স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ফেনী পৌর এলাকার আবর্জনা শিগগিরই পরিণত হচ্ছে সম্পদে। সে লক্ষ্যে প্রাথমিক কিছু প্রস্তুতিও শেষ করেছে ফেনী পৌরসভা। নির্বাচন করা হয়েছে ভূমি, চলছে মাটি ভরাটের কাজ। ফলে আবর্জনার কারণে শহরের পরিবেশ দূষণের অভিশাপ থেকে যেমন মুক্তি পাবে নাগরিকরা, তেমনি ওই আবর্জনা পরিণত হবে সম্পদে। উপার্জিত হবে প্রচুর অর্থ।
পৌরসভা সূত্রে জানা যায়, দেশের ৬৪টি জেলায় আবর্জনা থেকে জৈব সার উৎপাদনের লক্ষ্যে ‘ক্লিন ডেভেলপমেন্ট মেকানিজম (সিডিএম)’ প্রকল্প হাতে নিয়েছে পরিবেশ অধিদফতর।ফেনী পৌরসভার এ বিশেষ ও পরিবেশ বান্ধব প্রকল্পটি অচিরেই আলোর মুখ দেখবে। পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব কামাল উদ্দিন আহমেদের হস্তক্ষেপে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য পরিবেশ মন্ত্রণালয় পাঁচ কোটি টাকা বরাদ্দ অনুমোদন করেছে।
সূত্রটি জানিয়েছে, প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য পৌরসভার সুলতানপুরে ৭০ শতক ভূমি নির্ধারণ করা হয়েছে। এরইমধ্যে নির্ধারিত জায়গাটিতে চলছে মাটি ভরাটের কাজ। ঈদের পরপরই সয়েল টেস্ট ও কারখানা স্থাপনে পরিকল্পনায় হাত দেওয়া যাবে। জলবায়ু পরিবর্তন (ক্লাইমেট চেঞ্জ) ফাণ্ডের সহায়তায় পরিবেশ অধিদফতর পৌরসভার মাধ্যমে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে।
ফেনী পৌরসভার মেডিক্যাল অফিসার ডা. কৃষ্ণপদ সাহা জানান, বর্তমানে ফেনী পৌরসভার আবর্জনা শহরের দেওয়ানগঞ্জে ফেলা হচ্ছে, এতে পরিবেশ দূষণ হয়। কিন্তু এটি আমরা সম্পদে পরিণত করতে চাই, সে লক্ষ্যে কাজও চলছে। বর্তমানে বিভিন্ন বাসা-বাড়িসহ পৌর এলাকা থেকে দৈনিক কমপক্ষে ১২০ টন আবর্জনা দেওয়ানগঞ্জে নিয়ে ফেলা হয়। সে হিসেবে প্রতি মাসে পৌরসভার ৩ হাজার ৬শ’ টন আবর্জনা অপসারণ করা হয়।
২০১২ সালে পরিবেশ বিজ্ঞানীদের সহায়তায় বাংলাদেশ শিল্প ও বিজ্ঞান গবেষণা পরিষদ একটি সমীক্ষা প্রকাশ করে। সমীক্ষার ফলাফলে উল্লেখ করা হয়েছে, বাসা-বাড়ি ও রাস্তা-ঘাটে যেসব আবর্জনা পাওয়া যায় তার ৮০ শতাংশ জৈব সার প্রস্তুতে বিবেচিত হয়। এতে বলা আছে, প্রতি টন (১০০০ কেজি) আবর্জনা থেকে ৭ থেকে ৮ শ কেজি জৈব সার উৎপাদন করা সম্ভব।
একই সমীক্ষায় দেখা গেছে, প্রতি কেজি আবর্জনা থেকে ০.০৬ ঘনমিটার গ্যাস বা রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় সৃষ্ট বাষ্প দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদনও করা সম্ভব।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর জানিয়েছে, প্রতি টন আবর্জনায় ৭-৮শ কেজি জৈব সার পাওয়া যাবে। এক কেজি জৈব সারের বাজারমূল্য ৭ থেকে ৮ টাকা। সে হিসেবে প্রতিটন জৈব সারের মূল্য ৪ হাজার ৯ শ থেকে ৫ হাজার ৬ শ টাকা।
বিভিন্ন সংস্থা থেকে পাওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে জানা গেছে, ফেনী পৌরসভায় প্রতি দিন ১২০ টন অপসারিত বর্জ্য থেকে দৈনিক ৯৬ টন জৈবসার উৎপাদিত হবে। চক্রাকারে প্রতিমাসে ২ হাজার ৮শ’ ৮০ টন আর বছরে উৎপাদিত হবে ৩৪ হাজার ৫শ’ ৬০ টন সার। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে ফেনী পৌরসভা এ প্রকল্প থেকে বছরে আয় করতে পারবে ১৯ কেটি ৩৫ লাখ ৩৬ হাজার টাকা।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর ফেনীর অতিরিক্ত উপ-পরিচালক মো. শহীদুল ইসলাম জানান, এক্ষেত্রে আমাদের কোনও করণীয় থাকলে আমরা আন্তরিকভাবে সহায়তা দিব।
তিনি আরও জানান, জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য যেসব বিষয়কে দায়ী করা হয় তার অন্যতম হচ্ছে মিথেন গ্যাস। এটি ময়লা-আবর্জনা যত্রতত্র পচার ফলে উৎপন্ন হয়। মিথেন গ্যাস মানুষ ও পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। এ গ্যাস সামগ্রিকভাবে কার্বন ডাই অক্সাইডের চেয়েও ২৮ গুণ বেশি ক্ষতিকর। ফলে মিথেন গ্যাস উৎপন্নকারী আবর্জনাকে সম্পদে পরিণত করার কোনও বিকল্প নেই।
সূত্রে জানা গেছে,প্রাথমিক পর্যায়ে সংগৃহীত বর্জ্য স্বয়ংক্রিয় মেশিনের সাহায্যে পৃথক করা হবে। তাছাড়া পৃথকীকরণ কাজে জনসচেতনতা খুবই জরুরি। সাধারণ মানুষকে এ কাজে সম্পৃক্ত করা গেলে এবং পচনশীল ও অপচনশীল বর্জ্য সম্পর্কে ধারণা দেওয়া হলে পৃথকীকরণের কাজটি তারাই করে ফেলবে।
ফেনী পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আজিজুল হক জানান, শিগগিরই পরিবেশ অধিদফতর থেকে সার উৎপাদনে কারখানা স্থাপনের জন্য টেন্ডার আহ্বান করা হবে। আশা করা যাচ্ছে আগামী বছরের মাঝামাঝি আমরা আবর্জনা থেকে সার উৎপাদনে যেতে পারব।
জানতে চাইলে ফেনী পৌরসভার মেয়র হাজী আলাউদ্দিন বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়নে দাতা সংস্থার প্রতিনিধি দল শহর পরিদর্শন করে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। অল্প সময়ের মধ্যেই এই প্রকল্পের দরপত্র আহবান করা হবে।
আরও পড়তে পারেন: ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম ও সিলেটের পথে থেমে থেমে চলছে গাড়ি
