দীর্ঘ ৫৩ বছর। স্বাধীন বাংলাদেশের মুক্ত চেতনার কবির স্মৃতিরক্ষার আন্দোলন চলছে। বিশ্বজুড়ে বরিশালের কবি হিসেবে পরিচিত জীবনানন্দ দাশ। প্রতিবছর শুধু কবি জীবনানন্দ দাশ ওরফে মিলুর কারণে বরিশাল ভ্রমণে আসেন হাজারো পর্যটক। কিন্তু এসে তারা কী দেখেন—এমন প্রশ্ন তুলে আলোচনা সভার সভাপতির দৃষ্টি আকর্ষণ করেন উপস্থিত আলোচকরা।
জাতীয় কবিতা পরিষদ বরিশালের সভাপতি তপংকর চক্রবর্তীর সভাপতিত্বে আয়োজিত শ্রদ্ধা আলোচনায় বক্তারা প্রগতি লেখক সংঘ বরিশালের সভাপতি অপূর্ব গৌতমকে প্রশ্ন করেন, আমাদের কাছে কবি জীবনানন্দ দাশ কী পেলেন?
রবিবার (২২ অক্টোবর) সকাল ৯টায় কবি জীবনানন্দ দাশ মিলুর ম্যুরালে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন বরিশালের কবি, সাহিত্যিক ও সাংস্কৃতিক নেতৃবৃন্দ। আধুনিক বাংলা সাহিত্যের শুদ্ধতম কবি জীবনানন্দ দাশের ৬৯তম মৃত্যুবার্ষিকী উদযাপনের সূচনা হয় এভাবেই। প্রগতি লেখক সংঘ এবং জাতীয় কবিতা পরিষদ, বরিশাল জেলা শাখা যৌথভাবে কবি জীবনানন্দ দাশ সড়কস্থ ‘জীবনানন্দ মিলনায়তন ও পাঠাগার’-এ মৃত্যুবার্ষিকীর এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
এই মিলনায়তন ও পাঠাগারটি এতটাই সংকীর্ণ যে সর্বোচ্চ ৮০ জন লোক জড়ো হলেই চাপাচাপি অবস্থা হয়। তারওপর দেয়ালে ফাটল ধরেছে। পলেস্তারা খসে পড়ছে বিভিন্ন স্থানে। অনেকটাই দায়সারা অবকাঠামো ছাড়া আর কিছু নয় এই জীবনানন্দ পাঠাগার। এখানে শ্রদ্ধা নিবেদনে উপস্থিত সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ডা. মোজাম্মেল হক, কবি ও ছড়াকার দীপংকর চক্রবর্তী, বরিশাল সাংস্কৃতিক সংগঠন সমন্বয় পরিষদের সাবেক সভাপতি নাট্যকার নাজমুল হোসেন আকাশ, কবি সব্যসাচী সেনগুপ্ত, কবিতা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক পার্থ সারথি, সাংস্কৃতিক কর্মী ও বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি রেজিস্ট্রার বাহাউদ্দীন গোলাপ, কবি মেহেদী হাসান, প্রগতি লেখক সংঘ বরিশালের সাধারণ সম্পাদক শোভন কর্মকারসহ প্রত্যেকেই জীবনানন্দ দাশকে নিয়ে আলোচনায় কবির স্মৃতিরক্ষায় কিছুই না করতে পারার কষ্ট তুলে ধরেন।
বক্তারা বরিশালে একটি জীবনানন্দ ইনস্টিটিউট গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে সরকারের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘বরিশালে কবি জীবনানন্দ দাশ ইনস্টিটিউট ও মিলনায়তন সরকারের প্রতিশ্রুতি ছিল। সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ নিজেও এ বিষয়ে প্রতিশ্রুতি রক্ষার আশ্বাস দিয়ে বলেছিলেন, বরিশালে খুব শিগগিরই কবি জীবনানন্দ দাশ ইনস্টিটিউট ও মিলনায়তন, নজরুল সাংস্কৃতিক কেন্দ্র এবং বরিশাল পাবলিক লাইব্রেরির কাজ শুরু হবে।’
এজন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছিলেন সংস্কৃতি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী। বরিশালের সাবেক জেলা প্রশাসক জসিম উদ্দীন হায়দার সেসময় জায়গাও নির্ধারিত হয়েছে বলে জানিয়েছিলেন। তারপরও আজ পর্যন্ত বরিশালে কবি জীবনানন্দ দাশ স্মৃতি সংরক্ষণের কোনও উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি কেন, প্রশ্ন তোলেন বক্তারা।
অনুষ্ঠান শেষে কবির কবিতাকে সুরারোপ করে গান পরিবেশন, কবিতা আবৃত্তি, স্বরচিত কবিতা পাঠ এবং কবির প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করা হয়।
১৯৫৪ সালের ১৪ অক্টোবর কলকাতার বালিগঞ্জে ট্রামের ধাক্কায় আহত হন কবি জীবনানন্দ দাশ। ট্রামের ক্যাচারে আটকে দলিত হয়ে গিয়েছিল তার শরীর। দ্রুত তাকে নিয়ে যাওয়া হয় কলকাতার শম্ভুনাথ পণ্ডিত হাসপাতালে। এর আট দিন পর ১৯৫৪ সালের ২২ অক্টোবর পরলোকে পাড়ি দেন তিনি।