X
মঙ্গলবার, ০৭ মে ২০২৪
২৪ বৈশাখ ১৪৩১
সিনহা হত্যার এক বছর

সাক্ষী হারানোর ‘শঙ্কা’ মেজর সিনহার পরিবারের

আবদুল আজিজ, কক্সবাজার
৩১ জুলাই ২০২১, ১৮:০৮আপডেট : ৩১ জুলাই ২০২১, ১৯:১৭

কক্সবাজারের টেকনাফের বাহারছড়া শামলাপুর তদন্তকেন্দ্রে পুলিশের গুলিতে সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যার এক বছর পূর্ণ হলো আজ। এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় করা মামলার কার্যক্রম অনেকদূর এগিয়েছে। তবে বর্তমানে লকডাউনের কবলে পড়ে আদালতের কার্যক্রম বন্ধ থাকায় মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ থেমে আছে। কিন্তু এখনও নেভেনি মেজর সিনহা মো. রাশেদ খানের পরিবারের সদস্যদের মনের আগুন। প্রতিনিয়ত সেই আগুনে পুড়ছেন সিনহার মা, বোন ও পরিবারের সদস্যরা।

সিনহার স্মৃতি মনে করে প্রতিনিয়তই কান্নায় ভেঙে পড়ছেন তার মা। তাই যতদ্রুত সম্ভব মামলার কার্যক্রম শেষ করে প্রদীপ কুমার দাশ ও লিয়াকত আলীসহ মামলার অন্য আসামিদের শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছে পরিবার। ‘অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত হলে দেশে কেউ আর এমন অপরাধ করার সাহস পাবে না’ বলে মন্তব্য করেছেন মেজর সিনহার বড় বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস।

বাংলা ট্রিবিউনকে তিনি বলেন, ‘মামলার অগ্রগতি চার্জশিট ও সাক্ষ্যগ্রহণের পর্যায়ে পৌঁছানো পর্যন্ত ঠিক ছিল। কিন্তু লকডাউন মামলার কার্যক্রম পিছিয়ে দিয়েছে। এভাবে যদি মামলার কার্যক্রম আরও দীর্ঘায়িত হয়, তাহলে আমার মনে হয় সাক্ষীদের ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়বে। কারণ সাক্ষীরা কে কোথায় থাকবে, কোথায় চলে যাবে- এর কোনও ঠিক নেই। লকডাউনটা শেষ হলে আজ কিংবা একমাস পরে দ্রুত সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ করে বিচারকাজ সম্পন্ন করে আসামিদের শাস্তি নিশ্চিত করা হোক। সুষ্ঠু বিচার ও সঠিক রায়ের মাধ্যমে ওসি প্রদীপ ও লিয়াকতদের যেন মৃত্যুদণ্ড হয়, এটাই আমাদের প্রত্যাশা।’

মামলা চার্জশিটের বিষয়ে জানতে চাইলে শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস বলেন, ‘চার্জশিট নিয়ে এই মুহূর্তে বলার কিছুই নেই। তবে দ্রুত সময়ের মধ্যে জমা দেওয়ায় তদন্তকারী সংস্থাকে ধন্যবাদ জানাই। যেদিন মামলার রায় হবে এবং আসামিদের মৃত্যুদণ্ড হবে, সেদিনই সন্তুষ্টির কথা বলতে পারব।’

গ্রেফতার বরখাস্ত হওয়া টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ দাশ

প্রদীপের জামিন আবেদনের বিষয়ে মেজর সিনহার বড় বোন বলেন, ‘দেশের যেকোনও নাগরিক আদালতের আশ্রয় নিতে পারেন। কিন্তু আমার অবাক লাগে, ওসি প্রদীপ কুমার দাশ টেকনাফে থাকাকালীন ২০০/২৫০ লোককে গুলি করে মেরেছে। তারা যে সবাই ইয়াবা কারবারি ছিল তা নয়। এর মধ্যে তাকে চাঁদা না দেওয়ায় অনেকেই হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন। ধরে নিলাম, সবাই ইয়াবা কারবারি। তাদের কি আইনের আশ্রয় নেওয়ার অধিকার নেই? তাদের কি ধরে এনে বিচারের মুখোমুখি করা যেত না? এটি তো মানবাধিকারের লঙ্ঘন। ওসি প্রদীপ এত মানুষ হত্যা করার পর এখন যদি সে আইনের আশ্রয় চাওয়ার জন্য আদালতে যায়, তখন কিছুই বলার থাকে না।’

বাদী পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ মোস্তফা বলেন, ‘আলোচিত সিনহা হত্যা মামলাটি এখন সাক্ষ্যগ্রহণের পর্যায়ে রয়েছে। লকডাউনের কারণে তা থমকে আছে। সাক্ষ্যগ্রহণ হয়ে গেলে রায় হয়ে যাবে। এটি সম্পূর্ণ আদালতের ওপর নির্ভর করছে। গত ২৬, ২৭ ও ২৮ জুলাই মামলার ৮৩ জন সাক্ষীর মধ্যে ১০ জনের সাক্ষগ্রহণের দিন ধার্য ছিল। কিন্তু লকডাউন এতে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।’

মামলার ভবিষ্যৎ সম্পর্কে জানতে চাইলে কক্সবাজারের প্রবীণ এ আইনজীবী বলেন, ‘দেশের বিচার ব্যবস্থা সম্পূর্ণ নির্ভর করে সাক্ষীদের ওপর। তাই যত দ্রুত সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হবে, তত দ্রুত মামলার রায় হবে।’

উল্লেখ্য, ২০২০ সালের ৩১ জুলাই রাত ৯টার দিকে কক্সবাজারের টেকনাফের বাহারছড়া শামলাপুর তদন্তকেন্দ্রে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সেনাবাহিনীর সাবেক মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান। এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (উন্নয়ন) মোহাম্মদ মিজানুর রহমানকে আহ্বায়ক করে চার সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছিল। কমিটি সরেজমিনে তদন্ত করে ঘটনার কারণ ও উৎস অনুসন্ধান করে সুপারিশসহ প্রতিবেদন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে জমাও দিয়েছিল।

সহকর্মীদের সঙ্গে মেজর সিনহা

হত্যাকাণ্ডের পাঁচ দিনের মাথায় অর্থাৎ ২০২০ সালের ৫ আগস্ট মেজর সিনহার বড় বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস বাদী হয়ে টেকনাফ থানার বরখাস্ত হওয়া ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ও শামলাপুর তদন্তকেন্দ্রের বরখাস্ত হওয়া এসআই লিয়াকত আলীসহ ৯ জনকে আসামি করে কক্সবাজার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলাটি তদন্তে কক্সবাজারের র‌্যাব-১৫-কে নির্দেশ দেন আদালত।

২০২০ সালের ১৩ ডিসেম্বর প্রদীপ কুমার দাশ, লিয়াকত আলীসহ ১৫ জনকে অভিযুক্ত করে এবং ৮৩ জনকে সাক্ষী উল্লেখ করে মামলার চার্জশিট (অভিযোগপত্র) দাখিল করেন র‌্যাব-১৫ এর সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মোহাম্মদ খায়রুল ইসলাম। সেখানে সিনহা হত্যাকাণ্ডকে একটি ‘পরিকল্পিত ঘটনা’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়। তাদের মধ্যে ১২ জন নিজের দোষ স্বীকার করে আদালতের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন। তবে মামলার অন্যতম আসামি প্রদীপ কুমার দাশের সাক্ষ্যগ্রহণ এখনও হয়নি। এ মামলার সব আসামিকেই গ্রেফতার করা হয়েছে।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ও কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পিপি (পাবলিক প্রসিকিউটর) অ্যাডভোকেট ফরিদুল আলম জানান, লকডাউনের কারণে আলোচিত মেজর সিনহা হত্যা মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ হয়নি। আদালতের স্বাভাবিক কার্যক্রম চললে মামলাটির সাক্ষ্যগ্রহণসহ অন্যান্য আইনি কার্যক্রমও স্বাভাবিক নিয়মে চলবে। বিচারকাজ শুরুর অন্যান্য কাজ এগিয়ে রয়েছে। আদালত খুললে এই মামলার কাজও শুরু হবে।

/এফআর/
সম্পর্কিত
সিনহা হত্যা মামলার রায় দ্রুত কার্যকরের দাবি পরিবারের
সিনহা হত্যাকাণ্ডের ৩ বছর, নেই বললেই চলে ‘বন্দুকযুদ্ধ’
হত্যা মামলায় সাক্ষ্য দিলেন মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত লিয়াকত
সর্বশেষ খবর
দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় কলকাতায় নামতেই পারলো না কেকেআরের বিমান!
দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় কলকাতায় নামতেই পারলো না কেকেআরের বিমান!
রাজধানীতে মাদকদ্রব্যসহ একদিনে গ্রেফতার ২৪
রাজধানীতে মাদকদ্রব্যসহ একদিনে গ্রেফতার ২৪
উপজেলা নির্বাচনে প্রথম ধাপে ৪১৮ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন
উপজেলা নির্বাচনে প্রথম ধাপে ৪১৮ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন
দক্ষিণ আফ্রিকায় ভয়াবহ ভবন ধস, আটকা পড়েছে অনেকে
দক্ষিণ আফ্রিকায় ভয়াবহ ভবন ধস, আটকা পড়েছে অনেকে
সর্বাধিক পঠিত
মিল্টনের আশ্রমের দায়িত্ব যার হাতে গেলো
মিল্টনের আশ্রমের দায়িত্ব যার হাতে গেলো
চাসিভ ইয়ার ঘিরে হাজার হাজার সেনা জড়ো করছে রাশিয়া
চাসিভ ইয়ার ঘিরে হাজার হাজার সেনা জড়ো করছে রাশিয়া
যে শিশুকে পাচারের অভিযোগে মিল্টনের বিরুদ্ধে মামলা
যে শিশুকে পাচারের অভিযোগে মিল্টনের বিরুদ্ধে মামলা
যেভাবে অপহরণকারীদের কাছ থেকে পালিয়ে এলো স্কুলছাত্র
যেভাবে অপহরণকারীদের কাছ থেকে পালিয়ে এলো স্কুলছাত্র
ছাত্রলীগ সহসভাপতি সাদ্দামের বছরে আয় ২২ লাখ, ব্যাংকে ৩২ লাখ, উপহারের স্বর্ণ ৩০ ভরি
হরিরামপুর উপজেলা নির্বাচনছাত্রলীগ সহসভাপতি সাদ্দামের বছরে আয় ২২ লাখ, ব্যাংকে ৩২ লাখ, উপহারের স্বর্ণ ৩০ ভরি