X
রবিবার, ০৫ মে ২০২৪
২১ বৈশাখ ১৪৩১
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়

উপাচার্যের বিরুদ্ধে জাতীয় পতাকা অবমাননাকারীদের পদোন্নতি দেওয়ার অভিযোগ

রংপুর প্রতিনিধি
২৯ মার্চ ২০২১, ১৯:৪৯আপডেট : ২৯ মার্চ ২০২১, ১৯:৪৯

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ অনুযায়ী জাতীয় পতাকা অবমাননাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো তাদের পদোন্নতি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নাজমুল আহসান কলিম উল্লাহর বিরুদ্ধে। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় বঙ্গবন্ধু পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মশিউর রহমান ও শিক্ষক মাহমুদুল হক শিক্ষামন্ত্রীর কাছে উপাচার্যের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয় অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন উচ্চ আদালতের নির্দেশ অমান্যসহ বেশ কিছু সুনির্দিষ্ট অভিযোগ করে বিচার দাবি করেছে।

বিশ্ববিদ্যালয় বঙ্গবন্ধু পরিষদের লিখিত অভিযোগে বলা হয়েছে, ‘আমরা যখন স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী এবং মুজিবশতবর্ষ উদযাপন করছি সে সময়ে গত ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবসে রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নাজমুল আহসান কলিম উল্লাহর নির্দেশে ক্যাম্পাসে অবস্থিত স্বাধীনতা স্মারকে জাতীয় পতাকার অবমাননার ঘটনা ঘটেছে। সুপিরিয়র রেসপনসিবিলিটি অনুযায়ী উপাচার্য পতাকা অবমাননার নির্দেশ দাতা। কারণ মহান বিজয় দিবসের অনুষ্ঠান তারই নির্দেশে হচ্ছিল। ওই দিন উপাচার্যের পক্ষের কিছু শিক্ষক কর্মকর্তা একটি বিকৃত জাতীয় পতাকা তৈরি করে স্বাধীনতা স্মারকে দাঁড়িয়ে প্রদর্শন করেছেন। শুধু তাই নয়, বিকৃত জাতীয় পতাকা প্রদর্শনের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করে জাতীয় পতাকার অবমাননা করেছেন। এ ঘটনায় ওই দুই শিক্ষক রংপুর নগরীর তাজহাট থানায় উপাচার্যকে প্রধান আসামি করে পতাকা অবমাননার মামলা দায়ের করেন। কিন্তু উপাচার্য তদন্তকারী পুলিশ কর্মকর্তার উপর প্রভাব বিস্তার করে তার নাম তদন্ত প্রতিবেদনে বাদ দিতে বাধ্য করেন। জেলা প্রশাসন ও পুলিশি তদন্তে ১৯ জন শিক্ষক-কর্মকর্তাকেই অভিযুক্ত করা হয়। পরে ১৯ আসামি আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন লাভ করে। মামলাটি এখন চলমান। এ সংক্রান্ত আরও একটি মামলা পিবিআই তদন্ত করছে। কিন্তু মামলা চলমান থাকা অবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭৫তম সিন্ডিকেট পতাকা অবমাননাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে তাদের সতর্ক করে। এবং দেশ ও জাতির কাছে ক্ষমা চাইতে বলে। অথচ এ ধরনের পতাকা অবমাননার অপরাধ আদালতে মামলা চলমান থাকা অবস্থায় ক্ষমা করার এখতিয়ার সিন্ডিকেটের নেই।’

লিখিত অভিযোগে আরও বলা হয়, ‘উপাচার্য জামিনে থাকা আসামিদের বরখাস্ত না করে বরং পুরস্কার হিসেবে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক তাবিউর রহমান প্রধান, ম্যানেজম্যান্ট স্টাডিজ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সদরুল ইসলাম এবং কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইজ্ঞিনিয়ারিং বিভাগের প্রদীপ কুমারকে সহযোগী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি দিয়েছেন। অন্যদিকে জাতীয় পতাকা অবমাননার এজাহার ভুক্ত আরও একটি মামলার আসামি উপাচার্যের পিএস আমিনুর রহমানকে অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার হিসেবে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। অথচ বিভিন্ন মামলার জামিনে মুক্ত অন্তত ১০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে উপাচার্যের নেতৃত্বাধীন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।’ সার্বিক বিষয় বিবেচনা করে জাতীয় পতাকা অবমাননাকারী আসামিদের পদোন্নতি বাতিল করে পদাবনায়ন করে তাদের শাস্তি নিশ্চিত করার আবেদন জানিয়েছেন তারা।

এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় বঙ্গবন্ধু পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মশিউর রহমান বলেন, ‘উপাচার্যকলিম উল্লাহ বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থাকার রেকর্ড সৃষ্টি করে নিয়োগবাণিজ্য, দুর্নীতি ও লুটপাট করছেন। বিশ্ববিদ্যালয়টিকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছেন। তার অপকর্মের সহযোগীদের বাঁচাতে তিনি আদালতে মামলা বিচারাধীন থাকা অবস্থায় পদোন্নতি দিয়ে পুরস্কৃত করেছেন। এটা আইনের দৃষ্টিতে চরম অন্যায়। সেজন্য আমরা শিক্ষামন্ত্রীর কাছে লিখিত অভিযোগ প্রদান করেছি।’

অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয় অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন গত ২২ মার্চ শিক্ষামন্ত্রীর কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছে। অভিযোগে তারা বলেছেন, যারা মহান বিজয় দিবসে বিকৃত জাতীয় পতাকা প্রদর্শন করে পতাকার অবমাননা করেছে, তাদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা চলমান থাকা অবস্থায় উপাচার্য তাদের রক্ষার জন্য দেশ ও জাতির কাছে ক্ষমা চাইতে বলেছেন। অথচ পতাকার অবমাননার অপরাধ ক্ষমা করার এখতিয়ার জাতীয় সংসদে পাস করা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী সিন্ডিকেটের নেই।

তারা আরও অভিযোগ করে, পতাকা অবমাননার মামলা চলমান থাকা অবস্থায় আসামিদের বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আইনানুগ কোনও ব্যবস্থা না নিয়ে অন্যান্য মামলায় জামিনে থাকা আসামিদের মতো বরখাস্ত না করে বরং পুরস্কার স্বরূপ পদোন্নতি দেওয়া হলো। অথচ বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়ের করা হয়রানিমূলক মামলায় অন্তত ১০ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে বিগত কয়েক বছর ধরে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করে রাখা হয়েছে। অথচ এসব কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পক্ষে হাইকোর্ট ও আপিল বিভাগ রায় দেওয়ার পরেও তা বাস্তবায়িত হচ্ছে না।’ এক বিশ্ববিদ্যালয়ে দু ধরনের আইন চলছে অভিযোগ করে বলা হয়, ১৯ শিক্ষক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা থাকার পরেও তাদের বরখাস্ত না করে পুরস্কৃত করা হয়। আর যাদের সাময়িক বরখাস্ত করা হলো তাদের পুনর্বহাল করার জন্য উচ্চ আদালতের আদেশ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে না।

এ ব্যাপারে অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ফিরোজুল ইসলাম বলেন, ‘সার্বিক বিষয় আমরা শিক্ষামন্ত্রীর কাছে লিখিতভাবে জানিয়ে প্রতিকার দাবি করেছি।’

এ বিষয়ে জানতে উপাচার্য অধ্যাপক নাজমুল আহসান কলিম উল্লাহর মোবাইল ফোনে কয়েকবার ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি।

/এমএএ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
জিরোনার মাঠে বার্সেলোনার নাটকীয় হারে চ্যাম্পিয়ন রিয়াল
জিরোনার মাঠে বার্সেলোনার নাটকীয় হারে চ্যাম্পিয়ন রিয়াল
‘ফাইভ স্টার’ ম্যানসিটি, চার গোল হাল্যান্ডের
‘ফাইভ স্টার’ ম্যানসিটি, চার গোল হাল্যান্ডের
ঢাকায় পুনর্মিলন সেরে ক্যাঙ্গারুর দেশে...
ঢাকায় পুনর্মিলন সেরে ক্যাঙ্গারুর দেশে...
নিষ্পত্তির অপেক্ষায় হেফাজতের ২০৩ মামলা
নিষ্পত্তির অপেক্ষায় হেফাজতের ২০৩ মামলা
সর্বাধিক পঠিত
জাল দলিলে ৫০ কোটি টাকা ব্যাংক ঋণ!
জাল দলিলে ৫০ কোটি টাকা ব্যাংক ঋণ!
রবিবার থেকে স্কুল-কলেজ খোলা, শনিবারও চলবে ক্লাস
রবিবার থেকে স্কুল-কলেজ খোলা, শনিবারও চলবে ক্লাস
লিথুয়ানিয়ার ড্রোন হামলা ব্যর্থ হয়েছে: বেলারুশ
লিথুয়ানিয়ার ড্রোন হামলা ব্যর্থ হয়েছে: বেলারুশ
স্বর্ণের ভরিতে বাড়লো ১ হাজার টাকার বেশি
স্বর্ণের ভরিতে বাড়লো ১ হাজার টাকার বেশি
এডিবি কর্মকর্তা গোবিন্দ বরের বিরুদ্ধে বিশিষ্টজনদের হয়রানির অভিযোগ
এডিবি কর্মকর্তা গোবিন্দ বরের বিরুদ্ধে বিশিষ্টজনদের হয়রানির অভিযোগ