মিয়ানমার থেকে নির্যাতনের স্বীকার হয়ে আশ্রয়ের জন্য বাংলাদেশে আসা অধিকাংশ রোহিঙ্গা দুর্ভোগে পড়েছেন। গত দুইদিন ধরে থেমে থেমে বৃষ্টির ফলে এসব রোহিঙ্গাদের দুর্ভোগ বেড়েছে। আজ মঙ্গলবার (১৯ সেপ্টেম্বর) সারাদিন বৃষ্টি হওয়ায় উখিয়ার বালুখালী ক্যাম্পে ছরার পাশে অবস্থান নেওয়া রোহিঙ্গারা দুর্ভোগে পড়েন।
সরেজমিন বালুখালী গিয়ে ও দুর্ভোগে পড়া মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পাহাড়ে জায়গা সংকুলান না হওয়ায় প্রাণ বাঁচাতে ওই ছরার পাশে অবস্থান নিয়েছেন রোহিঙ্গারা।
আব্দুল জলিল নামে এক রোহিঙ্গা জানান, তিনি ছয় সন্তান নিয়ে এক সপ্তাহ আগে বালুখালীতে আসেন। বালুখালী ক্যাম্পের পাহাড়ে স্থান না হওয়ায় অন্যান্যদের মতো ছরার পাশের একটি বিলে অবস্থান নেন। কিন্তু, হঠাৎ বৃষ্টি হওয়ায় পানিবন্দি হয়ে পড়ে তার পরিবার।
মিয়ানমারের বলিবাজার থেকে এসেছেন ফিরোজা খাতুন। তার দুই ছেলে ও দুই মেয়ে। স্বামীকে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী মেরে ফেলছে। কোনও উপায় না দেখে বাংলাদেশে পালিয়ে এসে আশ্রয় নেন বালুখালী ক্যাম্পে। তিনি বলেন, ‘দুইদিন ধরে না খেয়ে আছি। কোনও টাকা পয়সা নেই। ক্ষুধায় সন্তানরা কাতরাচ্ছে। এরমধ্যে বৃষ্টিতে বস্তিতে হাটু পরিমাণ পানি জমে গেছে।’
আবেদা খাতুনের বয়স ৩৫। তিনি পাঁচ সন্তানের জননী। স্বামীহারা এই গৃহবধূ ১০ দিন আগে কুতুপালং ক্যাম্পের পাহাড়ে আশ্রয় নেওয়ার পর সেখান থেকে তাদের উচ্ছেদ করে বালুখালী ক্যাম্পে নিয়ে আসে। কিন্তু, প্রচুর বৃষ্টিতে তার বাসাটি পানিতে ভেসে যায়।
এদিকে, কক্সবাজার আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ উজ্জল কান্তি পাল বলেন, ‘গত ২৪ ঘণ্টায় ৫৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। সাগর উত্তাল থাকায় ৩নং সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বঙ্গোপসাগরের সব মাছ ধরার নৌযানকে উপকূলের কাছাকাছি থাকতে বলা হয়েছে। আরও দুদিন বৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।’
উল্লেখ্য, গত ২৪ আগস্ট মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে নিরাপত্তা বাহিনীর ২৯টি চৌকিতে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটে। এরপর থেকে দেশটির সেনাবাহিনী রোহিঙ্গা অধ্যুষিত রাখাইন রাজ্যে অভিযান শুরু করে। রোহিঙ্গাদের বাড়ি ঘরে অগ্নিসংযোগ, বোমা নিক্ষেপ, গুলি করে ও গলা কেটে রোহিঙ্গাদের হত্যার অভিযোগ ওঠে সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে। ২৬ আগস্ট থেকে রোহিঙ্গারা দলে দলে বাংলাদেশে আসতে শুরু করে। জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক শরণার্থী সংস্থার হিসাব অনুযায়ী, এ পর্যন্ত প্রায় চার লাখ ১০ হাজাররোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। এর আগে গত বছরের ৯ অক্টোবরের পর থেকে মিয়ানমারের আরকান রাজ্যে একইভাবে হামলার ঘটনা ঘটে। এ সময় প্রাণ ভয়ে পালিয়ে আসে প্রায় ৮৭ হাজার রোহিঙ্গা।
আরও পড়ুন:
রোহিঙ্গা যুবকরা কোথায়?
