নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার চরএলাহী ইউনিয়নে স্বামীর বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কের জেরে স্ত্রী ফারজানা আক্তারের (২২) মৃত্যুর ঘটনায় স্বামী জহিরুল ইসলাম ও তার প্রেমিকা রিনা আক্তারসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে নোয়াখালীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে মামলার আবেদন করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার নিহতের বড় ভাই মো. খবির উদ্দিন বাদী হয়ে এ মামলার আবেদন করেন। আদালত কোম্পানীগঞ্জ থানাকে মামলা রেকর্ড করার নির্দেশ দেন। শনিবার আদালতের নির্দেশনার আলোকে কোম্পানীগঞ্জ থানায় হত্যা মামলা রেকর্ড করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন ওই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রণব চৌধুরী।
মামলার আসামিরা হলেন ফারজানার স্বামী মো. জহিরুল ইসলাম জহির (২৯), দেবর মো. সাগর (২২), শাশুড়ি খালেদা খাতুন (৪৫), জহিরুলের প্রেমিকা রিনা আক্তার (২৫) ও আবু তাহের প্রকাশ ফকিরসহ (২৩) অজ্ঞাত তিন-চার জন। নাম উল্লেখিত প্রথম চার জন উপজেলার চরএলাহী ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের চরকলমী গ্রামের বাসিন্দা। অপরজনের বাড়ি সুবর্ণচর উপজেলার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের চর বৈশাখী গ্রামে।
ফারজানা আক্তার চরএলাহী ইউনিয়নের চরকলমী গ্রামের সিরাজুল ইসলামের ছেলে জহিরুল ইসলাম জহিরের স্ত্রী ও সুবর্ণচর উপজেলার চরবৈশাখী গ্রামের বশির উল্যাহর মেয়ে।
মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, ফারজানার সঙ্গে জহিরের ২০১৯ সালে বিয়ে হয়। তাদের চার বছরের এক ছেলেসন্তান রয়েছে। বিয়ের পর থেকে কিছুদিন দাম্পত্য জীবন সুখে কাটলেও রিনার সঙ্গে জহির বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কে জড়ান। এরপর থেকে দাম্পত্য কলহ শুরু হয়। জহির বারবার যৌতুকের দাবিতে ফারজানার ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করেন। এ নিয়ে সামাজিকভাবে কয়েকবার সালিশ বৈঠক হয়।
ফারজানার সুখের কথা চিন্তা করে কয়েক দফায় তার বাবা জামাতা জহিরকে ছয় লাখ ৫০ হাজার টাকার স্বর্ণালঙ্কার ও নগদ টাকা দেন। এরপরও রিনার সঙ্গে প্রেম থেকে সরে না আসায় দাম্পত্য কলহ চরমে ওঠে। এরই মধ্যে জহির ফারজানাকে বাবার বাড়ি থেকে আরও পাঁচ লাখ টাকা যৌতুক এনে দিতে বলেন। না দিলে ফারজানাকে তালাক দিয়ে রিনাকে বিয়ে করবে বলে হুমকি দেন।
১৩ জুন দুপুরে ফারজানা তার স্বামী জহিরকে রিনার সঙ্গে কথা বলতে দেখে প্রতিবাদ করেন। এর জের ধরে ওই দিন রাতে ফারজানাকে জহিরসহ তার পরিবারের লোকজন মারধর ও নির্যাতন করে হত্যা করেন। খবর পেয়ে ফারজানার বাবা বশির উল্যাহ ও ভাই খবির উদ্দিন ১৪ জুন ভোরে ঘটনাস্থলে গিয়ে ফারজানার লাশ খাটের ওপর পড়ে থাকতে দেখেন। খবির তাৎক্ষণিক ৯৯৯ নম্বরে ফোন দেওয়ার পর কোম্পানীগঞ্জ থানা পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠায়। পুলিশ আসার সংবাদ পেয়ে জহিরসহ পরিবারের সদস্যরা বাড়ি থেকে পালিয়ে যান।
কোম্পানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রণব চৌধুরী বলেন, ‘আদালতের নির্দেশনা পেয়ে গৃহবধূ ফারজানা হত্যা মামলাটি রেকর্ড করা হয়েছে। মামলার আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।’