X
শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫
২০ আষাঢ় ১৪৩২

২১ জনের আক্রমণে শত্রুমুক্ত হয় বরগুনা

বরগুনা প্রতিনিধি
০৩ ডিসেম্বর ২০২১, ১৩:০৩আপডেট : ০৩ ডিসেম্বর ২০২১, ১৩:০৩

আজ ৩ ডিসেম্বর। বরগুনার ইতিহাসে স্মরণীয় এক দিন। উত্তাল একাত্তরের এই দিনে পাকিস্তানি হানাদারদের হাত থেকে মুক্ত হয় বরগুনাবাসী। এর আগে নানা কৌশলে বরগুনাকে মুক্ত করার উদ্যোগ নেন মুক্তিযোদ্ধারা। শেষ পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন ছাত্র আ. সত্তার খানের নেতৃত্বে একদল মুক্তিযোদ্ধা বরগুনাকে মুক্ত করেন।

১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ভাষণের পর বরগুনার মুক্তিকামী তরুণরা রাইফেল, বন্দুক ও বাঁশের লাঠি নিয়ে জেলার বিভিন স্থানে সামরিক প্রশিক্ষণ নেওয়া শুরু করেন। মুক্তিযোদ্ধাদের প্রস্তুতির মধ্যেই ২৬ এপ্রিল পাকবাহিনী পটুয়াখালী জেলা দখল করে। এ যুদ্ধে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ ও ক্ষয়-ক্ষতি হয়। এ অবস্থায় বরগুনার মুক্তিযোদ্ধারা এলাকা ছেড়ে চলে যান। ২৬ মে পাকিস্তানি সেনা ক্যাপ্টেন শাফায়াতের নেতৃত্বে সেনা সদস্যরা বরগুনা আসে এবং ২৯ ও ৩০ মে বরগুনা জেলখানায় ৭৬ জনকে গুলি করে হত্যা করে। তাদেরকে জেলা কারাগারের দক্ষিণ পাশে গণকবর দেওয়া হয়। 

বরগুনার তরুণ মুক্তিযোদ্ধারা আধুনিক প্রশিক্ষণ গ্রহণের জন্য এ সময় প্রতিবেশী দেশ ভারতে ছিল। প্রশিক্ষণ শেষে ফিরে এসে তারা বুকাবুনিয়ার সাব-সেকটরের অধীনে যুদ্ধে অংশ নেয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন ছাত্র আবদুস সত্তার খানের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধাদের ২১ সদস্যের একটি দল বরগুনাকে মুক্ত করার পরিকল্পনা করেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী ২ ডিসেম্বর দুপুরের দিকে বেতাগীর বদনীখালী নামক স্থানে অবস্থান নেন তারা। এ সময় মুক্তিবাহিনীর এক সদস্যকে রেকি করার জন্য বরগুনা পাঠানো হয়। তার সংকেত পেয়ে মুক্তিযোদ্ধারা নৌকাযোগে বিষখালী নদী দিয়ে বরগুনা রওনা হন। রাত তিনটার দিকে তারা বরগুনার খাকদোন নদীর তীরে পোটকাখালী নামক স্থানে অবস্থান নেন।

বরগুনাকে মুক্ত করার কৌশল হিসেবে মুক্তিযোদ্ধারা বরগুনা কারাগার, ওয়াপদা কলোনি, জেলা স্কুল, সদর থানা, ওয়ারল্যাস স্টেশন, এসডিও’র বাসাসহ বরগুনা শহরকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করেন। এরপর তারা হেঁটে বরগুনা শহরে এসে যে যার অবস্থান নেন। ফজরের আজানকে অভিযান শুরুর সংকেত হিসেবে ব্যবহার করেন। আজান শুরুর সঙ্গে সঙ্গে ছয়টি স্থান থেকে একযোগে গুলি চালিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করা হয়। রাজাকার এবং পাকিস্তানপন্থী পুলিশরা তখন নিরাপত্তার জন্য জেলখানায় আশ্রয় নেন। কোনও প্রতি উত্তর না পেয়ে মুক্তিযোদ্ধারা দ্বিতীয় দফা ফায়ার করে জেলখানার দিকে অগ্রসর হন। জেলখানায় অবস্থানরত পুলিশ ও রাজাকারদের আত্মসমর্পণ করিয়ে তারা যান তৎকালীন এসডিও আনোয়ার হোসেনের বাসায়। এরপর ট্রেজারির সামনে আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় সঙ্গীত গেয়ে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়।

বীর মুক্তিযোদ্ধা সুখ রঞ্জন শীল বলেন, ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ স্বাধীন হলেও বরগুনা মুক্ত হয় ৩ ডিসেম্বর। বীর মুক্তিযোদ্ধা  আবদুস সত্তারের নেতৃত্বে ২১ জনের অকুতোভয় দলের নেতৃত্বে বরগুনা মুক্ত হয়। সেই বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অনেকেই এখন আর নেই। তবে বরগুনার ইতিহাস যতদিন থাকবে, ততদিন মানুষ বীর মুক্তিযোদ্ধা সত্তার ও তার সহযোগীদের কথা মনে রাখবে।

সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাড. মো. শাহজাহান বলেন, বুকাবুনিয়া সাব সেক্টরের সেকেন্ড ইন কমান্ড ছিলেন আলমগীর শাহ। তার পরামর্শে মূলত বরগুনা মুক্ত করার পরিকল্পনা হয়। এরপর  সত্তার ভাইয়ের নেতৃত্বে বরগুনার মুক্ত করার পরিকল্পনা হয়। ৩ ডিসেম্বর ভোরে তিন দিক থেকে আক্রমণ করেছি, তখনই ওরা পিছপা হতে বাধ্য হয়।

তিনি আরও বলেন, রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ না হলেও তৎকালীন সময়ে পাকিস্তানি সেনা সদস্যদের নির্মম নির্যাতনের স্বীকার হয়েছিল বরগুনাবাসী। মা বোনদের সম্ভ্রমহানি করা হয়। লুটপাট অগ্নিসংযোগ করা নিরীহ মুক্তিকামী বাঙালিদের ঘর বাড়িতে। সেই সব দিনগুলোর কথা এখনও মনে উঠলে শিউরে উঠতে হয়। তবে হানাদার বাহিনীর চেয়েও বেশি ভয়াবহ কর্মকাণ্ড করেছিল রাজাকার-আলবদর বাহিনীর সদস্যরা।

 

/টিটি/
সম্পর্কিত
ভাঙা হলো বিজয় সরণির ‘মৃত্যুঞ্জয়ী প্রাঙ্গণ’, হবে জুলাই স্মরণে ‘গণমিনার’
যমুনা নদীর তীর থেকে ১১টি মর্টার শেল উদ্ধার
মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের সংজ্ঞা পরিবর্তনের দায়িত্ব অন্তর্বর্তী সরকারের না: বাসদ
সর্বশেষ খবর
আ.লীগ নেতার বাড়িতে চাঁদাবাজির অভিযোগে পুলিশ সদস্য আটক
আ.লীগ নেতার বাড়িতে চাঁদাবাজির অভিযোগে পুলিশ সদস্য আটক
হিজরি সনের সঙ্গে ইসলামের সম্পর্ক গভীর যে কারণে
হিজরি সনের সঙ্গে ইসলামের সম্পর্ক গভীর যে কারণে
চকরিয়ায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বাস খাদে, নিহত ২
চকরিয়ায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বাস খাদে, নিহত ২
১৩ ছাত্রীকে যৌন হয়রানি: অভিযুক্ত শিক্ষককে বাঁচাতে মরিয়া সহকর্মীরা
১৩ ছাত্রীকে যৌন হয়রানি: অভিযুক্ত শিক্ষককে বাঁচাতে মরিয়া সহকর্মীরা
সর্বাধিক পঠিত
সরকারি চাকরি অধ্যাদেশের দ্বিতীয় সংশোধন উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদন
সরকারি চাকরি অধ্যাদেশের দ্বিতীয় সংশোধন উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদন
এনবিআর নিয়ে ‘কঠোর’ সরকার, আতঙ্কে শীর্ষ কর্মকর্তারা
এনবিআর নিয়ে ‘কঠোর’ সরকার, আতঙ্কে শীর্ষ কর্মকর্তারা
মুরাদনগরে দুই সন্তানসহ মাকে পিটিয়ে হত্যা
মুরাদনগরে দুই সন্তানসহ মাকে পিটিয়ে হত্যা
সচিবালয়ে দখলের দ্বন্দ্ব : আন্দোলনের নেতৃত্বে বিভক্তি
সচিবালয়ে দখলের দ্বন্দ্ব : আন্দোলনের নেতৃত্বে বিভক্তি
প্রশ্নপত্রে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়ির গল্প, পরীক্ষা বাতিল
প্রশ্নপত্রে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়ির গল্প, পরীক্ষা বাতিল