১৬ জুলাই বিকালে কোটা সংস্কারের দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে চট্টগ্রাম নগরের মুরাদপুরে কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রদল নেতা ওয়াসিম আকরাম। চট্টগ্রাম কলেজের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের স্নাতক (সম্মান) তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন তিনি।
মৃত্যুর প্রায় আড়াই মাস পর আজ বুধবার (৯ অক্টোবর) জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় স্নাতক (সম্মান) তৃতীয় বর্ষের ফলাফল ঘোষণা করেছে। ঘোষিত ফলাফল অনুযায়ী ওয়াসিম প্রথম শ্রেণিতে (ফার্স্ট ক্লাস) উত্তীর্ণ হয়েছেন।
এদিকে, নিজের এই ফলাফল দেখে যেতে পারেননি ওয়াসিম। পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হওয়ার বিষয়টি বিকাল ৫টার দিকে জানতে পারেন তার পরিবার।
রাতে কথা হয় নিহত ওয়াসিম আকরামের ছোট বোন সাবরিনা ইয়াসমিনের সঙ্গে। বাংলা ট্রিবিউনকে তিনি বলেন, ‘আমরা ভাইবোন পাঁচ জন। এর মধ্যে ভাই দুজন। ভাইদের মধ্যে ওয়াসিম ছোট এবং ভাইবোনদের মধ্যে তৃতীয়। আমার ভাই অনার্স পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করেছে। তার রেজাল্ট আমরা হাতে পেয়েছি। আমার ভাই বেঁচে থাকলে আজ অনেক বেশি খুশি হতেন। ভাইয়ের ভালো ফলাফল শুনে আমার মা-বাবা দুজনই কান্না করছেন। ওয়াসিম ভাই নেই, তার এই ফলাফল দিয়ে কী হবে!’
ওয়াসিমের ফলাফল ফেসবুকে শেয়ার দিয়ে তার বন্ধু জাহেদুল ইসলাম লিখেছেন, ‘আজ ওয়াসিমের পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে। তৃতীয় বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণিতে পাস করেছে সে। কিন্তু রেজাল্ট শোনার আগেই ঘাতকের বুলেট তার জীবন-প্রদীপ কেড়ে নিয়েছে।’
চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রদলের সদস্য সচিব মো. ওমর ফারুক সাগর বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ওয়াসিম অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র ছিলেন। তার মৃত্যুর কিছু দিন আগেই অনার্স সমাজবিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। অথচ তৃতীয় বর্ষের ফলাফল প্রকাশ হওয়ার আগেই ওয়াসিম চলে গেলেন না ফেরার দেশে।’
কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলার দক্ষিণ মেহেরনামা এলাকার বাসিন্দা ওয়াসিম। দুই ভাই তিন বোনের মধ্যে তৃতীয় তিনি। তার বাবা সৌদি প্রবাসী শফিউল আলম ও মা জোসনা বেগম। তিনি ২০১৭ সালে কক্সবাজারের পেকুয়া সদর ইউনিয়নের মেহেরনামা উচ্চবিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং ২০১৯ সালে বাকলিয়া সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। পরে তিনি চট্টগ্রাম কলেজে সমাজবিজ্ঞান বিভাগে অনার্সে ভর্তি হন। ওয়াসিম চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন।
উল্লেখ্য, ওয়াসিম নিহতের ঘটনায় গত ১৮ আগস্ট নগরীর পাঁচলাইশ থানায় মা জোসনা বেগম বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন। মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ১০৮ জনকে আসামি করা হয়।