চিরকুট লিখে শিক্ষার্থীর ‘আত্মহত্যার’ ঘটনায় বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজের এক শিক্ষকের অপসারণ দাবি করেছেন তার সহপাঠীরা। রবিবার দুপুরে মেডিক্যাল কলেজের একাডেমিক ভবনের সামনে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করে অধ্যক্ষের কাছে শিক্ষকের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন তারা।
মেডিক্যালের ৫০তম ব্যাচের আয়োজনে বিক্ষোভ কর্মসূচিতে শিক্ষার্থীরা তাদের দাবি মানা না হলে কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেন।
গত ১৯ মে নিজের শরীরে ইনজেকশন পুশ করে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন কলেজের ৫০তম ব্যাচের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সজীব বাড়ৈ। পরে তাকে বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিক্যালি কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় স্থানান্তর করা হয়। ২৪ মে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান সজীব।
সজীব আগৈলঝাড়া উপজেলার বাকাল গ্রামের দর্জি সুধীর বাড়ৈর ছেলে। তার বাবা আগৈলঝাড়া উপজেলা সদরের সাথী টেইলার্সের মালিক। পরিবারের বড় সন্তান ছিলেন সজীব। এলাকার মানুষের সহযোগিতায় পড়াশোনা চালিয়ে আসছিলেন। সহপাঠীরা জানিয়েছেন, তিনি দীর্ঘদিন ধরেই মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন। মাঝে চিকিৎসাও করান। পড়াশোনায়ও পিছিয়ে পড়েন। তার সহপাঠীরা সবাই ইন্টার্ন করছেন। কিন্তু তিনি তৃতীয় বর্ষে ছিলেন। রবিবার সকালে বাকাল গ্রামে সজীবের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে।
আত্মহত্যাচেষ্টার আগে সজীব একটি চিরকুট লিখে গিয়েছেন। সেখানে লিখেছেন, ‘নিজের সঙ্গে যুদ্ধ করে করে ক্লান্ত আমি। একটু বিশ্রাম চাই। ক্ষমা করে দিও। এতো ভালোবাসার প্রতিদান দিতে পারলাম না।’
এ ঘটনায় মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের শিক্ষক কাজী মো. আসাদুজ্জামান রুমিকে দায়ী করে তার অপসারণে অধ্যক্ষের কাছে লিখিত আবেদন দিয়েছেন ৫০তম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা। একই দাবিতে মানববন্ধন করেন তারা।
সহপাঠীরা জানান, সজীবের পরিবার গরিব। মেডিক্যালে চান্স পাওয়ার পর আর্থিক কারণে তার ভর্তি অনিশ্চিত হয়ে পড়েছিল। তখন মানুষের সহায়তায় মেডিক্যালে ভর্তি হয়েছিলেন। এর মধ্যে তার বাবাও অসুস্থ হয়ে পড়েন। তার ও পরিবারের আশা ছিল, তিনি চিকিৎসক হয়ে গ্রামের মানুষের চিকিৎসা করবেন।
সজীবের সহপাঠী সুমন হালদার বলেন, ‘পড়াশোনার অতিরিক্ত চাপ সামলাতে না পেরে নিজের শরীরে ইনজেকশন পুশ করে আত্মহত্যা করে সজীব। পড়াশোনার চাপে মাঝেমধ্যে অসুস্থ হয়ে পড়তো। তৃতীয়বর্ষের মাইক্রোবায়োলজিতে আটকে ছিল। তার সঙ্গের শিক্ষার্থীরা ইন্টার্ন করছে।’
লিখিত আবেদনে শিক্ষার্থীরা উল্লেখ করেন, সজীব গত ১৯ মে আত্মহত্যার চেষ্টা চালিয়ে ২৪ মে মারা যায়। দুই বছর ধরে বিষণ্নতাজনিত ব্যাধিতে ভুগছিল। তার এমন মানসিক অবস্থার জন্য প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে দায়ী মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের শিক্ষক কাজী মো. আসাদুজ্জামান রুমি। বিভাগও এর দায় এড়াতে পারে না। একজন পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থীকে মানসিকভাবে চাপে রেখে কীভাবে তিলে তিলে শেষ করে দেওয়া যায় তার বড় প্রমাণ দেখা গেলো সজীব বাড়ৈর ঘটনার মধ্য দিয়ে। কলেজ অধ্যক্ষের কাছে ৫০তম ব্যাচের শিক্ষার্থীদের স্বাক্ষরিত ওই অভিযোগে শিক্ষক কাজী মো. আসাদুজ্জামান রুমির অপসারণের পাশাপাশি শিক্ষার্থীবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টির জন্য যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে।
শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে লিখিত অভিযোগ পাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছেন বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. ফয়জুল বাশার। তিনি বলেন, ‘আবেদন পাওয়ার পর পরই স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালকের কাছে একটি লিখিত স্মারক পাঠানো হয়েছে। ওই স্মারকে শিক্ষার্থীদের দাবির কথা উল্লেখ করে কাজী মো. আসাদুজ্জামানকে বদলির সুপারিশ করা হয়েছে।’
এ ব্যাপারে জানতে সন্ধ্যায় অধ্যাপক কাজী মো. আসাদুজ্জামানের মোবাইলে কল করা হলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।