X
সোমবার, ০৬ মে ২০২৪
২৩ বৈশাখ ১৪৩১

কেন বাড়ছে ডায়রিয়ার প্রকোপ

সুমন সিকদার, বরগুনা
২১ এপ্রিল ২০২১, ০৯:০০আপডেট : ২১ এপ্রিল ২০২১, ০৯:০০

বরগুনায় আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে ডায়রিয়ার প্রকোপ। জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত তিন মাসে প্রায় দুই হাজার মানুষ ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। রোগী সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসকরা। গবেষণায় দেখা গেলো জীবাণুযুক্ত পানির কারণেই এমনটা হচ্ছে।

গবেষকরা বলছেন, শুষ্ক মৌসুম শুরু হওয়ায় পানিবাহিত জীবাণুর সংক্রমণেই ডায়রিয়া বেড়েছে। ইতোমধ্যেই একজন মারাও গেছেন।

বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের তথ্যমতে, জানুয়ারির প্রথম দিকে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগী সদর হাসপাতালে ভর্তি হতে শুরু করে। শুধু বরগুনা সদর হাসপাতালে জানুয়ারিতে ১৭১ জন চিকিৎসা নিয়েছেন। ফেব্রুয়ারিতে রোগী ছিল ২০৩ জন। মার্চে হঠাৎ বেড়ে ৯০৩ জনে দাঁড়ায়। এপ্রিলেও এ ধারা অব্যাহত আছে। এ মাসের ১২ তারিখ পর্যন্ত ৫৪০ জন ব্যক্তি ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন।

১৭ এপ্রিলেই ৩৮ জন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হন। এ ছাড়াও জেলার ছয়টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অন্তত এক হাজার রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। ভর্তি আছেন দুই শতাধিক।

শনিবার (১৮ এপ্রিল) বেতাগী উপজেলার নুরুল ইসলাম (৭০) নামের এক ব্যক্তি বেতাগী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।

জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসরা বলছেন, পানিবাহিত দূষণের ফলেই প্রকোপ বেড়েছে। এ ছাড়ার পরিচ্ছন্নতার অভাব ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশও এর জন্য দায়ী।

বরগুনা সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক সোহরাব উদ্দীন বলেন, উপকূলীয় বরগুনা জেলার অধিকাংশ মানুষ নদ-নদী ও পুকুরের পানি সরাসরি পান করে অভ্যস্ত। দৈনন্দিন কাজেও ওই পানি ব্যবহার করে। আক্রান্তদের অধিকাংশই বরগুনা জেলার নদী তীরবর্তী এলাকার বাসিন্দা। তাদের বেশিরভাগই শিশু ও বৃদ্ধ। তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও কম।

পরিস্থিতি দেখে আন্তর্জাতিক উদারময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশ (আইসিডিডিআরবি)-এর সাত সদস্যের একটি গবেষণাদল মার্চের শুরুর দিকে বরগুনায় আসেন। বরগুনা সদরের বুড়িরচর, ঢলুয়া, গৌরীচন্না ও ফুলঝুড়িসহ পৌরশহরের বেশ কিছু এলাকায় গবেষণা পরিচালনা করেন তারা। এসময় আক্রান্তদের পরীক্ষা করে তাদের শরীরে কলেরার জীবাণুও পান গবেষকরা।

আক্রান্তদের এলাকায় খোঁজ নিয়ে তারা দেখেছেন বরগুনার বিভিন্ন নদী ও খালের সঙ্গে সরাসরি শৌচাগারের পাইপলাইন রয়েছে। আবার সেই খাল ও নদী থেকেই মোটর দিয়ে পানি তুলে সেটা থালা-বাসন ধোয়া, ঘর মোছা, গোসল, রান্নাবান্নাসহ সকল কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে।

গবেষণাদলটি একাধিক আক্রান্ত ব্যক্তির এলাকা পরিদর্শন করে দেখেন, একটি পুকুরের পানি ব্যবহার করছে ২০-২৫টি পরিবার। শুষ্ক মৌসুমে পুকুরের পানি শুকিয়ে যায়। এতে জীবাণুর ঘনত্ব বাড়ে। ওই পানি দৈনন্দিন কাজে না ফুটিয়েই ব্যবহার করতে দেখা গেছে বাসিন্দাদের। এ ছাড়াও উপকূলের নদ-নদীতে লবণাক্ততা বেড়ে যাওয়ায় নদীর তীরের মানুষরা বেশি আক্রান্ত হচ্ছে বলেও গবেষণায় উঠে আসে।

গবেষক দলের প্রধান সংক্রমক ব্যাধি গবেষক ডাক্তার প্রিন্স বলেন, আমরা বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত কয়েকজন রোগীর পেটে কলেরার জীবাণু পেয়েছি। ওই রোগীর বাড়িতে গিয়ে জানতে পারি, ওই পরিবারসহ এলাকার বাসিন্দারা গভীর নলকূপের পানি পান করলেও দৈনন্দিন কাজে সরাসরি পুকুরের পানি ব্যবহার করছে। বিশেষ করে, এ অঞ্চলে রাতে খাওয়ার পর ভাতে যে পানি দিয়ে রাখা হয় তা পুকুর থেকে নেওয়া। ওই পান্তাই তারা সকালে খাচ্ছেন। পানি বিশুদ্ধকরণ না করে সরাসরি ব্যবহার করার ফলে জীবাণু পাকস্থলীতে গিয়ে সংক্রমণ ঘটায়।

এ ছাড়াও আমরা আক্রান্তদের আরও কিছু এলাকা পরিদর্শন করি। এসব এলাকাতেও দেখা গেল আক্রান্ত হওয়ার মূল কারণ পানিবাহিত জীবাণু।

তিনি বলেন, পৌরশহরের উকিলপট্টি এলাকায় কয়েকটি বাড়িতে দেখা গেলো, সরাসরি খালের সঙ্গে শৌচাগারের পাইপ জুড়ে দেওয়া হয়েছে।

ডা. প্রিন্স আরও বলেন, জোয়ারের পানিতে লবণাক্ততার কারণে উপকূলীয় এলাকায় ডায়রিয়ার প্রবণতা বাড়তে পারে। এই লবণ পানি পেটে গেলেই হজমশক্তিতে সমস্যা দেখা দেয়।

বরগুনার সিভিল সার্জন ডা. মারিয়া হাসান বলেন, আইসিডিডিআরবির গবেষণালব্ধ পরামর্শ আমরা পেয়েছি। এ ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা নিয়েছি। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল দফতরের সঙ্গেও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছি। আশা করি সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ডায়রিয়া নিয়ন্ত্রণে আনতে পারব।

/এফএ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
নারায়ণগঞ্জে চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের ওপর হামলার অভিযোগ, আহত ৩
নারায়ণগঞ্জে চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের ওপর হামলার অভিযোগ, আহত ৩
সুন্দরবনে আগুন ছড়ানো রুখতে দেওয়া হয়েছে বেরিকেট
সুন্দরবনে আগুন ছড়ানো রুখতে দেওয়া হয়েছে বেরিকেট
এই ৬ বীজ নিয়মিত খেলে সুস্থ থাকতে পারবেন দীর্ঘদিন
এই ৬ বীজ নিয়মিত খেলে সুস্থ থাকতে পারবেন দীর্ঘদিন
লখনউকে বড় হারের লজ্জা দিয়ে শীর্ষে কলকাতা
লখনউকে বড় হারের লজ্জা দিয়ে শীর্ষে কলকাতা
সর্বাধিক পঠিত
‘টর্চার সেলে’ নিজ হাতে অপারেশনের নামে পৈশাচিক আনন্দ পেতো মিল্টন, জানালেন হারুন
‘টর্চার সেলে’ নিজ হাতে অপারেশনের নামে পৈশাচিক আনন্দ পেতো মিল্টন, জানালেন হারুন
চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা নিয়ে যা বললেন জনপ্রশাসনমন্ত্রী
চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা নিয়ে যা বললেন জনপ্রশাসনমন্ত্রী
নিজেদের তৈরি ভেহিকেল পেরুকে উপহার দিলো সেনাবাহিনী
নিজেদের তৈরি ভেহিকেল পেরুকে উপহার দিলো সেনাবাহিনী
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন বৃষ্টি হবে
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন বৃষ্টি হবে
সব জেনেও পুলিশকে কিছু জানাননি মিল্টনের স্ত্রী
জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ডিবি হারুনসব জেনেও পুলিশকে কিছু জানাননি মিল্টনের স্ত্রী