X
মঙ্গলবার, ০৭ মে ২০২৪
২৩ বৈশাখ ১৪৩১

‘২ সন্তানের মৃত্যু নিশ্চিতের পর গলায় ফাঁস দেন মা’

হুমায়ুন মাসুদ, চট্টগ্রাম
১৫ অক্টোবর ২০২১, ১৯:৫৮আপডেট : ১৫ অক্টোবর ২০২১, ১৯:৫৮

মেয়ের লাশ পড়ে আছে খাটে। ফ্যানের সঙ্গে ঝুলছে আড়াই বছর বয়সী ছেলে। একই ফ্যানের সঙ্গে রশিতে ঝুলছে মা সুমিতা খাতুনের লাশও। ঘটনাটি ঘটেছে চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ থানাধীন মোহাম্মদপুর এলাকার ইসমাইল কলোনির পাশের এসএস হাউজিংয়ে।

ওই হাউজিংয়ের আটতলা ভবনের চতুর্থ তলার একটি ফ্ল্যাট থেকে শুক্রবার (১৫ অক্টোবর) সুমিতা খাতুন ও তার ছেলে-মেয়ের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। প্রাথমিকভাবে পুলিশের ধারণা, মেয়েকে শ্বাসরোধ করে এবং ছেলেকে ফ্যানের সঙ্গে ঝুলিয়ে মৃত্যু নিশ্চিতের পর সুমিতা ফ্যানের সঙ্গে ফাঁস দেন সুমিতা খাতুন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পাঁচলাইশ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সাদেকুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘রাত ৯টার পর থেকে বাসার দরজা ভেতর থেকে বন্ধ থাকায় সাড়ে ৩টার দিকে থানা পুলিশকে খবর দেয় সুমিতার স্বামী। খবর পেয়ে ভোর ৪টার দিকে ঘটনাস্থলে যায় পুলিশ। কিন্তু ভবনের দারোয়ান গেটে তালা ঝুলিয়ে ঘুমিয়ে পড়ায় তখন বাসায় ঢোকা সম্ভব হয়নি। সকাল সাড়ে ৭টার দিকে আমরা বাসায় প্রবেশ করি। ভেতর থেকে বন্ধ থাকায় ফ্ল্যাটের দরজা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করতে হয়। বাসার ভেতরে ঢুকে যেই কক্ষে তিনটি লাশ পাওয়া যায়, ওই কক্ষের দরজাও লক ছিল। লক ভেঙে ভেতরে ঢুকে দেখি, খাটের ওপর মেয়ের লাশ পড়ে আছে। একই ফ্যানের সঙ্গে ওড়না প্যাঁচানো অবস্থায় ছেলে ও রশিতে সুমিতা খাতুনের লাশ ঝুলছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘যেহেতু বাসা ভেতর থেকে বন্ধ ছিল, তাই প্রাথমিকভাবে আমরা ধারণা করছি, ছেলে এবং মেয়ের মৃত্যু নিশ্চিত করে সুমিতা গলায় ফাঁস দিয়ে থাকতে পারেন। মেয়েটিকে শ্বাসরোধ করে মারা হয়েছে। এরপর ছেলেকে ফ্যানের সঙ্গে ঝুলিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়েছে।’

সুমিতা খাতুন সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ থানার পাঙ্গাশিয়া এলাকার সোহেল রানার স্ত্রী। নগরের মুরাদপুর এলাকায় সোহেলের ইউনানি ওষুধের দোকান আছে। বিয়ের পর থেকে পরিবার নিয়ে চট্টগ্রাম নগরে বসবাস করছেন। দুই বছর আগে তিনি এসএস হাউজিংয়ের ওই ফ্ল্যাটে ভাড়ায় ওঠেন। শুক্রবার (১৫ অক্টোবর) সকালে লাশগুলো উদ্ধার করা হয়। সুরতহাল শেষে দুপুর ১২টায় লাশ চট্টগ্রাম মেডিক্যালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।

সোহেল রানার দুলাভাই নজরুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘প্রতিদিনের মতো বৃহস্পতিবার দুপুরে ভাত খেয়ে ৩টার দিকে দোকানে যায় সোহেল। এরপর রাত ৯টায় বাসায় ফিরে দরজা ভেতর থেকে বন্ধ পায়। আধাঘণ্টার মতো চেষ্টা করেও ভেতরে প্রবেশ করতে না পেরে চলে যায়। রাত ১১টার দিকে এসে আবারও চেষ্টা করে। কিন্তু তখনও বাসায় ঢুকতে না পেরে আবারও ফিরে যায়। ওই সময় সোহেল আমার ভায়রা ভাইকে কল করে বিষয়টি অবহিত করে। পরে উনি আমাদের সবাইকে জানিয়েছেন। খবর পেয়ে সকালে তারা এই বাসায় আসেন।’

তিনি দাবি করেন, ‘১০ বছর আগে সোহেলের সঙ্গে সুমিতার বিয়ে হয়। এরপর থেকে তারা চট্টগ্রামে বসবাস করছেন। কিন্তু গত ১০ বছরে তাদের কোনও মনোমালিন্য হয়নি।’

একই কথা জানিয়েছেন ভবনের দারোয়ান ফোরকান। বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘রাত সাড়ে ১১টার দিকে উনি (সোহেল) বাসায় ঢুকতে না পেরে আমার কাছে এসে বাসার চাবি চেয়েছেন। পরে চাবি নিয়ে আমিসহ গিয়ে অনেকক্ষণ চেষ্টা করেও ভেতরে প্রবেশ করতে পারিনি। ভেতর থেকে ছিটকিনি লাগানো থাকায় ভেতরে প্রবেশ করতে পারেননি। পরে তিনি ফিরে যান। আমি রুমে এসে ঘুমিয়ে পড়ি। এরপর সকালে পুলিশ এসে দরজা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে।’

ওই বাসার কাজের বুয়া শাহানা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বেতন বাড়িয়ে দিতে বলেছিলাম। না দেওয়ায় গত মাসের ২৭ তারিখ থেকে কাজ করিনি। কল করায় গতকাল ১১টার দিকে আমি বাসায় এসেছি। তখন আমাকে আজ থেকে কাজ করতে বলেছিলেন। আজ কাজ করতেই এসেছি।’

কাজ করার সময় কখনও সুমিতার সঙ্গে তার স্বামীর ঝগড়া হয়েছে কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি তো অল্প কিছু সময় কাজ করতাম। আমি যখন কাজ করতাম তখন বেশিরভাগ সময় ওনার স্বামী বাসায় থাকতেন না। কখনও ঝগড়াঝাঁটি হতে দেখিনি।’

পাশের ফ্ল্যাটের বাসিন্দা রফিক উদ্দিন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আসলে আমাদের পাশের ফ্ল্যাটে থাকলেও তাদের সঙ্গে আমাদের খুব একটা যোগাযোগ ছিল না। আমার স্ত্রী বলেছেন, কাল রাত ৯টার দিকে দরজা পেটানোর আওয়াজ শুনেছে।’

উপরের তলার একটি ফ্ল্যাটের বাসিন্দা আব্বাস আহমেদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘মাঝে মাঝে ওই ফ্ল্যাট থেকে ঝগড়ার আওয়াজ আসতো। গত ঈদের সময় বড় ধরনের ঝগড়া হয়েছে।’

তবে পুলিশ এখনও নিশ্চিত নয় কী কারণে সুমিতা আত্মহত্যা করেছেন। আত্মহত্যার কারণ জানতে সুমিতার স্বামীকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নগর পুলিশের সহকারী কমিশনার শহীদুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সুমিতার স্বামীকে জিজ্ঞাসাবাদে সে জানিয়েছে, আগের রাতে তাদের (স্বামী-স্ত্রী) মধ্যে ঝগড়া হয়। সোহেল মোবাইলে কোনও মেয়ের সঙ্গে কথা বলেছে- এমন অভিযোগে দুই জনের মধ্যে ঝগড়া হয়। এরপর ওই দিন দুই জন দুই রুমে থাকেন। পরে সোহেল তার শ্বশুরকে বিষয়টি জানালে মোবাইলে কথা বলে তিনি মিটমাট করে দেন। পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে সোহেল দোকানে চলে যায়। দুপুরে বিরিয়ানি নিয়ে বাসায় যায়। এরপর ৩টার দিকে বাসা থেকে বের হয়। পরে রাত ৯টার দিকে বাসায় গিয়ে দেখে, ভেতর থেকে দরজা বন্ধ।’

তিনি আরও বলেন, ‘সোহেলকে আটক করা হয়েছে। সুমিতার পরিবারের লোকজন আসছে। তারা এসে মামলা করলে তাকে গ্রেফতার দেখানো হবে।’

/এফআর/
সম্পর্কিত
বজ্রাঘাতে ৮ জেলায় ১০ জনের মৃত্যু
এক থানা থেকে দুই এসআই তিন এএসআই ও এক কনস্টেবলকে প্রত্যাহার
পুলিশ-সাংবাদিক-আইনজীবী স্টিকারের ছড়াছড়ি, ব্যবস্থা নিতে মাঠে নেমেছে পুলিশ
সর্বশেষ খবর
রৌমারীতে চেয়ারম্যান প্রার্থীর ওপর প্রতিপক্ষের হামলা
রৌমারীতে চেয়ারম্যান প্রার্থীর ওপর প্রতিপক্ষের হামলা
টেকনাফে ছাত্রলীগ নেতাকে কুপিয়ে হত্যা
টেকনাফে ছাত্রলীগ নেতাকে কুপিয়ে হত্যা
ঝড়ে গাছ ভেঙে পড়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক বন্ধ ছিল এক ঘণ্টা
ঝড়ে গাছ ভেঙে পড়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক বন্ধ ছিল এক ঘণ্টা
‘স্বাভাবিক পরিবেশে বাঁচতে প্রত্যেককে গাছ রোপণ করতে হবে’
‘স্বাভাবিক পরিবেশে বাঁচতে প্রত্যেককে গাছ রোপণ করতে হবে’
সর্বাধিক পঠিত
মিল্টনের আশ্রমের দায়িত্ব যার হাতে গেলো
মিল্টনের আশ্রমের দায়িত্ব যার হাতে গেলো
চাসিভ ইয়ার ঘিরে হাজার হাজার সেনা জড়ো করছে রাশিয়া
চাসিভ ইয়ার ঘিরে হাজার হাজার সেনা জড়ো করছে রাশিয়া
যেভাবে অপহরণকারীদের কাছ থেকে পালিয়ে এলো স্কুলছাত্র
যেভাবে অপহরণকারীদের কাছ থেকে পালিয়ে এলো স্কুলছাত্র
যে শিশুকে পাচারের অভিযোগে মিল্টনের বিরুদ্ধে মামলা
যে শিশুকে পাচারের অভিযোগে মিল্টনের বিরুদ্ধে মামলা
আজও ঝোড়ো হাওয়াসহ শিলাবৃষ্টির আভাস
আজও ঝোড়ো হাওয়াসহ শিলাবৃষ্টির আভাস