X
শনিবার, ০৭ জুন ২০২৫
২৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ছেঁড়া দ্বীপে যাচ্ছেন পর্যটকরা

আবদুর রহমান, টেকনাফ
১২ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১৭:৫৩আপডেট : ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১৯:০৯

সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে সেন্ট মার্টিনের ছেঁড়া দ্বীপে যাচ্ছেন পর্যটকরা। লাইফ বোট ও স্পিডবোটে প্রতিদিন দুই শতাধিক পর্যটক যাচ্ছেন ছেঁড়া দ্বীপে। এতে হুমকিতে পড়ছে সামুদ্রিক প্রবাল ও জীববৈচিত্র্য। বর্জ্য ও আবর্জনায় দূষিত হচ্ছে দ্বীপ।

২০২০ সালের ১২ অক্টোবর সেন্ট মার্টিনের ছেঁড়া দ্বীপ অংশে পর্যটকদের যাওয়া নিষিদ্ধ করা হয়। একই সঙ্গে পরিবেশ-প্রতিবেশ রক্ষায় সেন্ট মার্টিনে ছয় ধরনের কার্যক্রম বন্ধ করার নির্দেশ দেয় পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা এক পরিপত্রে এসব নির্দেশনা দেওয়া হলেও তা মানছেন না পর্যটকরা। এসব নির্দেশনা বাস্তবায়নে কোনও তদারকি নেই স্থানীয় প্রশাসনের।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সেন্ট মার্টিনের ছেঁড়া দ্বীপ অংশে এখনও কিছু সামুদ্রিক প্রবাল জীবিত আছে। এসব প্রবাল সংরক্ষণে পর্যটক যাতায়াতে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছিল।

মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুয়ায়ী, সেন্ট মার্টিনের সৈকতে কোনও ধরনের যান্ত্রিক যানবাহন যেমন মোটরসাইকেল ও ইঞ্জিনচালিত গাড়ি চালানো যাবে না। রাতে সেখানে আলো বা আগুন জ্বালানো যাবে না। রাতের বেলা কোলাহল সৃষ্টি বা উচ্চস্বরে গানবাজনার আয়োজন করা যাবে না। টেকনাফ থেকে সেন্ট মার্টিনে যাতায়াতকারী জাহাজে অনুমোদিত ধারণ সংখ্যার অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহন করা যাবে না। অননুমোদিত এবং অনুমোদনের অতিরিক্ত নির্মাণসামগ্রীর সেন্টমার্টিনে যাতায়াত বন্ধ করা হবে। পরিবেশদূষণকারী দ্রব্য যেমন পলিথিন ও প্লাস্টিকের বোতল ইত্যাদির ব্যবহার সীমিত করা হবে। কিন্তু এসবের কিছুই বাস্তবায়ন করা হয়নি। এমনকি পর্যটকদের ভ্রমণ ঠেকাতে কোনও ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি বলে জানান পরিবেশবাদীরা।

সেন্ট মার্টিনের জেটির মাঝামাঝি স্থানে একটি সাইনবোর্ড ঝুলানো রয়েছে

শুক্রবার (১১ ফেব্রুয়ারি) সকাল ৮টায় সেন্ট মার্টিনের জেটিতে দেখা গেছে, কয়েকজন পর্যটক দাঁড়িয়ে আছেন। তাদের দেখে ডাক দেন এক ব্যক্তি। পর্যটকদের ওই ব্যক্তি বলেন, ‘যারা ছেঁড়া দ্বীপে যেতে চান, এই বোটে ওঠেন। নিরাপদে পৌঁছে দেবো।’  

এ সময় নিজেকে সেন্ট মার্টিন জেটির ইজারাদার বলে দাবি করেন ওই ব্যক্তি। নাম জানতে চাইলে বলেন মো. মোতালেব হোসেন। প্রতিদিন কতজন ছেঁড়া দ্বীপে যাচ্ছেন তা লিখে রাখেন মোতালেব।

এ সময় তিনি প্রতিনিধির কাছে জানতে চান, ‘মামা ছেঁড়া দ্বীপে যাবেন, তাহলে এই বোটে ওঠেন। ছেঁড়া দ্বীপে অনেক প্রবাল দেখতে পারবেন। অনেক কিছু দেখার আছে, যা সেন্ট মার্টিনে দেখা যায় না। তার কাছে জানতে চাই, কেন এখানে প্রবাল দেখা যায় না? জবাবে বলেন, ‘ছেঁড়া দ্বীপ হচ্ছে নির্জন জায়গা। সেখানে মানুষের হইচই নেই, তাই প্রবাল দেখা যায়। এখানে মানুষের বিচরণ বেশি, এজন্য প্রবাল দেখা যায় না।’

সরেজমিনে দেখা যায়, সেন্ট মার্টিনের জেটির মাঝামাঝি স্থানে একটি সাইনবোর্ড ঝুলানো রয়েছে। সেখানে ‘লাইফ বোট, স্পিডবোট মালিক সমবায় সমিতির’ নাম লেখা। পাশাপাশি ছেঁড়া দ্বীপ, প্রবাল দ্বীপে যাওয়ার কথা উল্লেখ আছে সাইনবোর্ডে। জেটির দক্ষিণ পাশে রয়েছে ছেঁড়া দ্বীপে যেতে আগ্রহী পর্যটকদের জন্য টিকিট কাউন্টার।

জেটির দক্ষিণ পাশে রয়েছে ছেঁড়া দ্বীপে যেতে আগ্রহী পর্যটকদের জন্য টিকিট কাউন্টার

টিকিট কাউন্টারের প্রধান মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘ছেঁড়া দ্বীপে যেতে কোনও নিষেধাজ্ঞা নেই। দ্বীপে আসা পর্যটকদের সহায়তা করছি আমরা। প্রতিদিন ২০০-২৫০ পর্যটক ছেঁড়া দ্বীপে যান। জনপ্রতি ২৫০-৩০০ টাকা নিয়ে পর্যটকদের বোটে করে ছেঁড়া দ্বীপে পৌঁছে দিই, আবার নিয়ে আসি। রিজার্ভ হলে ২৫০০ টাকা নিই।’ এরপর ২৫ জন পর্যটক নিয়ে ছেঁড়া দ্বীপের উদ্দেশে রওনা হয় একটি বোট।

ছেঁড়া দ্বীপ ঘুরে এসে স্পিডবোট থেকে নেমে মো. আলীম ও তার স্ত্রী জানান, ‘ছেঁড়া দ্বীপ অনেক সুন্দর জায়গা। ছোট-বড় অনেক পাথর, প্রবাল ও বিভিন্ন ধরনের জীববৈচিত্র্য রয়েছে। আমরা অনেক আনন্দ করেছি। তবে ছেঁড়া দ্বীপে পলিথিন-বোতলসহ নানা ধরনের বর্জ্য ফেলছেন পর্যটকরা। ছেঁড়া দ্বীপে যেতে সরকারি নিষেধাজ্ঞা আছে, আমাদের জানা ছিল না। এখানে সাইনবোর্ড ও ছেঁড়া দ্বীপের টিকিট বিক্রি করতে দেখে আমরা মনে করেছি, যেতে কোনও বাধা নেই।’

প্রতিদিন ২০০-২৫০ পর্যটক ছেঁড়া দ্বীপে যান, জনপ্রতি বোট ভাড়া ২৫০-৩০০ টাকা

ছেঁড়া দ্বীপে ঘুরতে যাওয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রেদোয়ান আলী বলেন, ‘সাইনবোর্ডে নিঝুম দ্বীপ লেখা দেখে ৩০০ টাকায় টিকিট কেটে ঘুরতে গিয়েছিলাম। কিন্তু আমাদের ছেঁড়া দ্বীপে নামিয়ে দেন বোটচালক। এটি পর্যটকদের সঙ্গে এক ধরনের প্রতারণা। নিঝুম দ্বীপের কথা বলে ছেঁড়া দ্বীপে নামিয়ে দেওয়া হয়। তবে নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি জানা ছিল না। নিষেধাজ্ঞার কোনও সাইনবোর্ড চোখে পড়েনি। তাহলে আমরা নিষেধাজ্ঞার কথা জানবো কীভাবে?। প্রশাসনের লোকজনকে এখানে দেখা যায়নি।’

পরিবেশবাদীরা বলছেন, পর্যটকদের অবাধ চলাফেরা ও স্থাপনা নির্মাণসহ বিভিন্ন কারণে হুমকির মুখে রয়েছে ছেঁড়া দ্বীপ। সেই সঙ্গে জীববৈচিত্র্য ও প্রবাল ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ফলে শুধু ছেঁড়া দ্বীপ নয়, সেন্ট মার্টিনে পর্যটকদের যাতায়াত নিষিদ্ধ করা উচিত।

কক্সবাজারের পরিবেশ বিষয়ক সংস্থা ইয়ুথ এনভায়রনমেন্ট সোসাইটির (ইয়েস) প্রধান নির্বাহী এম ইব্রাহিম খলিল মামুন বলেন, ‘ছেঁড়া দ্বীপে পর্যটক ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা থাকলে প্রকৃতপক্ষে তা কেউ মানছেন না। ফলে ছেঁড়া দ্বীপের সামুদ্রিক প্রবালগুলো হুমকির মুখে রয়েছে। নানা উদ্যোগের কথা শুনেছি, কাজের কাজ কিছুই হয়নি। দ্বীপরক্ষায় আগে অবৈধ স্থাপনাগুলো ভাঙা দরকার। পাশাপাশি সরকারের উচিত, সেন্ট মার্টিনে পর্যটক ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়ন ও তদারকি করা। তা না হলে দ্বীপটি আগামী ২০ বছরের মধ্যে ধ্বংস হয়ে যাবে।’

ছেঁড়া দ্বীপে যেতে সরকারি নিষেধাজ্ঞা আছে, এরপরও যাচ্ছেন পর্যটকরা

নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়নের বিষয়ে জানতে চাইলে কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (উন্নয়ন ও মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা) মো. নাসিম আহমেদ বলেন, ‘প্রবাল রক্ষায় ছেঁড়া দ্বীপে পর্যটকদের যেতে দেওয়া হবে না। যারা সরকারি নিষেধাজ্ঞা মানছেন না, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এছাড়া সেন্ট মার্টিন নিয়ে সরকারের একটি মহাপরিকল্পনা রয়েছে। সেটি বাস্তবায়নের কাজ চলছে।’

টেকনাফের ইউএনও পারভেজ চৌধুরী বলেন, ‘সেন্ট মার্টিন নিয়ে কিছু পদক্ষেপ বাস্তবায়নের কাজ শুরু হয়েছে। জীববৈচিত্র্য সুরক্ষা, ইকোট্যুরিজম উন্নয়ন এবং স্থাপনা নির্মাণ বন্ধসহ দ্বীপরক্ষায় কাজ করে যাচ্ছি আমরা। ছেঁড়া দ্বীপে পর্যটকদের যাতায়াত আজ-কালের মধ্যে বন্ধ করে দেওয়া হবে।’

/এএম/
সম্পর্কিত
সাদাপাথরে পর্যটক প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা
বৈরী আবহাওয়ায় পর্যটকশূন্য কুয়াকাটা
সৈকতে গোসলে নেমে পর্যটকের মৃত্যু
সর্বশেষ খবর
চামড়া কিনে বিপাকে মৌসুমি ব্যবসায়ীরা, পুঁজি হারানোর শঙ্কা
চামড়া কিনে বিপাকে মৌসুমি ব্যবসায়ীরা, পুঁজি হারানোর শঙ্কা
স্বাদে একঘেয়েমি চলে আসলে এভাবে খেতে পারেন মাংস
স্বাদে একঘেয়েমি চলে আসলে এভাবে খেতে পারেন মাংস
ডিএসসিসির পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম পরিদর্শন করেছেন ইশরাক
ডিএসসিসির পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম পরিদর্শন করেছেন ইশরাক
মুসলিম বিদ্বেষের বহিঃপ্রকাশ, মার্কিন ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার নিন্দা ইরানের
মুসলিম বিদ্বেষের বহিঃপ্রকাশ, মার্কিন ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার নিন্দা ইরানের
সর্বাধিক পঠিত
ঈদ উপলক্ষে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সস্ত্রীক সাক্ষাৎ করলেন সেনাপ্রধান
ঈদ উপলক্ষে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সস্ত্রীক সাক্ষাৎ করলেন সেনাপ্রধান
প্রধান উপদেষ্টার শব্দ চয়ন রাজনৈতিক ভব্যতার সীমা অতিক্রম করেছে: বিএনপি
ডিসেম্বরেই নির্বাচনের দাবিতে অনড়প্রধান উপদেষ্টার শব্দ চয়ন রাজনৈতিক ভব্যতার সীমা অতিক্রম করেছে: বিএনপি
‘এপ্রিলে জাতীয় নির্বাচন’, প্রধান উপদেষ্টার ঘোষণায় যা বললো ইইউ
‘এপ্রিলে জাতীয় নির্বাচন’, প্রধান উপদেষ্টার ঘোষণায় যা বললো ইইউ
ইউএন চার্টার মেনে জাপানের সঙ্গে বাস্তবায়ন হবে প্রতিরক্ষা চুক্তি
ইউএন চার্টার মেনে জাপানের সঙ্গে বাস্তবায়ন হবে প্রতিরক্ষা চুক্তি
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সস্ত্রীক নৌবাহিনী প্রধানের সাক্ষাৎ
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সস্ত্রীক নৌবাহিনী প্রধানের সাক্ষাৎ