X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বাবুলের বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক জেনে যাওয়ায় মিতুকে হত্যা, ‌কিলিং মিশনে ৯ জন

নাসির উদ্দিন রকি, চট্টগ্রাম
২৪ আগস্ট ২০২২, ১৭:১১আপডেট : ২৪ আগস্ট ২০২২, ১৮:৪৫

চট্টগ্রামে চাঞ্চল্যকর মাহমুদা খানম মিতু হত্যার ঘটনায় পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) তদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। তদন্তে উঠে এসেছে, হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী ও অর্থ জোগানদাতা ছিলেন তার স্বামী সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তার। নিজের বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কের বিষয় জেনে যাওয়ায় বিশ্বস্ত সোর্সদের দিয়ে টাকার বিনিময়ে মিতুকে হত্যা করিয়েছিলেন। এই হত্যাকাণ্ডে মোট ৯ জন জড়িত। তাদের মধ্যে সরাসরি অংশ নেয় সাত জন।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও পিবিআই পরিদর্শক আবু জাফর মোহাম্মদ ওমর ফারুক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘মিতু হত্যা মামলার অভিযোগপত্র তৈরির কাজ সম্পন্ন হয়েছে। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মামলার সাক্ষ্যস্মারকে (এমওই) সই করেছেন। অভিযোগপত্র অনুমোদনের জন্য পিবিআই সদর দফতরে পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন পেলে তা আদালতে জমা দেওয়া হবে।’

এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তদন্ত সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, তদন্তে উঠে এসেছে, মিতু হত্যায় মূল পরিকল্পনাকারী ও অর্থ জোগানদাতা বাবুল আক্তার নিজেই। কিলিং মিশনের প্রধান ছিলেন তার বিশ্বস্ত সোর্স কামরুল ইসলাম শিকদার মুসা। হত্যায় ব্যবহৃত অস্ত্র সরবরাহ করেছিলেন আরেক সোর্স এহতেশামুল হক ওরফে হানিফুল হক ওরফে ভোলাইয়া। কিলিং মিশনে সরাসরি অংশ নেন কামরুল ইসলাম শিকদার মুসা, মোতালেব মিয়া ওয়াসিম, আনোয়ার হোসেন, খাইরুল ইসলাম কালু, শাহজাহান মিয়া, নুরুন্নবী ও রাশেদ।

আরও পড়ুন: মিতু হত্যার বর্ণনা দিলো ছেলে

তিনি আরও জানান, মিতুকে হত্যায় অংশ নেওয়া ছয় জনের মধ্যে তিন জন আগে থেকেই ঘটনাস্থলে ছিলেন। মোটরসাইকেল নিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন মুসাসহ তিন জন। মোটরসাইকেলের চালকের আসনে ছিলেন মুসা, মাঝে নুরুন্নবী এবং পেছনে ছিলেন ওয়াসিম। ওয়াসিমই মিতুকে গুলি করেন। দুটি গুলির মধ্যে একটি ‘মিস ফায়ার’ হয়। আরেকটি মিতুর শরীরে লাগে। এরপর নুরুন্নবী, রাশেদ ও কালু ছুরিকাঘাত করে মৃত্যু নিশ্চিত করেন। এ সময় মিতুর সঙ্গে তার ছেলে আখতার মাহমুদ মাহির ছিল। তাকে ধরে রেখে হত্যার নির্দেশনা দেন মুসা।

মিতু হত্যায় অংশ নেওয়া নুরুন্নবী ও রাশেদ পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়েছেন। এই মামলায় বর্তমানে কারাগারে আছেন চার জন। তারা হলেন—বাবুল আক্তার, মোতালেব মিয়া ওয়াসিম, আনোয়ার হোসেন ও শাহজাহান মিয়া। এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে কামরুল ইসলাম শিকদার মুসা ও খাইরুল ইসলাম কালু। জামিনে আছেন অস্ত্র সরবরাহকারী এহতেশামুল হক।

এদিকে মামলার তদন্তে উঠে এসেছে, আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থায় কর্মরত গায়ত্রী অমর সিং নামে এক বিদেশি নারীর সঙ্গে বাবুল আক্তারের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। এই সম্পর্কের কথা মিতু জেনে যান। এ কারণে বাবুল তার বিশ্বস্ত সোর্সদের দিয়ে তাকে হত্যা করিয়েছিলেন।

তদন্তে আরও জানা গেছে, ২০১৪-১৫ সালে বাবুল আক্তার মিশনে সুদান যাওয়ার সময় একটি মোবাইল ফোন বাসায় রেখে যান। ওই মোবাইল ফোনে গায়ত্রী ২৯ বার বিভিন্ন খুদেবার্তা পাঠান। বার্তাগুলো দেখে প্রথম বাবুল-গায়ত্রীর প্রেম সম্পর্কে জানতে পারেন মিতু। বাবুল আক্তার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হিসেবে কক্সবাজারে কর্মরত থাকাকালীন ইউএনএইচসিআর-এর কর্মকর্তা গায়ত্রীর সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন।  

এরমধ্যে ‘তালেবান’ ও ‘বেস্ট কিপ্ট সিক্রেট’ নামে দুটি বই বাবুলকে উপহার দেন গায়ত্রী। বইগুলোতে বাবুলের সঙ্গে তার সাক্ষাতের তারিখ ও স্থান লেখা ছিল। ২০১৩ সালের ১১ সেপ্টেম্বর বাবুল ও গায়ত্রীর প্রথম দেখা হয় বলে বইয়ে লেখা ছিল। মিতু এই ‌সম্পর্কের বিষয়ে জেনে গিয়ে প্রতিবাদ করলে তাকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করেন বাবুল। নির্যাতনের বিষয়টি মিতু তার বাবাকেও জানিয়েছিলেন।

এরপর থেকে সংসারে অশান্তি ও কলহ শুরু। একই বাসায় আলাদা কক্ষে বসবাস শুরু করেন বাবুল-মিতু। এর জেরে তাকে খুনের সিদ্ধান্ত নেন বাবুল। বিশ্বস্ত সোর্স মুসাকে ‘কিলিং মিশনের’ প্রধান হিসেবে দায়িত্ব দেন। ব্যবসায়িক বন্ধু সাইফুলের মাধ্যমে মুসার কাছে তিন লাখ টাকা পাঠানো হয়। মুসা নিজে দাঁড়িয়ে থেকে অন্যদের নিয়ে মিতুকে হত্যা করেন বলে পিবিআইর তদন্তে উঠে এসেছে।

চট্টগ্রাম মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) মো. ফখরুদ্দিন চৌধুরী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘মিতু হত্যা মামলার তদন্ত পিবিআই শেষ করেছে। আমি অভিযোগপত্র দেখেছি। অনেক ভালো তদন্ত হয়েছে। শিগগিরই আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেবেন।’

আরও পড়ুন: গায়ত্রী সম্পর্কে পিবিআইকে তথ্য দিয়েছে ইউএনএইচসিআর

উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ৫ জুন ছেলে মাহিরকে স্কুলবাসে তুলে দিতে গিয়ে চট্টগ্রাম নগরীর জিইসি মোড়ের কাছে খুন হন মাহমুদা খানম মিতু। এ ঘটনায় তার স্বামী বাবুল আক্তার বাদী হয়ে তিন জনকে আসামি করে পাঁচলাইশ থানায় হত্যা মামলা করেন। মামলাটি প্রথমে তদন্ত করে পাঁচলাইশ থানা পুলিশ। এরপর তদন্তের দায়িত্ব পায় নগর গোয়েন্দা পুলিশ। পরে আদালতের নির্দেশে ২০২০ সালের জানুয়ারিতে মিতু হত্যা মামলা তদন্তের দায়িত্ব পায় পিবিআই।

২০২১ সালের ১১ মে বাবুলকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে পিবিআই। পরদিন ১২ মে তার মামলায় আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। একই দিন মিতুর বাবা অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা মোশাররফ হোসেন বাদী হয়ে নগরীর পাঁচলাইশ থানায় মামলা করেন। বাবুলকে প্রধান করে এ মামলায় সাত জনকে আসামি করা হয়। পরদিন ১২ মে এই মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়।

/এসএইচ/এমওএফ/
সম্পর্কিত
প্রতারণার অভিযোগে সাবেক স্ত্রীকে শ্বাসরোধে হত্যা
ভাড়াটিয়ার খাটের নিচ থেকে ইমামের স্ত্রীর মরদেহ উদ্ধার
তালাবদ্ধ ঘরে নারীর গলাকাটা লাশ, পাশে পড়ে ছিল রক্তমাখা বঁটি
সর্বশেষ খবর
‘হিট ইমারজেন্সি’ জারির আহ্বান সাইফুল হকের
‘হিট ইমারজেন্সি’ জারির আহ্বান সাইফুল হকের
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
শনিবার গ্যাস থাকবে না যেসব এলাকায়
শনিবার গ্যাস থাকবে না যেসব এলাকায়
জলবায়ু অভিযোজনে সহায়তা দ্বিগুণের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের আহ্বান পরিবেশমন্ত্রীর
জলবায়ু অভিযোজনে সহায়তা দ্বিগুণের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের আহ্বান পরিবেশমন্ত্রীর
সর্বাধিক পঠিত
এগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
ঈদের ছবিএগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
মৈত্রী ট্রেনে তল্লাশি, মুদ্রা পাচারের অভিযোগে আটক দুই বাংলাদেশি
মৈত্রী ট্রেনে তল্লাশি, মুদ্রা পাচারের অভিযোগে আটক দুই বাংলাদেশি
আমরা সবাই ফেরেশতা, বাস করি বেহেশতে: রায়হান রাফী
আমরা সবাই ফেরেশতা, বাস করি বেহেশতে: রায়হান রাফী
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়