চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম-সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সম্পাদক দিয়াজ ইরফান চৌধুরী হত্যা মামলা চূড়ান্ত প্রতিবেদন আদালতের প্রসিকিউশন শাখায় জমা দেওয়া হয়েছে। মামলার ছয় বছর পর তদন্ত সংস্থা পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) এ প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। প্রতিবেদনে দিয়াজ আত্মহত্যা করেছেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) চট্টগ্রাম জেলা কোর্ট (প্রসিকিউশন) শাখার পরিদর্শক জাকির হোসাইন মাহমুদের কাছে প্রতিবেদন জমা দেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডি চট্টগ্রাম জেলার সহকারী পুলিশ সুপার আবদুস সালাম মিয়া।
জেলা কোর্ট (প্রসিকিউশন) শাখার পরিদর্শক জাকির হোসাইন মাহমুদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বৃহস্পতিবার বিকালে তদন্ত কর্মকর্তা দিয়াজ হত্যা মামলায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন। দিয়াজকে হত্যা করা হয়নি, তিনি আত্মহত্যা করেছেন উল্লেখ করে এ প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে। রবিবার তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে জমা দেওয়া হবে।’
দিয়াজের বড় বোন অ্যাডভোকেট জুবাঈদা ছরওয়ার চৌধুরী নিপা বলেন, ‘তদন্ত সংস্থা সিআইডি দিয়াজ হত্যা মামলায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে– এ খবর আমরা বাদীপক্ষ জানার আগে আসামিরা ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছে। তাদের স্ট্যাটাস দেখে আমি আদালতে খবর নিয়ে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়ার বিষয়টি জেনেছি। প্রতিবেদন দেখে আমরা এ প্রতিবেদনের ওপর নারাজি দেবো। অন্য কোনও সংস্থাকে দিয়ে এ মামলা তদন্তে আদালতে আবেদন জানাবো। চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়ার আগে পুলিশ আমাদের সঙ্গে কোনও কথা বলেনি।’
তিনি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন নির্মাণকাজের দরপত্র নিয়ে কোন্দলের সূত্র ধরে পরিকল্পিতভাবে দিয়াজকে হত্যা করা হয়েছে।’
২০১৬ সালের ২০ নভেম্বর রাতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই নম্বর গেট এলাকায় ভাড়া বাসার নিজ কক্ষ থেকে দিয়াজের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে হাটহাজারী থানা পুলিশ। পরদিন চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজের ফরেনসিক বিভাগে প্রথম ময়নাতদন্ত হয়। ওই বছরের ২৩ নভেম্বর চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে দেওয়া প্রথম ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে ঘটনাটিকে ‘আত্মহত্যা’ বলে উল্লেখ করা হয়। দিয়াজের পরিবার ওই ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করে।
এ ঘটনায় দিয়াজের মা জাহেদা আমিন চৌধুরী ২০১৬ সালের ২৪ নভেম্বর ১০ জনকে আসামি করে আদালতে হত্যা মামলা করেন। এতে আসামি করা হয়– চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন সহকারী প্রক্টর আনোয়ার হোসেন, চবি ছাত্রলীগের তৎকালীন সভাপতি আলমগীর টিপু, ছাত্রলীগ নেতা আবুল মনসুর জামশেদ, তাদের অনুসারী রাশেদুল আলম জিশান, আবু তোরাব পরশ, মনসুর আলম, আবদুল মালেক, মিজানুর রহমান, আরিফুল হক অপু ও মোহাম্মদ আরমানকে।
পরে দিয়াজের মা জাহেদা আমিনের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত দিয়াজের লাশ কবর থেকে তুলে পুনরায় ময়নাতদন্তের আদেশ দেন। ২০১৬ সালের ১০ ডিসেম্বর লাশ তুলে দ্বিতীয় দফা ময়নাতদন্ত করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের ফরেনসিক বিভাগ। ২০১৭ সালের ৩০ জুলাই দ্বিতীয় দফা ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘দিয়াজের শরীরে আঘাতজনিত জখমের মাধ্যমে হত্যার আলামত আছে।’