X
বুধবার, ০৮ মে ২০২৪
২৪ বৈশাখ ১৪৩১

রংপুরে শীতে কাতর লাখো হতদরিদ্র, এক বৃদ্ধের মৃত্যু

রংপুর প্রতিনিধি
২২ ডিসেম্বর ২০২০, ০১:৫০আপডেট : ২২ ডিসেম্বর ২০২০, ০১:৫৩

রংপুরের একটি গ্রামে খড়কুটো দিয়ে আগুন তাপাচ্ছেন গ্রামের মানুষেরা।





রংপুরে প্রচণ্ড হাঁড় কাঁপানো শৈত্য প্রবাহে এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে। সোমবার ভোরে রংপুর রেলওয়ে স্টেশনের প্লাটফরমে অজ্ঞাতনামা বৃদ্ধ লোকটি প্রচণ্ড শীতে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসেন স্থানীয়রা। সেখানে জরুরি বিভাগের চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
অন্যদিকে প্রচণ্ড শীতে নিউমোনিয়া, কোল্ড ডায়রিয়াসহ নানান রোগ বালাই ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। আক্রান্তদের মধ্যে বেশির ভাগ শিশু ও বৃদ্ধ। রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে দেড় থেকে দু শতাধিক কোল্ড ডায়রিয়া আর নিউ মোনিয়ায় আক্রান্ত শিশু ভর্তি হচ্ছে।
এদিকে হাঁড় কাঁপানো শীতে সবচেয়ে বিপাকে পড়েছে তিস্তা নদীর চরাঞ্চলের হাজার হাজার হতদরিদ্র পরিবার। শীতের কবল থেকে রক্ষা পেতে তারা খড় কুটো জ্বালিয়ে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে। একদিকে শীত অন্যদিকে হিমেল বাতাস শীতের তীব্রতাকে আরও বহুগুণে বাড়িয়ে দিয়েছে। অপরদিকে, ঘন কুয়াশার কারণে দিনের বেলাতেও হেড লাইট জ্বালিয়ে যানবাহন চলাচল করছে। এদিকে সরকারিভাবে শীত বস্ত্র বিতরণ করার কথা বলা হলেও শীতার্ত মানুষরা তা পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ হতদরিদ্রদের।
সরেজমিন তিস্তা নদীবেষ্টিত রংপুরের গঙ্গাচড়া পীরগাছা ও কাউনিয়া উপজেলার বিভিন্ন চরাঞ্চলে গিয়ে দেখা গেছে, শীতবস্ত্রের অভাবে হাজার হাজার মানুষ খড়কুটো জ্বালিয়ে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে। গঙ্গাচড়া উপজেলার জয়রাম ওঝা গ্রামে গিয়ে অভিযোগ পাওয়া গেছে, সেখানে ১০টি পরিবারকে একটি করে কম্বল দেওয়া হয়েছে। এসব পরিবার তুলনামূলকভাবে স্বচ্ছল। চরবাসীর অভিযোগ, হতদরিদ্র দিনমজুর শত শত পরিবার কোনও শীত বস্ত্র পায়নি। জয়রাম ওঝা চরের বাসিন্দা মালিহা বেগম, রহিমা খাতুনসহ অনেকেই জানান, তাদের কোনও শীত বস্ত্রই নেই। একই অভিযোগ পাওয়া গেছে, চর মুটুকপুর গ্রামে। সেখানেও এখন পর্যন্ত কোনও পরিবার শীত বস্ত্র পায়নি। অথচ তিস্তা নদীর চরাঞ্চলের ৪২টি গ্রামে জরুরি ভিত্তিতে শীতবস্ত্র বিতরণ করা প্রয়োজন বলে এলাকাবাসী ও জনপ্রতিনিধিরা জানিয়েছেন।
রংপুর জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন অধিদফতরের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এ পর্যন্ত দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রনালয় থেকে রংপুর জেলায় ৫১ হাজার ৬শ’ কম্বল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়াও প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে শীতবস্ত্র কেনার জন্য নগদ ৪৮ লাখ টাকা বরাদ্দ এসেছে।
এ ব্যাপারে জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আখতার হোসেন জানান, প্রতিটি ইউনিয়নের জন্য ৪শ’৮০ পিস করে কম্বল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে যা ইতোমধ্যে স্ব স্ব ইউনিয়নে চলে গেছে। অপরদিকে, জেলার ৮ উপজেলায় ৬ লাখ টাকা করে নগদ অর্থ পাঠানো হয়েছে। এ টাকা দিয়ে শীতবস্ত্র কিনে শীতার্ত মানুষদের মধ্যে বিতরণ করতে বলা হয়েছে।
তিনি আরও জানান, রংপুর সিটি করপোরেশনের জন্য ৮ হাজার কম্বল রাখা হয়েছিল। এর মধ্যে ৩৩টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১৬টি ওয়ার্ডে কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। কিন্তু, বরাদ্দ করা কম্বলগুলো যারা পেয়েছেন তারা প্রকৃত দুস্থ ও সহায় সম্বলহীন হতদরিদ্র কিনা জানতে চাইলে তিনি কোনও সদুত্তর দিতে পারেননি।
রংপুর সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে ,নগরীতে কমপক্ষে এক লাখ ভাসমান মানুষ বসবাস করে। এ ছাড়াও বিভিন্ন বস্তিতে বাস করে আরও দেড় লাখ মানুষ। যা বরাদ্দ করা হয়েছে তা দিয়ে শীতার্ত মানুষের চাহিদার ৫ ভাগও মেটানো সম্ভব নয়।
প্যানেল মেয়র টিটু জানান, কম্বল ও শিশুদের জন্য শীতবস্ত্র আরও বেশি করে বরাদ্দ দেওয়ার জন্য আমরা জেলা প্রশাসনকে বলেছি। রংপুর নগরীতে ১০ লাখ মানুষের বাস। এদের মধ্যে দুই লাখের বেশি মানুষ একেবারে হতদরিদ্র। এরা দিন আয় করে দিন খায়। করোনার কারণে এদের বেশির ভাগ পরিবারের আয় একেবারে কমে গেছে। অনেকেই কর্মহীন হয়ে আছে, এদের জন্য শীতবস্ত্র খুবই প্রয়োজন। 

/টিএন/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
পিএসজিকে হারিয়ে ফাইনালে ডর্টমুন্ড
চ্যাম্পিয়নস লিগপিএসজিকে হারিয়ে ফাইনালে ডর্টমুন্ড
রাজস্থানকে হারিয়ে প্লে অফের আশা বাঁচিয়ে রাখলো দিল্লি
রাজস্থানকে হারিয়ে প্লে অফের আশা বাঁচিয়ে রাখলো দিল্লি
ঢাকা আসছেন মার্কিন অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ডোনাল্ড লু
ঢাকা আসছেন মার্কিন অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ডোনাল্ড লু
প্রথম ধাপের উপজেলা নির্বাচন আজ
প্রথম ধাপের উপজেলা নির্বাচন আজ
সর্বাধিক পঠিত
ব্যারিস্টার সুমনকে একহাত নিলেন চুন্নু
ব্যারিস্টার সুমনকে একহাত নিলেন চুন্নু
ছুড়ে দেওয়া সব তীর সাদরে গ্রহণ করলাম: ভাবনা
ছুড়ে দেওয়া সব তীর সাদরে গ্রহণ করলাম: ভাবনা
শনিবার স্কুল খোলা রাখার প্রতিবাদে শিক্ষকদের কর্মবিরতি ঘোষণা
শনিবার স্কুল খোলা রাখার প্রতিবাদে শিক্ষকদের কর্মবিরতি ঘোষণা
আসছে ব্যয় কমানোর বাজেট
আসছে ব্যয় কমানোর বাজেট
খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার দ্রুত অবনতি, বিএনপির প্রস্তুতি কী?
খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার দ্রুত অবনতি, বিএনপির প্রস্তুতি কী?