বসন্ত ও ভালোবাসা দিবসের যুগপৎ উদযাপন ঘিরে চট্টগ্রামে ফুলের বাজার জমে উঠেছে। সেইসঙ্গে সব ফুলের দাম বেড়েছে। মানভেদে প্রতিটি গোলাপ ১০-৮০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে, যা কয়েকদিন আগেও পাঁচ থেকে সর্বোচ্চ ২০ টাকায় বিক্রি হতো। একইভাবে বেড়েছে গ্লাডিওলাস, রজনীগন্ধা ও জারবেরার দাম।
২০২০ সালে বাংলা একাডেমির সংশোধিত বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী, ১৩ ফেব্রুয়ারির পরিবর্তে ১৪ ফেব্রুয়ারি থেকে ফাল্গুনের শুরু। ওই দিনে উদযাপিত হয় বসন্ত উৎসব। একই দিন বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। ইতিহাসে যা সেন্ট ভ্যালেন্টাইনস ডে নামে পরিচিত। দিবসগুলো ঘিরে বেশি দামে ফুল বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা।
মঙ্গলবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) নগরীর চেরাগী পাহাড় ও মোমিন রোডের পাইকারি ফুলের দোকানগুলোতে দেখা গেছে, থরে থরে সাজানো নানা রঙের ফুল। এখানে আছে ছোট-বড় ৬২টি দোকান। গোলাপ, গ্লাডিওলাস, রজনীগন্ধা, জারবেরা, গাঁদা, চন্দ্রমল্লিকা ও জিপসিসহ নানা জাতের ফুলে ভর্তি। কিনতে ভিড় করেছেন ক্রেতারা। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত জমজমাট বেচাকেনা হয়েছে। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, মঙ্গলবার, বুধবার ও বৃহস্পতিবার; এই তিন দিনে আড়াই কোটি টাকার ফুল বিক্রি হবে। সেভাবে প্রস্তুতি নিয়েছেন তারা।
মঙ্গলবার দেশি গোলাপের পিস বিক্রি হয়েছে ১০-২০ টাকায়। বিদেশি লাল, সাদা ও গোলাপি বিক্রি হয়েছে ৭০-৮০ টাকায়। পাশাপাশি রজনীগন্ধার স্টিক ১৫-২৫, ১০ পিস সাদা চন্দ্রমল্লিকা ৫০-১০০, লাল-নীলসহ ভিন্ন রঙের চন্দ্রমল্লিকা ৪০-৫০, গ্লাডিওলাস ৪০-৫০, এক হাজার গাঁদা ৪৫০-৫০০ টাকা ও জারবেরা ২০-৪০ টাকা। এছাড়া ক্রাউনের পিস ৫০-৪০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে এবং চায়না লিলি ফুল বিক্রি হয়েছে ৫০০-৬০০ টাকায়। যা কয়েকদিন আগেও অনেক কম দামে বিক্রি হতো।
ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, এবার ফুলের দাম অন্যান্য বছরের তুলনায় কিছুটা বেশি। বসন্ত উৎসব, ভালোবাসা দিবস, ২১ ফেব্রুয়ারি ও ২৬ মার্চসহ বিভিন্ন দিবসে চাহিদা বেশি থাকায় ফুলের বাড়া স্বাভাবিক।
মোমিন রোডের আইরিশ ফুলের দোকানের ব্যবসায়ী বেলাল হোসেন বলেন, ‘বসন্ত উৎসব এবং ভালোবাসা দিবসে গোলাপ, গ্লাডিওলাস, রজনীগন্ধা, জারবেরা ও গাঁদার চাহিদা বেশি। এজন্য দামও বেশি থাকে। বুধবার ও বৃহস্পতিবার দাম আরও বাড়বে।’
বসন্ত উৎসব এবং ভালোবাসা দিবস ঘিরে ফুল বিক্রি বেড়েছে বলে জানালেন চট্টগ্রাম ফুল ব্যবসায়ী সমিতি ঐক্য পরিষদের সভাপতি নাসির গণি চৌধুরী। বাংলা ট্রিবিউনকে তিনি বলেন, ‘একসময় দেশে চাহিদার ৫ শতাংশ ফুল চট্টগ্রামে উৎপাদন হতো। এখন ১৫ শতাংশ উৎপাদন হয়। চট্টগ্রাম থেকে ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় ফুল পাঠাই আমরা। আবার চাহিদা অনুযায়ী যশোর ও ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ফুল কিনে আনি। আবার এমন কিছু ফুল আছে, যেগুলো ভারতসহ বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করা হয়।’
করোনা মহামারির সময় ফুল ব্যবসায়ীরা ক্ষক্ষিগ্রস্ত হয়েছেন জানিয়ে সমিতির সভাপতি আরও বলেন, ‘তখন সরকারের পক্ষ থেকে আমরা কোনও ধরনের প্রণোদনা পাইনি। সহজ শর্তে ঋণও দেওয়া হয়নি। তবু অনেক কষ্টে ফুল ব্যবসা ধরে রেখেছি। তবে এবার ফুলের দাম ভালো। বেচাকেনাও জমে উঠেছে।’
তাজা ফুলের বাজার নষ্ট করছে বিদেশি প্লাস্টিকের ফুল উল্লেখ করে নাসির গণি চৌধুরী আরও বলেন, ‘বিদেশ থেকে প্লাস্টিকের ফুল আমদানি বন্ধ হলে তাজা ফুলের বাজার আরও বিকশিত হবে।’
তিন দিনে আড়াই কোটি টাকার ফুল বিক্রি হবে উল্লেখ করে চট্টগ্রাম ফুল ব্যবসায়ী সমিতি ঐক্য পরিষদের সহসভাপতি মো. জানে আলম বলেন, ‘চেরাগী পাহাড় ও মোমিন রোডের ফুলের দোকানগুলোতে পাইকারি এবং খুচরায় বিক্রি হয়। সমিতির আওতায় চট্টগ্রাম ছাড়াও তিন পার্বত্য জেলা এবং কক্সবাজার মিলে অন্তত এক হাজার ফুলের দোকান আছে। সেগুলোতে বেশিরভাগ ফুল চেরাগী ও মোমিন রোডের দোকানগুলো থেকে যায়। আশা করছি, মঙ্গলবার, বুধবার ও বৃহস্পতিবার অন্তত আড়াই কোটি টাকার ফুল বিক্রি হবে।’