X
মঙ্গলবার, ০১ জুলাই ২০২৫
১৭ আষাঢ় ১৪৩২

মুর্শিদপুর দরবারে আবারও হামলা-লুটপাটের ঘটনায় উত্তেজনা

শেরপুর প্রতিনিধি
৩০ নভেম্বর ২০২৪, ০২:১৬আপডেট : ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ০২:২৩

শেরপুরের খাজা বদরুদ্দোজা হায়দার ওরফে দোজা পীরের দরবার (মুর্শিদপুর পীরের দরবার) শরিফে হামলা, লুটপাট, অগ্নিসংযোগের ঘটনায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। বৃহস্পতিবার (২৮ নভেম্বর) রাতে ফেসবুকে পীরের মুরিদদের দরবারের দিকে লংমার্চের ঘোষণা এবং পীরবিরোধীদের জমায়েত হওয়ার আহ্বানকে কেন্দ্র করে শুক্রবার এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।

এ নিয়ে ওই এলাকায় সতর্ক অবস্থানে আছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এ ছাড়া স্থানীয় কুসুমহাটি বাজার এবং জামতলা এলাকার দোকানপাট বন্ধ রয়েছে। স্থানীয় লছমনপুর এবং আশপাশের এলাকাবাসীর মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা লক্ষ করা গেছে।

প্রায় ২০০ একর জায়গা নিয়ে গড়ে ওঠা এই দরবার দরবার শরিফে হামলার পর ভক্তরা চলে গেলে লুটপাট চালায় দুর্বৃত্তরা। বৃহস্পতিবার দিনের বেলায় গরু-ছাগল, ভেড়া, দুম্বা, ইট, টিন, টাকা, স্বর্ণালঙ্কার, হাঁড়ি-পাতিল, ডেচকি, পুকুরের মাছসহ বিভিন্ন ধরনের মালামাল লুট করা হয়।

দরবার থেকে লুটে নেওয়া মাল বোঝাই ১৩টি গাড়িতে আগুন দেন ভক্তরা  বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর থেকে দরবারের শত শত পুরনো গাছ কাটা হয় এবং ভবনের ইট, টিন, লোহার অ্যাঙ্গেলসহ বিভিন্ন ধরনের মাল গাড়ি ভর্তি করে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। বৃহস্পতিবার সারারাত এবং শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত চলে এমন লুটপাট। আগুন দেওয়া হয় বিভিন্ন স্থাপনায়। সে সময় দরবারে ভেতরের মসজিদে লুটপাট, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। কেটে ফেলা হয় বিভিন্ন প্রজাতির গাছপালা।

শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে জামালপুর-ব্রহ্মপুত্র সেতুসংলগ্ন এলাকায় পীর-ভক্তদের একটি মিছিল দরবারের দিকে আসার চেষ্টা করলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্যরা বাধা দেন। কিন্তু দুপুর ১টার দিকে বিভিন্ন এলাকা থেকে লাঠিসোঁটা নিয়ে মিছিল করে প্রায় দুই হাজারের মতো পীর-ভক্ত দরবারের দখল নেন।

সেই সময় দরবারের ভেতরে ও বাইরে কাটা গাছ এবং মাল বোঝাই করা অবস্থায় কমপক্ষে ১৩টি যানবাহনে আগুন দেন তারা। আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে হাজির হয়ে পীর-ভক্তদের নিবৃত্ত করেন। দরবারে লুটপাটের অভিযোগে তিন জনকে আটক করা হয়। পীর-ভক্তরা প্রায় তিন ঘণ্টা দরবারে অবস্থান করে ক্ষয়ক্ষতি ও লুটপাটের ভয়াবহ চিত্র দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন এবং ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিচার দাবি করেন।

এদিকে, শেরপুর শহরের অষ্টমীতলা এলাকায় পীরবিরোধীরা জড়ো হতে চেষ্টা করেন। এক পর্যায়ে তারা শেরপুর-জামালপুর সড়কের শেরীব্রিজ এলাকায় কাঠের গুঁড়ি ফেলে সড়ক অবরোধের চেষ্টা করেন। এ জন্য কিছু সময় সেখানে যান চলাচল ব্যাহত হয়। পরে সেনাবাহিনী, বিজিবি ও পুলিশ হাজির হয়ে বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দিলে পরিস্থিতি শান্ত হয়।

পুলিশ সুপার মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘বর্তমানে লছমনপুর এলাকার পরিবেশ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন ও টহল জোরদার করা হয়েছে।’

জানা গেছে, ৫ আগস্টের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর থেকেই শেরপুর সদরের লছমনপুর এলাকায় খাজা মোহাম্মদ বদরুদ্দোজা হায়দার ওরফে দোজা পীরের মুর্শিদপুর দরবার শরিফের কার্যক্রম বন্ধের হুমকি দিচ্ছিলেন স্থানীয় মাদ্রাসার শিক্ষক-ছাত্র ও তাদের অনুসারীরা। এ নিয়ে বেশ কয়েকবার উভয় পক্ষের মাঝে দ্বন্দ্ব-সংঘাতের ঘটনা ঘটে।

২৬ নভেম্বর ভোরে ওই দরবারে হামলার ঘটনা ঘটে। এ সময় হামলাকারী এবং দরবারের মুরিদদের মধ্যে সংঘর্ষে কমপক্ষে ১৩ জন আহত হন। ২৭ নভেম্বর সকালে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পীরবিরোধী পক্ষের আহত হাফেজ উদ্দিনের মৃত্যু হয়। এ মৃত্যুকে কেন্দ্র করে স্থানীয় মাদ্রাসার শিক্ষক-ছাত্র ও তাদের অনুসারীদের নেতৃত্বে ২৮ নভেম্বর পীরের দরবারে হামলা চালানো হয়।

/এমএএ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
চট্টগ্রামে ইউপিডিএফ সদস্য গ্রেফতার
চট্টগ্রামে ইউপিডিএফ সদস্য গ্রেফতার
জুলাই গণহত্যা: শেখ হাসিনাসহ তিন জনের পক্ষে শুনানি ৭ জুলাই
জুলাই গণহত্যা: শেখ হাসিনাসহ তিন জনের পক্ষে শুনানি ৭ জুলাই
যশোরে নির্মাণাধীন ভবনের বারান্দা ভেঙে দুই প্রকৌশলীসহ ৩ জনের মৃত্যু
যশোরে নির্মাণাধীন ভবনের বারান্দা ভেঙে দুই প্রকৌশলীসহ ৩ জনের মৃত্যু
গণতান্ত্রিক ছাত্র জোট থেকে বেরিয়ে গেলো ছাত্র ফেডারেশন
গণতান্ত্রিক ছাত্র জোট থেকে বেরিয়ে গেলো ছাত্র ফেডারেশন
সর্বাধিক পঠিত
সঞ্চয়পত্রে কমলো মুনাফার হার, কার্যকর ১ জুলাই থেকে
সঞ্চয়পত্রে কমলো মুনাফার হার, কার্যকর ১ জুলাই থেকে
তিন বিমানবন্দরে ১৬ বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম বন্ধ হচ্ছে
তিন বিমানবন্দরে ১৬ বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম বন্ধ হচ্ছে
ইস্টার্ন ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও পরিবারের ব্যাংক হিসাব জব্দ
ইস্টার্ন ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও পরিবারের ব্যাংক হিসাব জব্দ
রূপপুর প্রকল্পের ১৮ প্রকৌশলী অপসারণ: হাইকোর্টের রুল
রূপপুর প্রকল্পের ১৮ প্রকৌশলী অপসারণ: হাইকোর্টের রুল
অন্তর্বর্তী সরকার ও প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীরা মুখোমুখি
প্রশাসনে থামছে না আন্দোলনঅন্তর্বর্তী সরকার ও প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীরা মুখোমুখি