংলাদেশের যুবারা
হ্যাটট্রিক জয়ের পর হার দেখলো বাংলাদেশের যুবারা
৬৩ বছর আগে নিরুদ্দেশ হয়েছিলেন, অবশেষে মিললো সন্ধান
৬৩ বছর আগে নিরুদ্দেশ হয়েছিলেন, অবশেষে মিললো সন্ধান
‘পার্বত্য চট্টগ্রামের মানুষের শান্তি-সম্প্রীতির জন্য কাজ করছে সরকার’
‘পার্বত্য চট্টগ্রামের মানুষের শান্তি-সম্প্রীতির জন্য কাজ করছে সরকার’
হাসনাত আবদুল্লাহর গাড়িতে হামলার ঘটনায় হত্যাচেষ্টা মামলা
হাসনাত আবদুল্লাহর গাড়িতে হামলার ঘটনায় হত্যাচেষ্টা মামলা
সর্বাধিক পঠিত
এবার আড়াই হাজার ভোট পাওয়া আরিফুরকে মেয়র ঘোষণা করলেন আদালত
এবার আড়াই হাজার ভোট পাওয়া আরিফুরকে মেয়র ঘোষণা করলেন আদালত
ঝকঝকে ত্বক পেতে যেভাবে ব্যবহার করবেন চিয়া সিড
ঝকঝকে ত্বক পেতে যেভাবে ব্যবহার করবেন চিয়া সিড
ইসলামি ব্যাংকগুলো একীভূত করার প্রস্তাব: সমাধান নাকি নতুন সংকট?
ইসলামি ব্যাংকগুলো একীভূত করার প্রস্তাব: সমাধান নাকি নতুন সংকট?
ব্যারিস্টার রাজ্জাকের জানাজা পড়ালেন ছেলে, প্রিয় আইনাঙ্গন থেকে শেষ বিদায়
ব্যারিস্টার রাজ্জাকের জানাজা পড়ালেন ছেলে, প্রিয় আইনাঙ্গন থেকে শেষ বিদায়
বিদেশে পড়াশোনা ও চিকিৎসা খরচ পাঠানো সহজ হলো
বিদেশে পড়াশোনা ও চিকিৎসা খরচ পাঠানো সহজ হলো