কক্সবাজারে টেকনাফের সাগর উপকূল দিয়ে মালয়েশিয়ায় পাচারের উদ্দেশে জড়ো করা ২০ জনকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। এর মধ্যে আট জন বাংলাদেশি আর ১২ জন রোহিঙ্গা নাগরিক। এ ঘটনায় মানবপাচারে জড়িত এক নারীসহ তিন দালালকে আটক করা হয়।
বুধবার (১৬ অক্টোবর) সকালে বিষয়টি বাংলা ট্রিবিউনকে নিশ্চিত করেছেন টেকনাফ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন। এর আগে মঙ্গলবার গভীর রাতে টেকনাফ উপজেলার সদর ইউনিয়নের দক্ষিণ লম্বরী এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের উদ্ধার করা হয়।
ওসি মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন বলেন, ‘মঙ্গলবার দিবাগত রাতে মানবপাচারকারী একটি চক্র দক্ষিণ লম্বরী এলাকায় রোহিঙ্গাদের মালয়েশিয়ায় পাচারের জন্য জড়ো করে। খবর পেয়ে পুলিশ অভিযান চালায়। অভিযানে দক্ষিণ লম্বরী এলাকার একটি বাড়ি থেকে ২০ জনকে উদ্ধার করে পুলিশ। সেইসঙ্গে তিন দালালকে আটক করা হয়। পুলিশ সুপারের নির্দেশনায় তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
আটককৃত দালালরা হলো- টেকনাফ সদর ইউনিয়নের দক্ষিণ লম্বরী এলাকার লুনা বেগম (৩৫) ও একই এলাকার মো. রিদুয়ান (২৮) এবং সাবরাং ইউনিয়নের কচুবুনিয়া এলাকার মো. আবদুল্লাহ (৩০)।
উদ্ধার রোহিঙ্গারা হলেন- উখিয়ার হাকিমপাড়ার রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরে আয়াত উল্লাহ, বালুখালী রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরের নেছার উল্লাহ, একই শিবিরের ছৈয়দ কাছিম ও মো. নুর আবছার, কুতুপালং রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরের শফি আলম, একই শিবিরের দিল কায়েস, জামতলি রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরের নুর আলম, শফিউল্লাহ কাটা রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরের মো. নজরুল, থাইংখালী আশ্রয়শিবিরের সাবেকুন্নাহার, ধলু বেগম, উম্মে হাবিবা ও কুতুপালং শিবিরের মিনুয়ারা বেগম।
উদ্ধার আট বাংলাদেশি হলেন- চট্টগ্রামের পতেঙ্গার আবদুল মাবুদ, একই এলাকার শাহাজাহান, টেকনাফের হোয়াইক্যং ইউনিয়নের জহুর আলম, কক্সবাজার পৌরসভার ঘোনারপাড়া এলাকার আব্দুর রহিম, মহেশখালীর মুন্সির ডেইল এলাকার তৌহিদুল ইসলাম, একই এলাকার মুন্সির ডেইলের মো. সোহেল, রামুর কাউয়ারকোপ এলাকার মনিরুল আলম ও কক্সবাজার সদরের পিএমখালীর নয়াপাড়ার মনজুর আলম।
উদ্ধার এক রোহিঙ্গা নারী বলেন, ‘চার লাখ টাকার বিনিময়ে দালালের মাধ্যমে ছোট বোনকে সঙ্গে নিয়ে সাগরপথে মালয়েশিয়ায় যাওয়ার জন্য ক্যাম্প ত্যাগ করি। এজন্য দালালকে এক লাখ ৪০ হাজার টাকা দিয়েছি। বাকি তিন লাখ মালয়েশিয়ায় পৌঁছে দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু দালালরা টেকনাফের একটি বাড়িতে দুদিন আটকে রাখে আমাদের। অবশেষে উদ্ধার করেছে পুলিশ।’
উদ্ধার হওয়া চট্টগ্রামের পতেঙ্গার বাসিন্দা মো. শাজাহান বলেন, ‘আমরা দুই বন্ধু টেকনাফের বন্ধু শাহ আলমের কাছে বেড়াতে এসেছি। একদিন ঘুরতে যাওয়ার কথা বলে স্থানীয় দালাল মো. ইসমাইলকে দিয়ে আসে আমাদের। পরে দালাল আমাদের মোবাইল ছিনিয়ে নেয়। এরপর জানতে পারি আমাদের দুজনকে ৪০ হাজার টাকায় দালালদের কাছে বিক্রি করে দিয়েছে।’
এ বিষয়ে কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রহমত উল্লাহ বলেন, আটক দালালের বিরুদ্ধে মানবপাচার আইনে মামলা করা হবে। উদ্ধারকৃত রোহিঙ্গাদের ক্যাম্পে পাঠানো হবে।
এর আগে গত ১৪ অক্টোবর সকালে মালয়েশিয়া পাচারের সময় উখিয়ার ইনানী সৈকত এলাকা থেকে পুলিশ ও কোস্টগার্ড ২৬ জন রোহিঙ্গাকে আটক করে। এ সময় আরও ৮০ থেকে ৯০ জন রোহিঙ্গা পালিয়ে যান।