বাংলাদেশ সাফজয়ী নারী ফুটবল দলের গোল পোস্টের অতন্দ্র প্রহরী রূপনা চাকমা। রাঙামাটির নানিয়ারচরের ঘিলাছড়ি ইউনিয়নের ভূইয়াদাম গ্রামে ছিল তার কুঁড়েঘর। সাফ বিজয়ের পর রূপনার জরাজীর্ণ ঘরের ছবি প্রকাশ হলে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে শুরু হয় নতুন ঘর নির্মাণ। বৃহস্পতিবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) বিকালে রূপনার মায়ের হাতে নতুন ঘরের চাবি হস্তান্তর করেন রাঙামাটি জেলা প্রশাসক। ঘর পেয়ে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন রূপনার মা।
চাবি হাতে পয়ে রূপনার মা দরজা খুলে ঘরে প্রবেশ করেন। এরপর ঘুরে ঘুরে দেখেন প্রতিটি কক্ষ।
নারী সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জয়ের পর গত বছরের ২০ সেপ্টেম্বর উপহার নিয়ে রূপনার বাড়িতে যান রাঙামাটির জেলা প্রশাসক। সে সময় রূপনার জরাজীর্ণ ঘরের ছবি ছড়িয়ে পড়ার পর নতুন বাড়ি তৈরির নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ঘর তৈরির প্রক্রিয়া শুরু করে জেলা প্রশাসন।
এরপর ৩ নভেম্বর পুরনো ঘরটি ভেঙে নতুন নকশায় ঘর নির্মাণের কাজ শুরু হয়। কাজ শুরু হওয়ার সাড়ে তিন মাসের মাথায় রূপনার মায়ের হাতে চাবি হস্তান্তর করেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন নানিয়ারচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দা সাদিয়া নূরীয়া, উপজেলা এলজিইডি প্রকৌশলী আব্দুল মজিদ, স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. নূয়েন খীসা, জেলা ও উপজেলার বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধিরা।
চাবি হস্তান্তরকে কেন্দ্র করে ভূইয়াদাম গ্রামে ভিড় করেন এলাকাবাসী। খুশির এই দিনে উপস্থিত সবাইকে মিষ্টিমুখ করান রূপনার স্বজনরা। দ্রুত সময়ে ঘর করে দেওয়ায় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান রূপনার মা ও এলাকাবাসী।
রূপনার মা কালাসোনা চাকমা বলেন, ‘আগে ভাঙা ঘরে থাকতাম। এখন নতুন ও সুন্দর ঘর পেয়েছি। আমি অনেক খুশি। প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞ। তিনি আমাকে এই ঘরটি দিয়েছেন।’
রূপনা চাকমার প্রতিবেশী সুরবালা চাকমা বলেন, ‘বর্ষার সময় ওদের খুব কষ্ট হতো। এবার আর হবে না। রূপনার অর্জনকে সম্মান জানিয়ে সরকার নতুন বাড়ির সঙ্গে বিদ্যুৎ সংযোগ, টিভি, ডিস সংযোগসহ নানা সহায়তা দিয়েছে। ওর জন্য এলাকাবাসী হিসেবে আমরাও গর্বিত।’
নানিয়ারচর উপজেলা এলজিইডি প্রকৌশলী আব্দুল মজিদ বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ পাওয়ার পর দ্রুত সময়ের মধ্যে নকশার কাজ শেষ করি। পরে জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের সহায়তায় সাড়ে তিন মাসের মধ্যে কাজের গুণগত মান ঠিক রেখে ঘর নির্মাণকাজ শেষ হয়। ঘরটিতে রয়েছে ৩টি বেড রুম, একটি ড্রয়িং রুম, একটি ডাইনিং রুম, কিচেন এবং বাথরুম। ১৪ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয়েছে সেমিপাকা ঘরটি।’
রাঙামাটি জেলা প্রশাসক মিজানুর রহমান বলেন, ‘এলাকাটি দুর্গম হওয়ায় কাজটি সহজ ছিল না। সব প্রতিবন্ধকতা জয় করে কাজ শেষ করে রূপনার মায়ের হাতে চাবি হস্তান্তর করি। পরে প্রধানমন্ত্রী এটি উদ্বোধন করবেন। এমন মহৎ কাজের সঙ্গে থাকতে পেরে আমি আনন্দিত।’