দেশ স্বাধীনের ৪৭ বছর পর ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সদরের সঙ্গে বিজয়নগর উপজেলার সরাসরি সড়ক যোগাযোগ স্থাপনের দৃশ্যমান কাজ শুরু হয়েছে। এ অবস্থায় সড়কটিকে ঘিরে দুই উপজেলার অন্তত ছয় লাখ মানুষ নতুন করে ঘুড়ে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখছেন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সড়কটির নির্মাণকাজ শেষ হলে শিক্ষা-সংস্কৃতি ও স্বাস্থ্যসেবার দিক থেকে পিছিয়ে পড়া প্রায় ছয় লাখ সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ অনেকাংশে দূর হবে।
বিজয়নগর উপজেলার বাসিন্দা আবু তাহের, লাল মিয়া, আব্দুল খালেক, জান্নাতুল ফেরদৌস জানান, শুষ্ক মৌসুমে পায়ে হাঁটা আর বর্ষা মৌসুমে নৌকাই জেলা সদরের সঙ্গে তাদের যোগাযোগের একমাত্র ভরসা। বিকল্প পথে জেলা শহরে আসতে হলে সরাইল অথবা আখাউড়া উপজেলার ওপর দিয়ে কয়েক ঘণ্টার দীর্ঘপথ পাড়ি দিতে হয়। রাত-বিরাতে কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে বিল-ঝিল বেষ্টিত মানুষগুলো নিরুপায় হয়ে পড়ে। চিকিৎসার অভাবে অনেকে হাওয়ের রাস্তায় মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। এ অবস্থায় দীর্ঘদিন পর কাজলা বিলের ওপর দিয়ে জেলা সদরের সঙ্গে সরাসরি সড়ক যোগাযোগের দৃশ্যমান কাজ শুরু হওয়ায় স্বস্তি প্রকাশ করেছেন তারা।
একই উপজেলার বাসিন্দা মো. লিটন মিয়া, মৃনাল চৌধুরী, বিদ্যুৎ চন্দ্র দাস ও জাকির হোসেন জানান, রাস্তাটি চালু হলে মাত্র ২০ মিনিটে জেলা শহরে যেতে পারবো। আমাদের সন্তানরা স্কুল-কলেজে যেতে পারবে। শিক্ষা-সংস্কৃতি ও স্বাস্থ্যসেবার দিক দিয়ে পিছিয়ে পড়া এ অঞ্চলের মানুষ এগিয়ে যেতে পারবে। চিকিৎসার ক্ষেত্রে আমরা দ্রুত জেলা শহরে পৌঁছাতে পারবো। এর চেয়ে আনন্দের বিষয় আর কী হতে পারে। দীর্ঘদিন পর সড়কটি নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়ায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর এবং বিজয়নগর আসনের সংসদ সদস্য উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরীকে ধন্যবাদ জানান তারা।
বিজয়নগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জহিরুল ইসলাম ভূইয়া ও পত্তন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান রতন জানান, আমাদের প্রাণের দাবি সিমনা-ব্রাহ্মণবাড়িয়া তথা শেখ হাসিনা সড়ক। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী সড়কটির দৃশ্যমান কাজ শুরু হওয়ায় আমরা খুশি।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ফজলে হাবিব জানান, এই সড়কটির দৈর্ঘ্য প্রায় ৯ কিলোমিটার, প্রস্থ ২৪ ফুট। প্রায় ৪০ কোটি টাকা ব্যয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স ডলি কনস্ট্রাকশন-ইনফ্রাটেক যৌথভাবে কাজলা বিলের ওপর দিয়ে রাস্তাটি তৈরি করছে। ইতোমধ্যে সড়কটির নির্মাণকাজ দ্রুতগতিতে চলছে। চলতি অর্থবছরের মধ্যে সড়কটির কাজ শেষ হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
তিনি আরও জানান, সড়কটির বিভিন্ন অংশে আলাদাভাবে মোট তিনটি ব্রিজ নির্মাণ করা হবে। অল্প কিছুদিনের মধ্যে ব্রিজগুলো নির্মাণের জন্য টেন্ডার আহ্বান করা হবে। ২০১৯ সালের মধ্যে সড়কটি দিয়ে বিজয়নগরের মানুষ খুব সহজভাবে জেলা শহরে আসতে পারবে।
সড়কটির নির্মাণকাজ শুরু হওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করে স্থানীয় সংসদ সদস্য র.আ.ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী জানান, সড়কটি তার নির্বাচনি এলাকা ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর এবং বিজয়নগর এলাকার কয়েক লাখ মানুষের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন ছিল। সেই স্বপ্নের বাস্তবায়ন হচ্ছে। তিনি জানান, সড়কটি নির্মাণ হলে জেলা শহরের ওপর দিয়ে বয়ে চলা তিতাসের পূর্ব পাড়ে নতুন নতুন শিল্প কারখানা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠবে। জেলা শহর সম্প্রসারিত হবে। এতে জেলার মানচিত্রটাই পাল্টে যাবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
উল্লেখ্য,২০১০ সালের ১২ মে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজ মাঠে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সিমনা-ব্রাহ্মণবাড়িয়া সড়কটি নির্মাণের ঘোষণা দেন। পরে গত বছরের জুন মাসে প্রায় ৪০ কোটি টাকা ব্যয়ে সাড়ে আট কিলোমিটার দৈর্ঘ্য এবং ২৪ ফিট প্রস্থ বিজয়নগরের সিমনা-ব্রাহ্মণবাড়িয়া সড়কের নির্মাণ কাজ শুরু হয়। পরে স্থানীয় জনগণের দাবির মুখে স্থানীয় সংসদ সদস্য র.আ.ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী সড়কটি প্রধানমন্ত্রী ‘শেখ হাসিনা’ নামকরণ করে এর ফলক উদ্বোধন করেন।