X
বৃহস্পতিবার, ০৩ জুলাই ২০২৫
১৯ আষাঢ় ১৪৩২

পুরনোদের সহায়তায় ছড়িয়ে পড়ছে নতুন রোহিঙ্গারা

হুমায়ুন মাসুদ, চট্টগ্রাম
২৪ আগস্ট ২০১৯, ২২:২১আপডেট : ২৪ আগস্ট ২০১৯, ২২:৫৯

পটিয়ায় আটক হওয়া রোহিঙ্গারা

এ বছরের জুলাই মাসের শেষ দিকে চট্টগ্রামের পটিয়া থেকে ছয় শিশুসহ ৪২ জন রোহিঙ্গা নারী-পুরুষকে আটক করে পুলিশ; যারা পটিয়ার হাইদগাঁও ইউনিয়নে পাহাড়ের পাদদেশে বসতি গড়ে তুলেছিল। পুলিশ জানিয়েছে, হাইদগাঁও ইউনিয়নে আগে থেকে বসবাসকারী এক রোহিঙ্গা পরিবারের সহায়তায় নতুন রোহিঙ্গারা এই এলাকায় এসেছিল। পরে খবর পেয়ে তাদের আটক করে টেকনাফ রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পাঠানো হয়।

এ ব্যাপারে জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (দক্ষিণ) আফরুজুল হক টুটুল বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘অনেক আগে থেকেই রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে আসছে। ১০-১৫ বছর আগে যারা এদেশে এসেছিল, তাদের অনেকে এখন চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলায় বসতি গড়ে তুলেছে। এখন মাঝে মধ্যে যেসব রোহিঙ্গাকে আটক করা হয়, তারা মূলত পুরনো রোহিঙ্গাদের সহায়তায় ছড়িয়ে পড়ছে। শুধু তাই নয়, স্থানীয় দালালদের মাধ্যমে জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করে নতুন রোহিঙ্গারা বাংলাদেশি নাগরিক হওয়ারও চেষ্টা করছে।’ তিনি বলেন, ‘পটিয়া থেকে আটক ৪২ জন রোহিঙ্গাও এক পুরাতন রোহিঙ্গার মাধ্যমে ওই এলাকায় বসতি গড়েছিল।’

শুধু পটিয়ায় আটক হওয়া ৪২ জন রোহিঙ্গাই নয়, বর্তমানে অনেক রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ পুরনো রোহিঙ্গাদের মাধ্যমে চট্টগ্রাম নগরী ও বিভিন্ন উপজেলায় আশ্রয় নিচ্ছে বলে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে। সূত্রমতে, স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর অফিস ও ইউনিয়ন চেয়ারম্যান-মেম্বারের মাধ্যমে জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করে বাংলাদেশের নাগরিক হওয়ার চেষ্টা করছে নতুন করে ছড়িয়ে পড়া রোহিঙ্গারা। আবার কেউ কেউ পাসপোর্ট বানিয়ে বিদেশে যাওয়ারও চেষ্টা করছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত তিন মাসে চট্টগ্রামে পাসপোর্ট করতে গিয়ে কমপক্ষে ২৫ জন রোহিঙ্গা ধরা পড়েছে। স্থানীয় দালালদের সহযোগিতায় ভুয়া কাগজপত্র দিয়ে জন্মসনদ ও জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করেছিল তারা। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) চট্টগ্রাম নগরীর ডবলমুরিং থানার মুনসুরাবাদ এলাকায় অবস্থিত বিভাগীয় পাসপোর্ট অফিসে পাসপোর্ট তৈরি করতে এসে ধরা পড়ে সুমাইয়া আক্তার নামের এক রোহিঙ্গা নারী ও রেজাউল হক নামের এক রোহিঙ্গা যুবক। পরে দুইজনকে ডবলমুরিং থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। হাটহাজারীর পশ্চিম ধলই এনায়েতপুর এলাকার ইলিয়াছ নামের এক ব্যক্তিকে পিতা এবং রহিমা বেগম নামের এক নারীকে মা পরিচয় দিয়ে সুমাইয়া পাসপোর্ট তৈরির করার চেষ্টা করেছিল। আর তাকে এ কাজে সহযোগিতা করেছিল ৯ বছর আগে বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গা যুবক রেজাউল হক। ভুয়া পরিচয় ব্যবহার করে রেজাউল নিজেও পাসপোর্ট তৈরি করেছিল।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে নগর পুলিশের সহকারী কমিশনার (ডবলমুরিং জোন) আশিকুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘পাসপোর্ট অফিস থেকে আটক করার পর তাদের (সুমাইয়া ও রেজাউল) থানায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। সুমাইয়া আক্তার জানায়, নগরীর ২৮ নম্বর পাঠানটুলী ওয়ার্ড কাউন্সিলর অফিস থেকে চার হাজার টাকার বিনিময়ে সে কমিশনার সার্টিফিকেট নিয়েছিল। এরপর পাসপোর্ট অফিসের দালাল সোলেমানের মাধ্যমে পাসপোর্ট তৈরি করতে দিয়েছিল।’

তিনি আরও বলেন, ‘জিজ্ঞাসাবাদে রেজাউল হক জানিয়েছে, সে ৯ বছর আগে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে আসে এবং দুই বছর আগে নগরীর পাঠানটুলী ওয়ার্ড এলাকায় পরিবার নিয়ে বসবাস শুরু করে। কম্পিউটার শিখে নগরীর খাতুনগঞ্জ এলাকায় সে একটি দোকানে কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে কাজও করছিল। রমজানের ঈদের সময় সে নিজেও পাসপোর্ট তৈরি করে।’

নগরীর মুনসুরাবাদ ও পাঁচলাইশ পাসপোর্ট অফিসে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ভুয়া জন্মনিবন্ধন সনদ ও জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে পাসপোর্ট করতে গিয়ে গত তিন মাসে ১০ জন রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ ধরা পড়েছে। এর মধ্যে কর্ণফুলী উপজেলার চরপাথরঘাটার আজিমপাড়া এলাকার ঠিকানা ব্যবহার করে থাইংখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাসিন্দা মোস্তাকিমা, বাঁশখালীর মনকিচরের ঠিকানা ব্যবহার করে কুতুপালং ক্যাম্পের তাসলিমা আক্তার, চন্দনাইশ গাছবাড়িয়ার ঠিকানায় বালুখালী ক্যাম্পের হীরা আক্তার, দোহাজারীর ঠিকানায় বালুখালী ক্যাম্পের সুরা বেগম পাসপোর্ট তৈরি করতে আসে। এছাড়া, সাতকানিয়ার আমিলাইশের ঠিকানায় থাইংখালী ক্যাম্পের শাহেনা আক্তার, হালিশহর হাউজিং এস্টেটের ঠিকানায় একই ক্যাম্পের মোহাম্মদ হারেস, লোহাগাড়া চুনতির ঠিকানায় কুতুপালং ক্যাম্পের মোহাম্মদ সাকের, চান্দগাঁও ঠিকানায় বালুখালী ক্যাম্পের আবদুল্লাহ, পটিয়ার কুসুমপুরার ঠিকানায় কুতুপালং ক্যাম্পের মোহাম্মদ আমিন, সীলপাড়ার ঠিকানায় মোহাম্মদ হেলাল, লোহাগাড়ার মাস্টারপাড়ার ঠিকানায় থাইংখালীর মোহাম্মদ আয়াস পাসপোর্ট করতে এসেছিল। তারা সবাই পুরনো রোহিঙ্গাদের মাধ্যমে বিভিন্ন এলাকায় এসে দালালদের টাকা দিয়ে জন্মসনদ ও জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করেছিল।

২০১৭ সালের আগস্ট মাসে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে আসা শুরু করার পর এ পর্যন্ত চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলা থেকে ৬২৯ জন রোহিঙ্গাকে ক্যাম্পে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার নূরে আলম মিনা। বাংলা ট্রিবিউনকে তিনি বলেন, ‘আটক হওয়া ৬২৯ জন রোহিঙ্গার বেশিরভাগই বিদেশে পাড়ি দিতে পাসপোর্ট তৈরি করতে আসে। অনেকে আবার মাদক পাচার করতে গিয়ে ধরা পড়ে।’ তিনি আরও বলেন, ‘স্থানীয় দালালরা রোহিঙ্গাদের টাকার বিনিময়ে থাকার ব্যবস্থা করছে, পাসপোর্ট তৈরি করে দিচ্ছে, তাদের জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করে দিচ্ছে। স্থানীয়রা সচেতন না হলে পুলিশের পক্ষে রোহিঙ্গাদের ছড়িয়ে পড়া রোধ করা সম্ভব নয়।’

রোহিঙ্গারা কীভাবে জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করছে, জানতে চাইলে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মুনীর হোসাইন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমাদের কাছে তাদের কোনও তথ্য থাকে না। অথচ তারা কীভাবে জাতীয় পরিচয়পত্র সংগ্রহ করে ফেলে। এটা টেকনিক্যাল কোনও বিষয় হতে পারে। আমরা বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি। তারা বিষয়টি খতিয়ে দেখছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘কয়েকদিন আগে স্মার্টকার্ড সংগ্রহ করতে এলে একজনকে আমরা আটক করি। আরও ৪-৫ রোহিঙ্গা জাতীয় পরিচয়পত্র নিয়ে থাকতে পারে—এমন তথ্য আমাদের কাছে আছে। তবে আমরা এখনও তাদের শনাক্ত করতে পারিনি।’

/এমএ/এমএমজে/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
আইজিপি’র সঙ্গে ইউনেস্কো প্রতিনিধির সাক্ষাৎ
আইজিপি’র সঙ্গে ইউনেস্কো প্রতিনিধির সাক্ষাৎ
পাঁচ দিন বন্ধ থাকবে এনসিসি ব্যাংক
পাঁচ দিন বন্ধ থাকবে এনসিসি ব্যাংক
কঠোর নিরাপত্তায় কাশ্মীরে অমরণাথ তীর্থযাত্রা শুরু
কঠোর নিরাপত্তায় কাশ্মীরে অমরণাথ তীর্থযাত্রা শুরু
আরও ৮ জনের করোনা শনাক্ত
আরও ৮ জনের করোনা শনাক্ত
সর্বাধিক পঠিত
নবম পে-কমিশন গঠনের কার্যক্রম শুরুর আশ্বাস অর্থ উপদেষ্টার
সংযুক্ত কর্মচারী প‌রিষ‌দের জরু‌রি সভানবম পে-কমিশন গঠনের কার্যক্রম শুরুর আশ্বাস অর্থ উপদেষ্টার
বরখাস্ত হলেন সেই ম্যাজিস্ট্রেট তাবাসসুম ঊর্মি
বরখাস্ত হলেন সেই ম্যাজিস্ট্রেট তাবাসসুম ঊর্মি
অনুদান কমিটি থেকে অভিনেত্রীর অব্যাহতি!
অনুদান কমিটি থেকে অভিনেত্রীর অব্যাহতি!
মুরাদনগরে দুই সন্তানসহ মাকে পিটিয়ে হত্যা
মুরাদনগরে দুই সন্তানসহ মাকে পিটিয়ে হত্যা
‘দেশের ৩২টি বিমা কোম্পানি উচ্চ ঝুঁকিতে’
‘দেশের ৩২টি বিমা কোম্পানি উচ্চ ঝুঁকিতে’