নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলায় নাছির উদ্দিন মাসুদ (২৫) নামের এক যুবককে ‘চোর সন্দেহে’ পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। রবিবার রাত সাড়ে ৩টার দিকে উপজেলার ছয়ানী ইউনিয়নের ভূপতিপুর গ্রামের সিরাজ মিয়ার বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে।
পুলিশ ও স্থানীয়দের দাবি, রবিবার রাতে সিরাজ মিয়ার ঘরের সিঁধ কেটে চুরির চেষ্টাকালে পিটুনি দিলে মারা যান মাসুদ। তবে নিহতের স্বজনদের দাবি, তার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক ছিল সিরাজ মিয়ার মেয়ের। এই সম্পর্ক মেনে নিতে না পেরে মাসুদকে পরিকল্পিতভাবে পিটিয়ে হত্যা করেছেন সিরাজের পরিবারের সদস্যরা।
নিহত নাছির উদ্দিন মাসুদ বেগমগঞ্জ উপজেলার আমানউল্যাপুর ইউনিয়নের অভিরামপুর গ্রামের মৃত জালাল আহমদের ছেলে। সোমবার (৪ সেপ্টেম্বর) সকালে সিরাজ মিয়ার বাড়ি থেকে লাশ উদ্ধার করা হয়।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সোমবার সকালে এলাকায় খবর ছড়িয়ে পড়ে সিরাজ মিয়ার ঘরের সামনে একজনের লাশ পড়ে আছে। এই খবর পেয়ে গ্রাম-পুলিশ, ইউপিসদস্যসহ এলাকার লোকজন ওই বাড়িতে যান। বিষয়টি থানায় জানালে ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। সোমবার সকাল ৯টার দিকে ময়নাতদন্তের জন্য লাশ নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠায় বেগমগঞ্জ থানা পুলিশ।
ছয়ানী ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য (মেম্বার) মো. ইউছুফ আলী বলেন, ‘গ্রাম পুলিশের কাছ থেকে খবর পেয়ে সিরাজের বাড়িতে যাই। সিরাজের পরিবারের লোকজন জানিয়েছেন, রবিবার রাত সাড়ে ৩টার দিকে ঘরের সিঁধ কেটে ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করেন মাসুদ। টের পেয়ে মাসুদকে আটক করে পিটুনি দেন তারা। পরে তাদের চিৎকারে আরও লোকজন এগিয়ে আসেন। একপর্যায়ে আরও কয়েকজন মারধর করেন। এতে ঘটনাস্থলেই মারা যান মাসুদ।’
তবে এ বিষয়ে বারবার জানতে চাইলেও কোনও মন্তব্য করতে রাজি হয়নি সিরাজ মিয়া। মেয়ের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কের বিষয়টি এড়িয়ে যান তিনি।
মাসুদের চাচা জাকির হোসেন বিষয়টিকে ‘পূর্বপরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড’ বলে দাবি করছেন। তিনি বলেন, ‘আমার ভাতিজা গ্রামে আগে দুই-তিনবার বিভিন্ন জনের কবুতর চুরি করেছে, এটি সত্য। তবে রবিবার রাতে যেখানে হত্যা করা হয়েছে, সে বাড়িতে চুরি করতে যায়নি। সিরাজের মেয়ের সঙ্গে মাসুদের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। বিষয়টি আমরা আগে থেকেই জানতাম। তবে মেয়ের সঙ্গে মাসুদের প্রেমের সম্পর্ক মেনে নিতে পারেননি সিরাজ। তবু তাদের সম্পর্ক চলছিল। সিরাজের মেয়ের সঙ্গে রবিবার রাতে দেখা করতে গেছে বলে আমার ধারণা। ফলে পূর্বপরিকল্পিত তাকে আটক করে পিটিয়ে হত্যা করেছেন সিরাজ ও তার পরিবারের সদস্যরা। পরে নিজেরা বাঁচতে চুরির দায়ে গণপিটুনির নাটক সাজিয়েছেন। এ ঘটনায় থানায় মামলা করবো।’
বেগমগঞ্জ থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) ফরিদ আলম বলেন, ‘মাসুদ এলাকায় একাধিক চুরির সঙ্গে জড়িত ছিল। চুরি করতে গিয়ে কয়েকবার ধরা পড়েছিল বলে তার পরিবারের সদস্য ও এলাকার জনপ্রতিনিধিরা জানিয়েছেন। এর সূত্র ধরে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছি, রবিবার রাতে সিরাজের বাড়িতে চুরি করতে গিয়ে পিটুনির শিকার হয়ে ঘটনাস্থলে মারা গেছে। লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে এখনও কেউ থানায় অভিযোগ করেননি। অভিযোগ পেলে অবশ্যই তদন্ত করে ঘটনাটি পূর্বপরিকল্পিত হলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’