X
সোমবার, ০৬ মে ২০২৪
২৩ বৈশাখ ১৪৩১

বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে তমব্রু সীমান্তের শূন্যরেখার রোহিঙ্গা শিবির

টেকনাফ (কক্সবাজার) প্রতিনিধি
০৫ জুলাই ২০১৯, ০৯:২৭আপডেট : ০৫ জুলাই ২০১৯, ১০:২৪

পানিতে তলিয়ে গেছে কোনারপাড়া শূণ্যরেখায় অবস্থিত রোহিঙ্গা শিবির ভারী বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের তুমব্রু খাল ঘেঁষা কোনারপাড়া শূন্যরেখায় (নো-ম্যানস ল্যান্ড) আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা শিবির পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে ক্যাম্পের এক হাজার পরিবার আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছেন। সেখানে সংকট দেখা দিয়েছে খাবার পানি ও টয়লেট। জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার (ইউএনএইসচিআর) প্রাথমিক হিসাব অনুযায়ী, সেখানে প্রায় এক হাজার তিনশ’ রোহিঙ্গা পরিবারের নারী-পুরুষ ও শিশু অবস্থান করছেন।
স্থানীয়দের বরাত দিয়ে বান্দরবান প্রতিনিধি জানিয়েছেন, বর্তমানে বৃ‌ষ্টি ক‌মে যাওয়ায় পা‌নি সর‌তে শুরু ক‌রে‌ছে। এ ব্যাপা‌রে নাইক্ষ্যংছ‌ড়ি উপ‌জেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সা‌দিয়া আফ‌রিন ক‌চি ব‌লেন, যেকোনও ধর‌নের দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রশাসন প্রস্তুত র‌য়ে‌ছে। কক্সবাজার আবহাওয়া অধিদফতরের সহকারী আবহাওয়াবিদ আব্দুর রহমান জানান, গত বুধবার (৩ জুলাই) থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় ৫৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে কক্সবাজারে। চলতি বর্ষা মৌসুমের শুরু থেকে এটিই সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত। 
২০১৭ সালে ২৪ আগস্টের পরে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসার সময় তারা সেখানে আটকা পড়েন। সম্প্রতি মিয়ানমার কাঁটাতারের একটি ব্রিজ নির্মাণ করায় বৃষ্টির পানিতে সেখানে সহজে চলাচল করা সম্ভব হচ্ছে না। নলকূপ, টয়লেটসহ রোহিঙ্গা শিবিরটি পানিতে ডুবে আছে। শূন্যরেখার উত্তর দিকে ছোট একটি খাল প্রবাহিত যার একপাশে বাংলাদেশ, অন্যপাশে মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশ। কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে শূন্যরেখাকে আলাদা করেছে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ।
শূন্যরেখার বাসিন্দারা জানান, এখানে খাদ্য সহায়তা মিললেও তারা বিশুদ্ধ পানি ও টয়লেট সংকটে ভুগছেন। এখানে তারা যে ব্লকে থাকছেন সেখানে এক হাজার পরিবারের জন্য মাত্র একটি নলকূপ, আর পায়খানা রয়েছে তিনটি।
প্রায় দুই বছর ধরে তুমব্রু শূন্যরেখায় বসবাস করা ওমর সুলতান বলেন, ‘এতোদিন দু’ দেশের মাঝখানে বন্দি জীবনে বসবাস করে আসছি। কিন্তু এখন এখানে থাকা মুশকিল। কারণ ভারী বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে পুরো শিবিরটি পানিতে ডুবে আছে। এখানে আর ভালো লাগে না। তিনি বলেন, নিজের দেশে আমরা মানসম্মান নিয়ে ছিলাম। কিন্তু এখন অনেক কষ্টের জীবনযাপন করছি। আমরা জন্মভূমিতে ফেরার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে ইনসাফ চাই, জাস্টিস চাই।’
রোহিঙ্গা শিবিরে হাঁটু পানি তুমব্রু শূন্যরেখা রোহিঙ্গা শিবিরের চেয়ারম্যান দিল মোহাম্মদ জানান, ভারী বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের গোটা আশ্রয় শিবির কোমর সমান পানিতে তলিয়ে গেছে। নিচু এলাকার ঘরবাড়ি একেবারে ডুবে যাওয়ায় সেখানে বসবাস করা মানুষ আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছেন। মিয়ানমার নতুন করে কাঁটাতারের ব্রিজ নির্মাণের কারণে পুরো শিবিরটি পানির নিচে তলিয়ে গেছে। এখানকার আশ্রিত রোহিঙ্গারা এখন খুবই কষ্টের মধ্যে রয়েছে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশের শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) মোহাম্মদ আবুল কালাম বলেন, ‘দুই দিন ধরে ভারী বৃষ্টিপাত হওয়ায় শূন্যরেখায় আশ্রিত রোহিঙ্গা শিবির পানিতে ডুবে গেছে। সেখানকার খোজঁখবর নেওয়া হচ্ছে।’ তবে মিয়ানমার কাঁটাতারের ব্রিজ নির্মাণের কারণে শিবিরের এই অবস্থা বলে জানান রোহিঙ্গা নেতারা।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলীর নেতৃত্বে ১৬ সদস্যের প্রতিনিধি দল মিয়ানমার সফরের সময় গত ১০ আগস্ট দেশটির পক্ষ থেকে শূন্যরেখায় ত্রাণ বন্ধের প্রস্তাব দেওয়া হয়। মিয়ানমার সেখানে অবস্থানরত লোকজনকে দেশটির মানবিক সংস্থার মাধ্যমে ত্রাণ বিতরণ করার প্রস্তাব দেয়। বাংলাদেশ এই প্রস্তাব মেনে নিলেও শূন্যরেখায় অবস্থানরত রোহিঙ্গারা এতে আপত্তি জানায়। এর আগে বাংলাদেশের সঙ্গে এক বৈঠকে মিয়ানমার নিঃশর্তভাবে শূন্যরেখায় আটকে থাকা এই রোহিঙ্গাদের উত্তর রাখাইনে ফিরিয়ে নিতে রাজি হয়েছিল। বৈঠকের একদিন পরই মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় দৈনিক ‘দ্য গ্লোবাল নিউ লাইট অব মিয়ানমার’ এ কথা জানায়। সেই উদ্যোগও কার্যকর হয়নি।

আরও পড়ুন: ভারী বৃষ্টিতে পাহাড় ধসের ঝুঁকিতে রোহিঙ্গারা

 

/ওআর/
সম্পর্কিত
১২ ঘণ্টার মাথায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আরেক যুবককে হত্যা
রোহিঙ্গা ক্যাম্পে যুবককে হত্যা
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে থাইল্যান্ড সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে: প্রধানমন্ত্রী
সর্বশেষ খবর
নারায়ণগঞ্জে চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের ওপর হামলার অভিযোগ, আহত ৩
নারায়ণগঞ্জে চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের ওপর হামলার অভিযোগ, আহত ৩
সুন্দরবনে আগুন ছড়ানো রুখতে দেওয়া হয়েছে বেরিকেট
সুন্দরবনে আগুন ছড়ানো রুখতে দেওয়া হয়েছে বেরিকেট
এই ৬ বীজ নিয়মিত খেলে সুস্থ থাকতে পারবেন দীর্ঘদিন
এই ৬ বীজ নিয়মিত খেলে সুস্থ থাকতে পারবেন দীর্ঘদিন
লখনউকে বড় হারের লজ্জা দিয়ে শীর্ষে কলকাতা
লখনউকে বড় হারের লজ্জা দিয়ে শীর্ষে কলকাতা
সর্বাধিক পঠিত
‘টর্চার সেলে’ নিজ হাতে অপারেশনের নামে পৈশাচিক আনন্দ পেতো মিল্টন, জানালেন হারুন
‘টর্চার সেলে’ নিজ হাতে অপারেশনের নামে পৈশাচিক আনন্দ পেতো মিল্টন, জানালেন হারুন
চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা নিয়ে যা বললেন জনপ্রশাসনমন্ত্রী
চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা নিয়ে যা বললেন জনপ্রশাসনমন্ত্রী
নিজেদের তৈরি ভেহিকেল পেরুকে উপহার দিলো সেনাবাহিনী
নিজেদের তৈরি ভেহিকেল পেরুকে উপহার দিলো সেনাবাহিনী
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন বৃষ্টি হবে
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন বৃষ্টি হবে
সব জেনেও পুলিশকে কিছু জানাননি মিল্টনের স্ত্রী
জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ডিবি হারুনসব জেনেও পুলিশকে কিছু জানাননি মিল্টনের স্ত্রী