বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও এমপি (বরিশাল-১ আসন) আবুল হাসনাত আব্দুল্লাহর ব্যক্তিগত সহকারী সচিব (এপিএস) পরিচয়ে স্থানীয়দের টিউবওয়েল দেওয়ার কথা বলে কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন মেহেদী হাসান মিঠু খান নামে এক ব্যক্তি। তিনি নগরীর কালিবাড়ি রোড এলাকার মৃত ইসাহাক আলী খানের ছেলে।
বর্তমানে মিঠু ভর করেছেন বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্নেল (অব.) জাহিদ ফারুক শামীমের ওপর। তার নিজস্ব লোক পরিচয়ে বিভিন্ন সরকারি দফতরে যোগাযোগ করে প্রকল্পের কাজ নেওয়ার চেষ্টা করছেন।
এদিকে, মিঠুর ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরে কল দেওয়া হলে অ্যাপে বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর সঙ্গে তার ছবি চলে আসছে। নাম আসছে ‘হাসনাত পিএস মিঠু’। তার ব্যবহৃত মোবাইল নম্বর যার কাছে রয়েছে, সবাই একই নাম ব্যবহার করে তা মোবাইলে সেট করেছেন। এ থেকেও বোঝা যাচ্ছে, নিজেকে আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহর এপিএস পরিচয় দিচ্ছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, এর আগে আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ এমপির স্ত্রী সাহানারা বেগমের কর্মী হিসেবে নিজের পরিচয় দিতেন মিঠু। তিনি মৃত্যুবরণ করলে স্বঘোষিত এপিএস বনে যান। এরপর বিভিন্ন জনকে সরকারি টিউবওয়েল এনে দেওয়ার কথা বলে টাকা তুলতে শুরু করেন। এক্ষেত্রে কারও কারও কাছ থেকে ২০ হাজার থেকে ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত নিয়েছেন।
টাকা দেওয়ার কিছুদিনের মধ্যে টিউবওয়েল বসানোর কথা দিলেও আজ পর্যন্ত কাউকে দেননি। এমনকি তার কাছে টিউবওয়েল চাইলে আজ না হয় কাল বলে ঘোরাঘুরি করছেন। নগরীর অন্তত ২০ জন বাসিন্দা এ কথা জানিয়েছেন। এ ঘটনায় বানারীপাড়ার সলিয়াবাকপুর গ্রামের একাধিক ভুক্তভোগী মামলা করবেন বলে জানিয়েছেন।
এর মধ্যে সবচেয়ে বিপদে পড়েছেন যারা নিজের টিউবওয়েলের জন্য টাকা দিয়ে আরও ৪-৫ জনের কাছ থেকে টাকা তুলে মিঠুকে দিয়েছেন তারা। কারণ নিজেতো টিউবওয়েল পাননি, উল্টো যাদের কাছ থেকে টাকা এনে দিয়েছেন তারা এখন ওই টাকা ফেরত চাইছেন। বিষয়টি অভিযুক্তকে বারবার জানালেও কোনও ব্যবস্থা করেননি।
সলিয়াবাকপুর এলাকার বাসিন্দা হাচন আলী মিয়ার ছেলে মাইনুদ্দিন মিয়া বলেন, চার মাস আগে ওই ব্যক্তি টিউবওয়েল দেওয়ার কথা বলে আমার কাছ থেকে ২০ হাজার টাকা নিয়েছেন। পরে আমার মাধ্যমে এই এলাকার আরও তিন জন ৬০ হাজার টাকা দেন। কিন্তু আজ পর্যন্ত টিউবওয়েল দেননি। এখন এলাকার তিন ভুক্তভোগী আমার কাছে টাকা ফেরত চাইছেন। এ ঘটনায় তার বিরুদ্ধে থানায় মামলা করবো আমি।
বরিশাল সদর উপজেলা চরবাড়িয়া এলাকার ৭নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা মৃত সোহরাব হাওলাদারের ছেলে সুমন হাওলাদার বলেন, ছয় মাস আগে টিউবওয়েল দেওয়ার কথা বলে আমার কাছ থেকে ১৫ হাজার টাকা নেন আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ এমপির এপিএস মিঠু। এখন পর্যন্ত দেয়নি। টাকা ফেরত চাইলে হুমকি দিচ্ছেন।
একই ওয়ার্ডের মৃত তোফায়েল খানের ছেলে নয়ন খানের কাছ থেকেও ১৫ হাজার টাকা নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন এই ভুক্তভোগী। তিনিও পাননি।
এভাবে চরবাড়িযা এলাকার অর্ধশতাধিক মানুষের কাছ থেকে কোটি টাকা তুলে আত্মসাৎ করেছেন। আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহর এপিএস মনে করে মন্ত্রণালয় থেকে স্বল্প টাকায় টিউবওয়েল বের করে দিতে পারবেন- এই আশায় সবাই টাকা দেন। কিন্তু মিঠু সেই টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলে জানান তারা।
আগৈলঝাড়া উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি সাগর সেরনিয়াবাত বলেন, মিঠু টিউবওয়েল দেওয়ার কথা বলে আমার কাছ থেকেও টাকা চেয়েছিলেন। কিন্তু আমি বলেছি, দরকার নেই। তখন গ্রামের মানুষের কাছ থেকে টাকা উত্তোলন করে দিতে বলেন। কিন্তু বিষয়টি ভালো লাগেনি। সবার সঙ্গে প্রতারণা করেছেন। তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।
এ বিষয়ে আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ এমপির ব্যক্তিগত ফটোসাংবাদিক মিজানুর রহমান বলেন, আবুল হাসনাত আব্দুল্লাহর একান্ত সচিব হচ্ছেন খায়রুল বশার। মিঠু নামে ওনার কোনও এপিএস নেই। ওই ব্যক্তি প্রতারক। তার বিরুদ্ধে মামলা করা জরুরি।
এ বিষয়ে আবুল হাসনাত আব্দুল্লাহ এমপির একান্ত সচিব খায়রুল বশার বলেন, আমি এমপির ব্যক্তিগত সচিব। মিঠু নামের কাউকে চিনি না। আর সে যদি নিজেকে এপিএস পরিচয় দেয়, এটা প্রতারণা এবং অপরাধ। ভুক্তভোগীদের মামলা করা উচিত।
এ বিষয়ে কথা বলার জন্য আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ এমপির ব্যক্তিগত মোবাইল নম্বরে কল দেওয়া হলে তিনি রিসিভ করেন। মিঠুর বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে কোনও উত্তর দেননি। কিছুক্ষণ পর লাইনটি কেটে দেন। এরপর একাধিকবার কল দিলেও রিসিভ করেননি।
অভিযোগ পাওয়া গেছে, মিঠু এখন প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক এমপির সঙ্গে সম্পর্ক করে তার কাছ থেকে ঠিকাদারি কাজ বাগিয়ে নিয়েছেন। তার নাম ভাঙিয়ে বিভিন্ন ধরনের মিশনে নেমেছেন। এক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে কল করে প্রতিমন্ত্রীর ভয় দেখানো হয়। ভয়ভীতি দেখানোর জন্য কর্মকর্তাদের বলা হয় আপনি লাইনে থাকেন, আমি প্রতিমন্ত্রীকে ফোন ধরিয়ে দিচ্ছি।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে মেহেদী হাসান মিঠু দাবি করেন, অনেকে এমন অভিযোগ করে। নিউজ করলে সত্যতা ঠিক রেখে করবেন। কোনও মিথ্যার আশ্রয় নিয়েন না।
টিউবওয়েল দেওয়ার কথা বলে টাকা নেওয়ার অভিযোগ সত্য নাকি মিথ্যা জানতে চাইলে তিনি দাবি করেন, যারা অভিযোগ করেছে, তাদের টিউবওয়েল দিয়ে দেবো। এ নিয়ে সংবাদ না করার অনুরোধ করছি।