একজন সিনিয়র স্টাফ নার্সে ও স্থানীয় জামায়াতকর্মীর স্ত্রীর অবসরোত্তর ছুটি (পিআরএল) শুরু হওয়ার পরও বেতন-ভাতার ফাইল আটকে রেখে হয়রানির অভিযোগ উঠেছে কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলা হিসাবরক্ষণ অফিসার সাইদুজ্জামানের বিরুদ্ধে। এ নিয়ে জামায়াতের স্থানীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে ওই হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তার বাগবিতণ্ডার ঘটনা ঘটেছে।
মঙ্গলবার (১৭ জুন) উপজেলা হিসাবরক্ষণ অফিসে এই ঘটনা ঘটে। বিভিন্ন গণমাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তার ওপর জামায়াতের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে হামলার অভিযোগ তুলে খবর প্রকাশ হলেও উভয়পক্ষ এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে।
পিআরএলে যাওয়া সিনিয়র স্টাফ নার্সের নাম আতোয়ারা খাতুন। তিনি উপজেলার কলেজপাড়া এলাকার জামাতকর্মী কাদের মোল্লার স্ত্রী। মঙ্গলবার কাদের মোল্লা স্থানীয় জামায়াত নেতাকর্মীদের নিয়ে স্ত্রীর ফাইল ছাড়িয়ে নিতে হিসাবরক্ষণ অফিসে যান। সেখানেই হিসাবরক্ষণ অফিসারের সঙ্গে তাদের বাগবিতণ্ডার ঘটনা ঘটে।
ঘটনার খোঁজ নিতে গিয়ে জানা গেছে, রৌমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত সিনিয়র স্টাফ নার্স আতোয়ারা খাতুন ২০২৪ সালের ৩ নভেম্বর পিআরএলে জন্য আবেদন করেন। উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ একই বছর ১৭ নভেম্বর উপজেলা হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তার কার্যালয়ে ফাইল পাঠায়। এরপর থেকে শুরু হয় হয়রানি। দিন ঘুরে সপ্তাহ, সপ্তাহ ঘুরে মাসে এভাবে গত আট মাসেও ফাইল অগ্রগামী করেননি উপজেলা হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা সাইদুজ্জামান। চলতি বছরের ১ মার্চ নার্স আতোয়ারা খাতুনের পিআরএল শুরু হলেও তিনি গত তিন মাস ধরে কোনও বেতন-ভাতা পাচ্ছেন না। নানা অজুহাত তুলে তার ফাইল আটকে রেখেছে হিসাবরক্ষণ অফিস।
এ বিষয়ে নার্স আতোয়ারা খাতুন বলেন, ‘প্রায় আট মাস ধরে হয়রানির শিকার হচ্ছি। আমার স্বামীসহ বারবার হিসাবরক্ষণ অফিসে গিয়েও কোনও কাজ হচ্ছে না। বেতন-ভাতাসহ সব আর্থিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়ে আছি। অর্থের অভাবে কষ্টে জীবন যাপন করছি। কিন্তু হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা নানা বাহানায় হয়রানি করছেন। অথচ আমার কাগজপত্রে কোনও ঘাটতি নেই।’
জামায়াতকর্মী আব্দুল কাদের মোল্লা বলেন, ‘গত নভেম্বরে হিসাবরক্ষণ অফিসে ফাইল যাওয়ার পর আমি স্ত্রীসহ হিসাবরক্ষণ অফিসারের সঙ্গে দেখা করি। তিনি এক সপ্তাহ পর যেতে বলেন। পরে গেলে আবারও ঘোরান। এভাবে তিনি মাসের পর মাস ঘোরাতে থাকেন। এক সময় আমার স্ত্রীর ডিপ্লোমা কোর্স নিয়ে প্রশ্ন তুলে ইনক্রিমেন্ট কর্তন করতে চান। আমি বাংলাদেশ নার্সিং ও মিডওয়াইফারি কাউন্সিল থেকে স্ত্রীর ডিপ্লোমা সম্পন্নের প্রত্যয়ন নিয়ে এসে জমা দিই। কিন্তু তারপরও তিনি বেতন-ভাতার ফাইল আটকে রেখেছেন।’
কাদের মোল্লা আরও বলেন, ‘গতকাল স্থানীয় জামায়াত নেতাকর্মীসহ প্রথমে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার কাছে গিয়ে বিষয়টি জানাই। কোনও সমস্যা না থাকায় তিনি হিসাবরক্ষণ অফিসারকে ফাইলটি ছেড়ে দিতে বলেন। পরে আমরা হিসাবরক্ষণ অফিসারের কাছে গেলে তিনি আগের মতোই টালবাহানা শুরু করেন। তিনি উত্তেজিত হয়ে বলেন, “রেজিস্ট্রারের প্রত্যয়ন কেন, খোদ ডিজি প্রত্যয়ন দিলেও আমি ফাইল ছাড়বো না।” তিনি উত্তেজিত হওয়ায় আমাদের সঙ্গে থাকা আনোয়ার নামে জামায়াতকর্মীও উত্তেজিত হন। আমরা সবাই তখনই তাদের থামিয়ে দিই এবং বিষয়টি সেখানেই মিটিয়ে ফেলি। সেখানে কোনও হাতাহাতির ঘটনা ঘটেনি। যারা এমন বলছেন তারা অতিউৎসাহী। নিরপেক্ষ তদন্ত করলে সত্য জানা যাবে।’ পরে হিসাবরক্ষণ অফিসার জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহে ফাইল পাস করে দেওয়ার আশ্বাস দেন বলে দাবি করেন কাদের মোল্লা।
জামায়াত নেতা আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘উপজেলা হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা আমার সাথি ভাইয়ের স্ত্রীর ন্যায্য বেতন-ভাতা আটকে রেখেছেন। মাসের পর মাস হয়রানি করছেন। আমরাই ভিক্টিম। বিষয়টা নিয়ে কথা বলার সময় তর্কাতর্কি হয়েছে। একটু কড়া কথা হয়েছে। আবার সঙ্গে সঙ্গে মিটেও গেছে। কিন্তু কোনও হাতাহাতির ঘটনা ঘটেনি। বিষয়টি আপনাদের মিডিয়া ছাড় করে ফেলাইছে।’
উপজেলা হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা সাইদুজ্জামান বলেন, ‘এমন কিছু ঘটনা ঘটেনি। বিষয়টা হলো যে, পরিস্থিতি কিছুটা অস্বাভাবিক ছিল। আমি চাই না, এটি আপনাদের নিউজে আসুক। এটা একটা অফিসের আরেকটা অফিসে হতে পারে। তবে আমি কালক্ষেপণ করে দিচ্ছি না, বিষয়টা এটা না। তারা এসেছিলেন জানার জন্য, শোনার জন্য এবং নেওয়ার জন্য। তারা জুনের পরে আসবেন।’ গায়ে হাত তোলার বিষয়টি নাকচ করেন এই কর্মকর্তা।
জামায়াতে ইসলামীর উপজেলা আমির হায়দার আলী বলেন, ‘জামায়াতকর্মীর স্ত্রীর অবসরকালীন বেতন-ভাতার ফাইল নিয়ে হয়রানি করার বিষয়ে বাগবিতণ্ডা হয়েছিল। একটু উত্তেজনাকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল। তাৎক্ষণিকভাবে মীমাংসা করে দেওয়া হয়েছে।’