X
শুক্রবার, ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
২৩ মাঘ ১৪৩১

‘এমন পরিবেশ পাবো, মিলেমিশে থাকবো, স্বপ্নেও ভাবিনি’

আরিফুল ইসলাম রিগান, কুড়িগ্রাম
০৮ আগস্ট ২০২৩, ০০:০১আপডেট : ০৮ আগস্ট ২০২৩, ০০:০১

‘জীবনে কল্পনাও করি নাই, আমরা সুখ-শান্তি পাবো। বাচ্চাকাচ্চা নিয়ে একটা সুন্দর পরিবেশে থাকবো। নিজেদের বাড়ি হবে, সবাই মিলেমিশে থাকবো কখনও ভাবিনি। এমন দারুণ একটা পরিবেশ আমাদের দেওয়ার জন্য সরকারকে ধন্যবাদ জানাই।’

কথাগুলো বলছিলেন কুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলার হরিজন নারী মিনি বালা। সরকারি খাস জমিতে পরিবার নিয়ে অনিশ্চিত জীবনযাপন করা এই নারী এখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া উপহারের ঘরে থাকার সুযোগ পাচ্ছেন। সমাজে বিভাজনের শিকার এই জনগোষ্ঠীকে সরকারিভাবে জমি কিনে ঘর করে দিয়েছে শেখ হাসিনার সরকার। জায়গা আর ঘর পেয়ে এখন স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছেন এই নারী।

১ কোটি ২৮ লাখ টাকা ব্যয়ে প্রায় ১ একর জমি কিনে এই পল্লী গড়ে তোলা হয়েছে এটি জেলায় সরকারিভাবে গড়ে ওঠা প্রথম হরিজন পল্লী। চিলমারী উপজেলার থানাহাট ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের ফকিরপাড়া এলাকায় ১ কোটি ২৮ লাখ টাকা ব্যয়ে প্রায় ১ একর জমি কিনে এই পল্লী গড়ে তোলা হয়েছে। এতে ৩০টি হরিজন পরিবারকে নিজেদের নামে জমি দিয়ে ঘর করে দেওয়া হয়। এসব ঘর নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ৮৫ লাখ ৩৫ হাজার টাকা।

ঘর পেয়ে উচ্ছ্বসিত প্রতিটি পরিবারের সদস্যরা। নিজেদের ‘কল্পনাকে হার মানিয়ে’ পাওয়া রঙিন টিনের পাকা ঘরে তারা এখন রঙিন আগামী দেখছেন। বসবাসের স্থায়ী ঠিকানা পেয়ে তারা যেন অস্তিত্ব খুঁজে পেয়েছেন। এমনটাই জানা গেল আরেক রমনী সুমির অভিব্যক্তিতে।

সুমি বলেন, ‘আমাদের চলাফেরা কেউ মেনে নিতো না। আমাদের ঘৃণা করতো। সরকার আমাদের ঘর দিয়েছে, বাড়ি দিয়েছে। অনেক সুযোগ-সুবিধা দিয়েছে। আমরা সন্তানদের নিয়া ভালোভাবে থাকার সুযোগ পাচ্ছি।’

সুমি ও মিনি বালার মতো ৩০টি হরিজন পরিবারে এখন আনন্দের বন্যা বইছে। পাকা ঘর, বিদ্যুৎ, পানি আর চলাচলের প্রশস্ত রাস্তা পেয়ে তারা যেন প্রথমবারের মতো মানবিক জীবনযাপনের পরিবেশ পেয়েছেন। শুধু তাই নয়, বাড়ির প্রশস্ত আঙিনায় তাদের সন্তানরা মুক্ত বাতাসে খেলাধুলা করার সুযোগ পাচ্ছে। অথচ কয়েক মাস আগে তারা খাস জমিতে ঝুপড়ি ঘরে ছিলেন। বসবাসের অনুপযোগী সেসব ঘরে ছিল না কোনও মানবিক কিংবা স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ। ছিল না কোনও আলোকিত ভবিষ্যত। অনেকে আবার সরকারি কোনও ভবন কিংবা বাজারের কোনও দোকান ঘরের বারান্দায় দিনানিপাত করতেন। হরিজন সম্প্রদায়ের এই পরিবারগুলোর মানবিক অধিকারের কথা বিবেচনা করে তাদের জন্য এই উদ্যোগ নিয়েছিল উপজেলা প্রশাসন।

জায়গা আর ঘর পেয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছেন তারা হরিজনদের জন্য উপহারের ঘর নির্মাণের পরিকল্পনা ও প্রস্তাবনা পাঠান সদ্য বিদায়ী চিলমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মাহবুবুর রহমান। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক হিসেবে পদোন্নতি নিয়ে লালমনিরহাট জেলা প্রশাসনে বদলি হয়েছেন। এই কর্মকর্তা বলেন, ‘সাংবাদিক ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে উপজেলার হরিজন সম্প্রদায়ের পরিবারগুলোর দুর্দশার কথা জানতে পারি। এরপর ওই পরিবারগুলোর থাকার পরিবেশ দেখতে তাদের বাড়িঘর পরিদর্শন করি। যে পরিবেশে তারা বসবাস করতেন, তাকে মানবিক বলা চলে না। বিষয়টি আমার মনে দাগ কাটে। কিন্তু তাদেরকে ঘর করে দেওয়ার মতো খাস জমি পাওয়া যাচ্ছিল না। পরে জমি কিনে আশ্রয়ণের ঘর করে দেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রস্তাবনা পাঠাই। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়া কুড়িগ্রাম সফরকালে প্রস্তাবটি আবার উত্থাপন করা হলে, সেটি অনুমোদনের ব্যবস্থা করেন। এরপর জমি কিনে ৩০ পরিবারের জন্য ঘর নির্মাণের উদ্যোগ নিই। এখন প্রধানমন্ত্রী ওই পরিবারগুলোকে ঘর বুঝিয়ে দেবেন।’

সদ্য সাবেক এই ইউএনও বলেন, ‘আমাদের সংবিধান সবার জন্য আশ্রয়ের নিশ্চয়তা দিয়েছে। হরিজনদের জন্য জমি কিনে তাদেরই নামে জায়গা ও ঘর করে দেওয়ার ঘটনা এটাই প্রথম। এটা প্রধানমন্ত্রীর আন্তরিকতা ও সদিচ্ছার ফল। আমরা সেটা বাস্তবায়ন করেছি মাত্র। দেশের প্রতিটি মানুষ মৌলিক অধিকার নিয়ে জীবনযাপন করবে, এটাই সরকারের লক্ষ্য।’

সরকারের এই উদ্যোগকে একটি অনন্য উদাহরণ হিসেবে দেখছেন হরিজন ও রবিদাস সম্প্রদায়ের অধিকার নিয়ে কাজ করা কুড়িগ্রামের জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক সফি খান। তিনি বলেন, ‘এই সম্প্রদায়ের ৯৯ ভাগ পরিবার ভূমিহীন। এরা যে পরিবেশে বসবাস করে, তা অমানবিক। অথচ তাদের একটি বৈষম্যহীন সমাজে নাগরিক অধিকার নিয়ে বসবাসের অধিকার রয়েছে। সরকার যে উদ্যোগটি নিয়েছে, তা দেশে অনন্য উদাহরণ সৃষ্টি করলো। এখন এই পরিবারের লোকদের সমাজের মূল ধারায় নিয়ে আসার পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে।’

তারা পেয়েছেন স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ বলেন, ‘চিলমারীর ৩০টি হরিজন পরিবারের স্থায়ী আশ্রয়ণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী আগামী ৯ আগস্ট আনুষ্ঠানিকভাবে এসব ঘর হস্তান্তর করবেন। এরপর এসব পরিবারকে সমাজের মূল স্রোতে আনার ব্যবস্থা করা হবে। তাদের সন্তানদের শিক্ষার জন্য শিক্ষকের ব্যবস্থা করার পাশাপাশি নারীর জন্য কর্মমুখী প্রশিক্ষণ এবং পুরুষের জন্য ঋণ সুবিধার ব্যবস্থা করা হবে।’

‘আমরা জেলার সব উপজেলায় বসবাসকারী হরিজন, রবিদাস সম্প্রদায় ও ট্রান্সজেন্ডার মানুষের আবাসনের উদ্যোগ নিচ্ছি। তারা যেন সমাজের মূল স্রোতের সাথে মিলেমিশে দেশের অগ্রযাত্রায় অংশ নিতে পারে, সে ব্যবস্থাও করা হবে।’ যোগ করেন জেলা প্রশাসক।

প্রসঙ্গত, আগামী ৯ আগস্ট আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের অধীন চতুর্থ পর্যায়ে (দ্বিতীয় ধাপ) দেশব্যাপী উপহারের ঘর হস্তান্তর করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এদিন কুড়িগ্রামের ৯ উপজেলায় ৫০৫টি পরিবার প্রধানমন্ত্রীর এই উপহার পাবেন। এর মধ্যে চিলমারীর হরিজন সম্প্রদায়ের ৩০ পরিবার ও রাজারহাটের ১৯ ঢুলি পরিবার রয়েছে।

/এএম/
সম্পর্কিত
বিক্রি হচ্ছে উপহারের ঘর
আশ্রয়ণের ঘর জীবন বদলে দিয়েছে: প্রধানমন্ত্রী
কক্সবাজারকে গৃহহীন-ভূমিহীনমুক্ত ঘোষণা করলেন প্রধানমন্ত্রী
সর্বশেষ খবর
প্রেস অ্যাক্রেডিটেশন নীতিমালা সংস্কার কমিটি থেকে পদত্যাগের কথা জানালেন স্যাম জাহান
প্রেস অ্যাক্রেডিটেশন নীতিমালা সংস্কার কমিটি থেকে পদত্যাগের কথা জানালেন স্যাম জাহান
গভীর রাতে ৩২ নম্বরে জিয়াফত আয়োজন
গভীর রাতে ৩২ নম্বরে জিয়াফত আয়োজন
ন্যাশনাল ব্রেকফাস্টে অংশ নিলেন বিএনপির প্রতিনিধিদল
ন্যাশনাল ব্রেকফাস্টে অংশ নিলেন বিএনপির প্রতিনিধিদল
মধ্যরাতে শেখ সেলিমের বাড়িতে ভাঙচুর-আগুন
মধ্যরাতে শেখ সেলিমের বাড়িতে ভাঙচুর-আগুন
সর্বাধিক পঠিত
‘আমি স্তম্ভিত’
‘আমি স্তম্ভিত’
‘খুলনার আর কোথাও ভাঙচুর হলে এর দায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্রআন্দোলন নেবে না’
‘খুলনার আর কোথাও ভাঙচুর হলে এর দায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্রআন্দোলন নেবে না’
আওয়ামী লীগ নেতার বাড়িতে হামলার সময় এলাকাবাসীর ধাওয়া, আহত ৩
আওয়ামী লীগ নেতার বাড়িতে হামলার সময় এলাকাবাসীর ধাওয়া, আহত ৩
নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় এক নেতা গ্রেফতার
নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় এক নেতা গ্রেফতার
ধরুন, শিশুটি আপনার সন্তান
ধরুন, শিশুটি আপনার সন্তান