ফেনী সোনাগাজীর ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় ফেনী জেলা প্রশাসনের গঠিত তদন্ত কমিটি তিন দফা সময় বাড়িয়েও তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে পারেননি। ৬ এপ্রিল নুসরাতকে আগুন দেওয়ার পরদিন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) পি কে এম এনামুল করিমকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি করে জেলা প্রশাসন। ওই কমিটিতে সোনাগাজী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সোহেল পারভেজ ও জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা কাজী সলিম উল্লাহকে সদস্য করা হয়। কমিটিকে তিন দিনের মধ্যে রিপোর্ট দাখিলের নির্দেশ দেন জেলা প্রশাসক ওয়াহিদুজ্জামান। তিন কার্যদিবস শেষ হলেও কাজ শুরুই করতে পারেননি তিনি।
সূএ জানায়, গত ১০ এপ্রিল বুধবার জেলা প্রশাসক বরাবর তদন্ত কমিটির প্রধান এনামুল করিম আরও সাত দিন সময় বাড়ানোর আবেদন করেন। পরে জেলা প্রশাসক সাত কার্যদিবস মেয়াদ বাড়ান। সে মেয়াদে প্রতিবেদন তৈরি করতে না পারায় কমিটি আরও সময় বাড়ানোর আবেদন করে। জেলা প্রশাসক আরও চার দিন সময় বাড়ান, যে মেয়াদ শেষ হয়েছে ২১ এপ্রিল। তবে লক্ষণীয় যে ২৯ এপ্রিল পর্যন্ত কমিটি তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেনি।
এদিকে সোনাগাজী পৌর কাউন্সিলর শেখ আব্দুল হালিম মামুন অভিযোগ করেন, নুসরাতকে হত্যার পর মাদ্রাসা পরিচালানা কমিটির সাবেক সভাপতি ও ফেনীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) পি কে এম এনামুল করিমকে এই কমিটির প্রধান রাখায় সঠিক তদন্ত নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে। নুসরাতের স্বজনরা এরই মধ্যে এনামুল করিমের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন । তারা বলেছেন, সভাপতি হিসাবে পিকেএম এনামুল করিম নিপীড়নের ঘটনার পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নিয়ে তিনি অভিযুক্ত এস এম সিরাজ উদ্দৌলার পক্ষ নিয়েছিলেন।
সোনাগাজী পৌর মেয়র রফিকুল ইসলাম খোকন অভিযোগ করেন, গত ২৭ মার্চ নুসরাকে যৌন নিপীড়ন করার ঘটনায় মামলা হলেও মাদ্রাসা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনও তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়নি । বরং নুসরাতের পরিবার তার কাছে অভিযোগ জানাতে গিয়ে উল্টো হুমকির শিকার হয়েছেন।
এনিয়ে কমিটির প্রধান এনামুল করিম বাংলাট্রিবিউনকে বলেন, ‘তদন্তকাজ শেষ করা হলেও নানা ব্যস্ততায় প্রতিবেদন তৈরি এখনও সম্ভব হয়নি। আগামী কয়েক দিনের মধ্যে প্রতিবেদন তৈরি করা সম্ভব হবে।’
এ প্রসঙ্গে জেলা প্রশাসক ওয়াহিদুজ্জামান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘তদন্ত দলের প্রধান প্রশিক্ষণের জন্য জেলার বাইরে অবস্থান করায় কিছুটা দেরি হচ্ছে। অতি দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রতিবেদন তৈরি করে গণমাধ্যমকে এ বিষয়ে জানানো হবে।’
এ ঘটনায় নুসরাতের বড়ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান বাদী হয়ে গত ৮ এপ্রিল ৮ জনের নাম উল্লেখ করে সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা করেন। ১০ এপ্রিল মামলাটি তদন্তের জন্য পিবিআইতে হস্তান্তর করা হয়। পিবিআই ২৩ আসামিকে গ্রেফতার করে। এর মধ্যে ১০ জন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। এখনও ৬ জন রিমান্ডে রয়েছে।
প্রসঙ্গত, নিহত নুসরাত জাহান রাফি সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসার আলিমের পরীক্ষার্থী ছিলেন। ওই মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ্দৌলার বিরুদ্ধে নুসরাতকে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ ওঠে। নুসরাতের মা শিরিন আক্তার বাদী হয়ে ২৭ মার্চ সোনাগাজী থানায় মামলা দায়ের করেন। এরপর অধ্যক্ষকে গ্রেফতার করে পুলিশ। মামলা তুলে নিতে বিভিন্নভাবে নুসরাতের পরিবারকে হুমকি দেওয়া হচ্ছিল। ৬ এপ্রিল সকাল ৯টার দিকে আলিম পর্যায়ের আরবি প্রথমপত্রের পরীক্ষা দিতে সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদ্রাসা কেন্দ্রে যান নুসরাত। এসময় তাকে কৌশলে একটি বহুতল ভবনে ডেকে নিয়ে যায় অধ্যক্ষের ভাগ্নি পপি। সেখানে তার গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন দেওয়া হয়। ১০ এপ্রিল রাত সাড়ে ৯টায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে মারা যান নুসরাত।