রাঙামাটিতে টানা বৃষ্টিতে ধসের শঙ্কায় পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসকারীদের আশ্রয়কেন্দ্রে আসতে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাইকিং করা হচ্ছে। শুক্রবার বিকাল থেকে শনিবার (০৫ আগস্ট) বিকাল পর্যন্ত কয়েক দফা মাইকিং করা হলেও আশ্রয়কেন্দ্রে আসতে অনীহা পাহাড়ে বসবাসকারীদের।
এদিকে, শনিবার সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত জেলায় থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বসবাসকারীদের আশ্রয়কেন্দ্রে আনতে সেনাবাহিনীর সহযোগিতা নেবে বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসন।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন খান বলেন, ‘আমরা ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বসবাসকারীদের নানাভাবে আশ্রয়কেন্দ্রে আনার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশ, ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা চেষ্টা করছেন। তবু আশ্রয়কেন্দ্রে আসছেন না পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসকারীরা। যদি তারা আমাদের কথা না শোনে তাহলে সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় তাদের আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে আসবো। তাদের আশ্রয়কেন্দ্রে আসতেই হবে।’
বিকালে জেলা প্রশাসন, পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের টিম শহরের ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা থেকে আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে বাড়ি বাড়ি গিয়ে অনুরোধ করেছেন ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বসবাসকারীদের। প্রশাসনের এত তৎপরতার পরও সন্ধ্যা পর্যন্ত অধিকাংশ মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে আসেননি।
পাহাড়ের ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বসবাসকারী আমেনা বেগম বলেন, ‘২০১৭ সালে পাহাড়ধসে আমার বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। পরে কেউ আমার বাড়ি বানিয়ে দেয়নি। এখন আর আশ্রয়কেন্দ্রে যাবো না। মরলে ঘরেই মরবো।’
শিমুলতলী এলাকার বাসিন্দা আছিয়া আক্তার বলেন, ‘আমাদের বাসা পাকা আছে। পাহাড় থেকে দূরে আছে। এখানে কোনও সমস্যা হবে না। আমরা নিরাপদে আছি। আশ্রয়কেন্দ্রে যাবো না।’
একই এলাকার আরেক বাসিন্দা মো. মোশারফ হোসেন বলেন, ‘প্রশাসনের লোকজন এসেছেন। আমাদের আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে বলছেন। বৃষ্টি আরও বেশি হলে তখন যাবো।’
জেলা প্রশাসন জানায়, গত বুধবার থেকে জেলায় বৃষ্টি শুরু হয়। এ অবস্থায় ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বসবাসকারীদের জন্য শুক্রবার সকালে শহরে ১৯টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে।
জেলা আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের তথ্যমতে, গত ২৪ ঘণ্টায় (শুক্রবার সকাল ৬টা থেকে শনিবার সকাল ৬টা পর্যন্ত) জেলায় ৭৭ দশমিক ২২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। শনিবার সকাল ৬টা থেকে থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ৬৪ দশমিক ৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
জেলা প্রশাসনের তথ্যমতে, শহরের ৩১টি পয়েন্টে চার হাজার পরিবারের প্রায় ১৫ হাজার সদস্য পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিতে বসবাস করছেন।
তবে স্থানীয়দের দেওয়া তথ্যমতে, ২০১৭ সালের পর থেকে এ পর্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় আরও ৫০০ নতুন পরিবার বসতি স্থাপন করেছেন।
কোতোয়ালি থানার ওসি মো. আরিফুল আমিন বলেন, ‘আমরা তাদের অনুরোধ করছি, বোঝানোর চেষ্টা করছি। আশা করছি, তারা আশ্রয়কেন্দ্রে আসবেন। তারপরও যদি না আসে তাহলে বলপ্রয়োগ করা হবে।’