X
রবিবার, ০৫ মে ২০২৪
২২ বৈশাখ ১৪৩১

অস্তিত্ব সংকটে সোনাদিয়া দ্বীপ

আবদুল আজিজ, কক্সবাজার
১১ নভেম্বর ২০২২, ১১:০০আপডেট : ১১ নভেম্বর ২০২২, ১১:০০

কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার কুতুবজোম ইউনিয়নে সোনাদিয়া দ্বীপের অবস্থান। এটি জীববৈচিত্র্যের দ্বীপ নামেও পরিচিতি। চারদিকে সমুদ্রবেষ্টিত হওয়ায় এটি অন্যতম পর্যটন স্থান। অথচ জীববৈচিত্র্যের এই দ্বীপ বর্জ্যে ভরা। বর্জ্যের চাপে এখন অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে দ্বীপটি।

৬ ও ৭ নভেম্বর বাংলাদেশ ওশানোগ্রাফিক রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (বোরি) মহাপরিচালক ও সমুদ্রবিজ্ঞানী সাঈদ মাহমুদ বেলাল হায়দারের নেতৃত্বে একদল পরিবেশ বিজ্ঞানী সোনাদিয়া দ্বীপ পরিদর্শনে যান। তখন দ্বীপজুড়ে বর্জ্যের স্তূপ চোখে পড়ে প্রতিনিধি দলের। 

সমুদ্রবিজ্ঞানীরা বলছেন, সোনাদিয়া দ্বীপের পূর্ব থেকে পশ্চিম সাত কিলোমিটার সৈকতজুড়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে নানা ধরনের বর্জ্য। এর মধ্যে মদের খালি বোতল, ভাঙা বোতল, স্যান্ডেল, ব্যাগ, জাল ও মেডিক্যালসহ জৈব-অজৈব নানা ধরনের বর্জ্য সৈকতে স্তূপ হয়ে আছে। জোয়ার ও ঘূর্ণিঝড়ে দ্বীপে নানা ধরনের বর্জ্য ভেসে এলেও গত ২৪ অক্টোবর ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে জলোচ্ছ্বাসে কয়েক টন প্লাস্টিক বর্জ্য দ্বীপে এসে জড়ো হয়। এসব বর্জ্য দ্বীপের জীববৈচিত্র্য গিলে খাচ্ছে বলে মনে করেন বিজ্ঞানীরা।

বিজ্ঞানীরা আরও বলছেন, এ ধরনের বর্জ্যের কারণে মাটিতে বিষাক্ততা তৈরি হচ্ছে। মাটির বন্ধন তৈরি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে এবং সৈকতে বসবাসকারী বিভিন্ন প্রাণীর বাসস্থান ধ্বংস হচ্ছে। এছাড়া সৈকতের প্রাকৃতিক উদ্ভিদের জৈব প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাও তৈরি হতে পারছে না।

সমুদ্রবিজ্ঞানী সাঈদ মাহমুদ বেলাল হায়দার বলেন, ‘মাটিতে প্লাস্টিক মিশে যাওয়ার কারণে সোনাদিয়া দ্বীপে ভয়াবহ মাটি দূষণের ঘটনা ঘটতে পারে। এটা ছড়িয়ে পড়তে পারে পানিতেও। আবার দ্বীপে ভেসে আসা প্লাস্টিকগুলো মাইক্রোপ্লাস্টিকে পরিণত হয়ে ফের সাগরে মিশে যেতে পারে। এ ধরনের মাটি ও পানি দূষণের কারণে কোনও কোনও প্রাণী এবং উদ্ভিদ পরিবেশ থেকে চিরতরে হারিয়ে যেতে পারে। আমরা দেখেছি, যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম কম্পিউটার তৈরির কারখানাটি মাটি দূষণের কারণে বাধ্য হয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।’

প্রায় তিন যুগের ব্যবধানে সোনাদিয়ার জীববৈচিত্র্য ৯০ শতাংশের বেশি ধ্বংস হয়ে গেছে বলে মনে করেন বেলাল হায়দার। বিভিন্ন প্রাণীর ইকোসিস্টেম (বাস্তুতন্ত্র) ধ্বংস করার কারণে সোনাদিয়ায় এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলে তার ধারণা। তবে পরিকল্পিত পদক্ষেপ নিলে এখনও সোনাদিয়াকে রক্ষা করা এবং আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা সম্ভব বলেও মনে করেন এই সমুদ্রবিজ্ঞানী। 

জীববৈচিত্র্যের এই দ্বীপ বর্জ্যে ভরা

এর আগে ২০২০ সালের জুলাই মাসে কলাতলী থেকে হিমছড়ি পর্যন্ত সৈকতজুড়ে বর্জ্যের স্তূপ দেখা দেয়। ওই সময় নানা বর্জ্যের সঙ্গে মৃত কচ্ছপ ও সাপসহ বিভিন্ন সামুদ্রিক প্রাণীর মৃতদেহ দেখা গেছে। তখন জেলা প্রশাসনের বিচকর্মী এবং স্থানীয় পরিবেশবাদী সংস্থাগুলোর কর্মীরা সৈকত থেকে বর্জ্যগুলো পরিষ্কার করেন। এর আগে বর্জ্য পরিষ্কারে কখনও কাউকে পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি। এমনকি সরকারি-বেসরকারি সংস্থা কিংবা পরিবেশবাদী কোন সংগঠনের তৎপরতা চোখে পড়েনি।

সোনাদিয়ার মাঝেরভিটা এলাকার বাসিন্দা আমানউল্লাহ বলেন, ‘সাগর থেকে ভেসে আসা ক্ষতিকর বর্জ্যগুলো পরিষ্কারের জন্য কোনও সংস্থা কাজ করে না। ধীরে ধীরে বর্জ্যগুলো টুকরো টুকরো হয়ে সৈকতের মাটি ও পানিতে মিশে যায়।’

তিনি বলেন, ‘সোনাদিয়া দ্বীপের প্যারাবন কেটে সৈকতের সাগরলতা বন ধ্বংস করে প্রভাবশালীদের অনেকে ব্যবসা-বাণিজ্য করছেন। কেউ কেউ দখলবাজিতে ব্যস্ত। অথচ বর্জ্য পরিষ্কারের বিষয়ে কারও উদ্যোগ নেই।’

জানা গেছে, কক্সবাজার শহর ও মহেশখালী দ্বীপের মাঝখানে প্রায় ১০ হাজার একর আয়তনের জমি নিয়ে বঙ্গোপসাগরে গড়ে ওঠে সোনাদিয়া দ্বীপ। শহর থেকে এক কিলোমিটার চওড়া একটি চ্যানেল দ্বারা বিভক্ত। শহরের উত্তর-পশ্চিমে অবস্থিত দ্বীপটি ‘স্বর্ণদ্বীপ’ নামেও পরিচিত। কথিত আছে, এখানে একসময় স্বর্ণ পাওয়া যেতো। ভূ-তাত্ত্বিক জরিপে এখানকার বালুতে মোনাজাইটসহ মূল্যবান খনিজ পদার্থ পাওয়া গেছে। বিশ্বে বিরল প্রজাতির চামচ ঠুঁটো বাটান পাখিসহ বৈচিত্র্যময় পশু-পাখি ও সামুদ্রিক প্রাণীর আবাস সোনাদিয়া দ্বীপ। 

বেসরকারি সংস্থা নেচার কনজারভেশন ম্যানেজমেন্টের (নেকম) জেলা ব্যবস্থাপক ও সামুদ্রিক জীববিজ্ঞানী আবদুল কাইয়ূম বলেন, ‘সোনাদিয়ায় পরিবেশ ধ্বংসের কারণে অন্যান্য জীবের পাশাপাশি কচ্ছপের ডিম পাড়ার হারও আশঙ্কাজনক হারে কমে গেছে। ২০২০ সাল পর্যন্ত কয়েক প্রজাতির কচ্ছপ এই দ্বীপে বছরে ১০-১২ হাজার ডিম দিতো। গত বছর এই সংখ্যা ছিল এক হাজারের কম। চলতি মৌসুমে এখন পর্যন্ত ডিম পাড়তে আসেনি কচ্ছপ। অবশ্য গত মৌসুমে অনেক বিলম্বে ডিম দিয়েছিল।’

/এএম/
সম্পর্কিত
গাছশূন্য ২০ কিলোমিটার সড়ক, তাপপ্রবাহে পথচারীদের দুর্ভোগ
‘নীরব এলাকা’, তবু হর্নের শব্দে টেকা দায়
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
সর্বশেষ খবর
 ‘আমি আগের চেয়ে ভালো আছি’
 ‘আমি আগের চেয়ে ভালো আছি’
সাওল হার্ট ও লাইফস্টাইল ১৯তম জাতীয় সেমিনার ৩১ মে
সাওল হার্ট ও লাইফস্টাইল ১৯তম জাতীয় সেমিনার ৩১ মে
নিজ্জার হত্যায় তিন ভারতীয়কে গ্রেফতারের কড়া প্রতিক্রিয়া জানালো ভারত
নিজ্জার হত্যায় তিন ভারতীয়কে গ্রেফতারের কড়া প্রতিক্রিয়া জানালো ভারত
সারা দেশে গাছ কাটা বন্ধের নির্দেশনা চেয়ে রিট
সারা দেশে গাছ কাটা বন্ধের নির্দেশনা চেয়ে রিট
সর্বাধিক পঠিত
মাঠ প্রশাসনে বিতর্কিত কর্মকর্তাদের লাগাম টানবে সরকার
মাঠ প্রশাসনে বিতর্কিত কর্মকর্তাদের লাগাম টানবে সরকার
রবিবার থেকে স্কুল-কলেজ খোলা, শনিবারও চলবে ক্লাস
রবিবার থেকে স্কুল-কলেজ খোলা, শনিবারও চলবে ক্লাস
মিল্টন সমাদ্দারের তিন মামলার বাদীরই মুখে কুলুপ
মিল্টন সমাদ্দারের তিন মামলার বাদীরই মুখে কুলুপ
স্বর্ণের ভরিতে বাড়লো ১ হাজার টাকার বেশি
স্বর্ণের ভরিতে বাড়লো ১ হাজার টাকার বেশি
আজও দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা যশোরে
আজও দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা যশোরে