চট্টগ্রাম-১৫ (সাতকানিয়া-লোহাগাড়া) আসনের সংসদ সদস্য আবু রেজা মুহাম্মদ নেজাম উদ্দিন নদভী একজনকে চড় মারার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। সেতু নির্মাণে অনিয়ম নিয়ে প্রশ্ন তোলায় জসিম উদ্দিন নামে আওয়ামী লীগের এক কর্মীকে চড় মারেন। মঙ্গলবার (২১ মার্চ) ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া এক মিনিট ২১ সেকেন্ডের ভিডিওতে দৃশ্যটি দেখা যায়। তবে ভাইরাল হওয়া এ ভিডিও দুই বছর আগের বলে জানিয়েছে স্থানীয়রা।
ভিডিওটিতে দেখা যায়, জসিম উদ্দিন নামের ওই আওয়ামী লীগ কর্মী নদভীকে বলছেন, ‘যেখানে যতটুকু প্রয়োজন ততটুকু আপনাকে দিতে হবে, তবেই রোড মজবুত হবে। তারা (ইঞ্জিনিয়ার) আসে কিন্তু যে পরিমাণ দরকার সেই বরাবর দেয় না।’ তখন উত্তেজিত এমপি নদভী বলে ওঠেন, ‘তোকে আমি চড় মারবো’ বলতেই সজোরে চড় মেরে বসেন জসিম উদ্দিনের মুখে। এ সময় লোহাগাড়া উপজেলা চেয়ারম্যান জিয়াউল হক চৌধুরী বাবুলসহ বেশ কয়েকজন ব্যক্তি এমপিকে শান্ত করার চেষ্টা করলে উল্টো তাদেরকেই ধাক্কা দেন।
এ সময় জসিমকে উদ্দেশ করে নদভী বলেন, ‘এখনও মানুষ চিনিস নাই, কথা বেশি বলিস! আমি কথা শেষ করেছি? আমি এখন প্রধান প্রকৌশলীর সঙ্গেই কথা বলতাম। আমাকে চিনস নাই, বেয়াদব। আমি এখানে কেন এসেছি, কলা খেতে এসেছি? আমি যা করতে পারবো সেটা তোরা করতে পারবি, তাই না? ফালতু কোথাকার। আমি কতটা রাগী সেটা জানিস না? একেবারে জীবিত পুঁতে ফেলবো। ওমুকের, ওমুক আওয়ামী লীগের নেতা এসব আমার এখানে চলবে না। আমার এখানে চলবে বাস্তবতা।’
ভিডিওটির বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, একাদশ সংসদ নির্বাচনে নৌকার টিকিটে দ্বিতীয়বার এমপি নির্বাচিত হওয়ার মাস দুয়েক পর ২০১৯ টেরীবাজারের ধনাঢ্য ব্যবসায়ী ‘মনে রেখ’ শাড়ির শোরুমের মালিক আমজাদ হোসেনের আমন্ত্রণে সাতকানিয়া পৌরসভার ছমাদার পাড়ার তার বাড়িতে দাওয়াতে যান এমপি নদভী। ওই দিন বিকালে সাতকানিয়ার এওচিয়া গাটিয়াডাঙ্গা এলাকায় নির্মাণাধীন একটি ব্রিজের নির্মাণকাজ পরিদর্শনে যান। টেন্ডার পেয়ে ব্রিজের নির্মাণকাজ করছিলেন লোহাগাড়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জিয়াউল হক চৌধুরী বাবুল। ব্রিজের নির্মাণকাজ পরিদর্শনকালে নিম্নমানের কাজ করায় ঠিকাদারের বিরুদ্ধে এলাকাবাসীর পক্ষে অভিযোগ করেছিলেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ কর্মী প্রবাসী জসিম উদ্দিন। এ সময় অভিযোগকারীকে থাপ্পড় মারেন এমপি নদভী।
অভিযোগকারী জসিম উদ্দিন সাতকানিয়ার এক সময়ের বহুল আলোচিত জামায়াত-শিবিরের ক্যাডার আহমদ বাহিনীর হাতে নির্মমভাবে নিহত এওচিয়া ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা নুরুল কবিরের ছোট ভাই।
এ বিষয়ে জানতে আবু রেজা মুহাম্মাদ নেজামুদ্দীন নদভীর মোবাইল নম্বরে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।
ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে লোহাগাড়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জিয়াউল হক চৌধুরী বাবুলকে দেখা গেছে। তিনি এ প্রসঙ্গে বাংলা ট্রিবিউনের কাছে দাবি করেন, ‘এমপি সাহেবের ভিডিওটি দুই বছর আগের। সাতকানিয়া ডলু নদীর ওপর নির্মিত একটি ব্রিজ পরিদর্শনে যান। সেখানে জসিম উদ্দিন নামের ব্যক্তি টাইলস ভেঙে ফেলেন। এ কারণে এমপি ক্ষুব্ধ হয়ে তাকে চড় মারেন। ব্রিজটির ঠিকাদার আমি নিজেই ছিলাম। এ ব্রিজের কাজ ঠিকভাবেই হয়েছিল। এত দিন এ ভিডিও দেখা যায়নি। এখন এমপির কিছু শত্রু সৃষ্টি হয়েছে। এরাই এগুলো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দিচ্ছে।’
এ প্রসঙ্গে সাতকানিয়া উপজেলার বাসিন্দা এবং স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. আ ম ম মিনহাজুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এমপি নদভীর একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। আমি নিজেও এ ভিডিও দেখেছি। জসিম উদ্দিন নামে যে প্রবাসীকে চড় মারা হয় তিনি একজন আওয়ামী লীগ পরিবারের ছেলে। তার পরিবারের অনেক সদস্য জামায়াত-শিবিরের নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে। এমন একটি পরিবারের সদস্যের ওপর এমপির এমন আচরণ কাম্য নয়। এত দিন এমপির ভয়ে হয়তো এ ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার সাহস কেউ পায়নি। এখন যেহেতু এমপির বিরুদ্ধে স্থানীয় নেতাকর্মীদের ক্ষোভ বেড়েছে এ কারণে ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে।’
