X
রবিবার, ০৫ মে ২০২৪
২২ বৈশাখ ১৪৩১

আমার সন্তান নেই, সন্তানের বিচারও নেই: তনুর মা

মাসুদ আলম, কুমিল্লা
২০ মার্চ ২০১৮, ১৭:৪৮আপডেট : ২১ মার্চ ২০১৮, ০৮:৪৯

তনু (ফাইল ছবি)

হত্যার শিকার কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী সোহাগী জাহান তনুর মা আনোয়ারা বেগম বলেছেন, ‘মেয়ে হারিয়ে আমি এবং আমার পরিবার যে কী কষ্টে আছি, তা বলে বোঝানোর মতো নয়। মার্চের ২০ তারিখ এলেই আমার বুকের ভেতর আগুন জ্বলে ওঠে। কে করবে আমার সন্তান হত্যার বিচার? আমার সন্তান নেই, সন্তানের বিচারও নেই।’

সোহাগী জাহান তনু হত্যাকাণ্ডের দুই বছর পূর্ণ হয়েছে মঙ্গলবার (২০ মার্চ)। এই দুই বছরে মামলার অগ্রগতি নিয়ে জানতে চাইলে নিহত তনুর মা আনোয়ারা বেগম এসব কথা বলেন।

কথা বলতে গিয়ে অঝোরে কাঁদছিলেন তনুর মা আনোয়ারা বেগম। ধরে আসা গলায় তিনি আরও জানান, মেয়ের শোকে তনুর বাবা এখন শয্যাশায়ী। তার অফিসে যাওয়াও বন্ধ। আনোয়ারা বেগম বলেন, ‘তার শরীরের যে অবস্থা, মনে হয় আর চাকরিটাও করতে পারবেন না।’

তিনি বলেন, ‘আমার দিন যে কীভাবে কাটে, বলে বোঝাতে পারবো না। আমার সংসারটার অবস্থাও বেহাল। বোন হারিয়ে আমার দুই ছেলেও অসুস্থ।’

তিনি আরও বলেন,  ‘কিছুদিন আগে জালাল উদ্দিন নামে সিআইডির এক কর্মকর্তা আমাদের বাসায় আসেন। এরপর তনুর ঘাতকদের চিহ্নিত করা ও বিচারের আওতায় আনার আশ্বাস দিয়ে গেছেন। দুই বছরেও এ দেশে কোনও হত্যার রহস্য উদঘাটন হয় না, এটা কেমন কথা! আমরা গরিব বলেই কী বিচার পাবো না।’

আনোয়ারা বেগম দাবি করেন, ‘যারা আমার মেয়েকে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করেছে, আমি তাদের নাম সরাসরি বলেছি। সার্জেন্ট জাহিদের স্ত্রী অনেকটা জোর করে তার বাসায় তনুকে টিউশনি করার জন্য নিয়েছিলেন। এ টিউশনির তিন মাসের মাথায় আমার মেয়েকে হত্যা করা হয়েছে। তাদের (সার্জেন্ট জাহিদ ও তার স্ত্রী) পূর্ব-পরিকল্পনা মতো আমার মেয়ে হত্যা করা হয়েছে। সার্জেন্ট জাহিদ ও তার স্ত্রীকে গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ করলে হত্যাকারীদের পরিচয় জানা যাবে। তাদের বিচারের আওতায় আনার জন্য আমি প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছি।’

তনুর বাবা ইয়ার হোসেন বলেন, ‘সন্তান হারিয়ে আমি শয্যাশায়ী। শারীরিক অবস্থা খুব একটা ভালো না। তিন মাসের মেডিক্যাল ছুটি নিয়েছি। হাঁটতে পারি না। তনুর জন্য মঙ্গলবার গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার মির্জাপুর গ্রামের দুই মসজিদে দোয়ার আয়োজন করা হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘মেয়ে হত্যার বিচার দেখে যেতে পারবো কিনা আল্লাহ জানেন। দুই বছরেও কিছুই হলো না। এটা ভাবতে গেলে বুকের ভেতরে হাহাকার ওঠে। দাঁড়িয়ে থাকতে পারি না। কিছুই বলার নেই। যারা আমার মেয়েকে হত্যা করেছে, আল্লাহ তাদের বিচার করবেন।’

তনুর পরিবার জানায়, ২০১৬ সালের ২০ মার্চ সন্ধ্যায় কুমিল্লা সেনানিবাসের ভেতরে একটি বাসায় টিউশনি করতে গিয়ে আর বাড়ি ফেরেননি তনু। পরে তার স্বজনরা খোঁজাখুঁজি করে রাতে সেনানিবাসের ভেতরে একটি জঙ্গলে তনুর লাশ পান। পরদিন তার বাবা কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের অফিস সহায়ক ইয়ার হোসেন বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে কোতোয়ালি মডেল থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। থানা পুলিশ ও ডিবির পর ২০১৬ সালের ১ এপ্রিল থেকে মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব পায় সিআইডি কুমিল্লা। তনুর দুই দফা ময়নাতদন্তে কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগ মৃত্যুর সুস্পষ্ট কারণ উল্লেখ করেনি। শেষ ভরসা ছিল ডিএনএ রিপোর্ট।

গত বছরের মে মাসে সিআইডি তনুর জামা-কাপড় থেকে নেওয়া নমুনার ডিএনএ পরীক্ষা করে তিনজন পুরুষের শুক্রাণু পাওয়ার কথা গণমাধ্যমকে জানায়। পরে সন্দেহভাজনদের ডিএনএ ম্যাচিং করার কথা থাকলেও তা করা হয়েছে কিনা– এ নিয়েও সিআইডি বিস্তারিত কিছু বলছে না। সর্বশেষ সন্দেহভাজন হিসেবে তিনজনকে ২০১৭ সালের ২৫ অক্টোবর থেকে ২৭ অক্টোবর পর্যন্ত সিআইডির একটি দল ঢাকা সেনানিবাসে জিজ্ঞাসাবাদ করে। জিজ্ঞাসাবাদ করা ব্যক্তিরা তনুর মায়ের সন্দেহ করা আসামি বলেও সিআইডি জানায়। তবে তাদের নাম জানানো হয়নি।

এদিকে, সর্বশেষ ২০১৭ সালের ২২ নভেম্বর ঢাকা সিআইডি কার্যালয়ে ইয়ার হোসেন, আনোয়ারা বেগম, তনুর চাচাতো বোন লাইজু ও চাচাতো ভাই মিনহাজকে দিনভর নানা বিষয় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেন ঢাকা সিআইডির কর্মকর্তারা।

গণজাগরণ মঞ্চ, কুমিল্লার সংগঠক খায়রুল আনাম রায়হান জানান, ‘সেনানিবাসের ভেতরে তনু হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। দুই বছরেও অপরাধী শনাক্ত করা যায়নি, যা প্রমাণ করে, সাধারণ মানুষ কত অসহায়। তনু হত্যার মামলাটি দীর্ঘদিন সিআইডিতে পড়ে আছে, মামলার কোনও অগ্রগতিই নেই। সিআইডির গা-ছাড়া ভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তনুর মা যাদের সন্দেহ করছেন, তাদের জিজ্ঞাসাবাদ না করে সিআইডি তনুর পরিবারকে বারবার হয়রানি করছে। মানুষ ধৈর্য ধরে আছে, একসময় মানুষের ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে যেতে পারে।’

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও সিআইডি কুমিল্লার সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার জালাল উদ্দীন আহমেদ বলেন, ‘মামলার স্বার্থে পুনরায় আরও অনেককে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। অনেক কর্মকর্তা মিশনে ছিলেন, তারা আসছেন। দুই-তিন মাসের মধ্যে জিজ্ঞাসাবাদের প্রক্রিয়া শেষ করা হবে। সঠিক তদন্তের মাধ্যমে খুব অল্প সময়ের মধ্যে রহস্য উদঘাটন করে অপরাধীদের শনাক্ত করা হবে।’

 

/এমএ/টিএন/চেক-এমওএফ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
মন্ত্রী-এমপির স্বজনদের বিরত রাখা নীতিগত সিদ্ধান্ত, আইনি নয়: কাদের
মন্ত্রী-এমপির স্বজনদের বিরত রাখা নীতিগত সিদ্ধান্ত, আইনি নয়: কাদের
আইপিএলের সময়ে হবে পিএসএল!
আইপিএলের সময়ে হবে পিএসএল!
বাড়ি ফেরার পথে বজ্রাঘাতে বাবুর্চির মৃত্যু, সারা রাত রাস্তায় পড়ে ছিল লাশ
বাড়ি ফেরার পথে বজ্রাঘাতে বাবুর্চির মৃত্যু, সারা রাত রাস্তায় পড়ে ছিল লাশ
বাড়িতে বিস্ফোরণে আহত স্কুলছাত্রী মারা গেছে
বাড়িতে বিস্ফোরণে আহত স্কুলছাত্রী মারা গেছে
সর্বাধিক পঠিত
মাঠ প্রশাসনে বিতর্কিত কর্মকর্তাদের লাগাম টানবে সরকার
মাঠ প্রশাসনে বিতর্কিত কর্মকর্তাদের লাগাম টানবে সরকার
রবিবার থেকে স্কুল-কলেজ খোলা, শনিবারও চলবে ক্লাস
রবিবার থেকে স্কুল-কলেজ খোলা, শনিবারও চলবে ক্লাস
জাল দলিলে ৫০ কোটি টাকা ব্যাংক ঋণ!
জাল দলিলে ৫০ কোটি টাকা ব্যাংক ঋণ!
মিল্টন সমাদ্দারের তিন মামলার বাদীরই মুখে কুলুপ
মিল্টন সমাদ্দারের তিন মামলার বাদীরই মুখে কুলুপ
স্বর্ণের ভরিতে বাড়লো ১ হাজার টাকার বেশি
স্বর্ণের ভরিতে বাড়লো ১ হাজার টাকার বেশি