X
মঙ্গলবার, ১৭ জুন ২০২৫
৩ আষাঢ় ১৪৩২

মেঘনায় এত পাঙাশ ধরা পড়েনি আগে, কেজি ৭০০ টাকা

ইব্রাহীম রনি, চাঁদপুর
২০ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:০১আপডেট : ২০ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:০১

চাঁদপুরের মেঘনা নদীতে গত এক সপ্তাহ ধরে জেলেদের জালে ধরা পড়ছে প্রচুর পরিমাণ পাঙাশ মাছ। একসঙ্গে এত পাঙাশ আগে কখনও ধরা পড়েনি বলে জানিয়েছেন জেলে ও মাছ ব্যবসায়ীরা।

জেলেরা বলছেন, এখন মেঘনা নদীতে পাঙাশ ধরার মৌসুম চলছে। ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে ৪ নভেম্বর থেকে মাছ ধরতে শুরু করেন তারা। ১০ নভেম্বর থেকে তাদের জালে ধরা পড়ছে বড় বড় পাঙাশ। প্রচুর পরিমাণ পাঙাশ ধরা পড়ায় খুশি জেলে ও আড়তদাররা। ফলে ঘাটে বেড়েছে সরবরাহ। চাষের চেয়ে নদীর এই মাছ সুস্বাদু হওয়ায় ক্রেতার কাছে বেশ কদর আছে। দামও ভালো পাচ্ছেন জেলেরা। 

জেলে ও মাছ ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, সরবরাহ বেশি হওয়ায় বছরের অন্য সময়ের তুলনায় প্রতি কেজিতে দাম কমেছে ২০০ থেকে ২৫০ টাকা। বর্তমানে প্রতি কেজি ৭০০-৭৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

জেলা মৎস্য অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, মেঘনা ও পদ্মা নদীতে ধরা পড়ছে বেশিরভাগ পাঙাশ। গত পাঁচ বছরের মধ্যে এবার মেঘনা নদীতে ধরা পড়েছে চারগুণ বেশি। কারণ আগের চেয়ে উৎপাদন বেড়েছে।

চাঁদপুর বড়স্টেশন মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র ঘুরে দেখা গেছে, মঙ্গলবার সকাল থেকে নদীতে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ধরা শেষে বড়স্টেশন ঘাটে ফিরছেন জেলেরা। ডাকাতিয়া নদীর পাড়ে আসার পর নৌকা থেকে তুলে আনছেন মাঝারি ও বড় আকারের পাঙাশ মাছ। ঘাটে আসা প্রতিটি জেলে নৌকায় পাঁচ থেকে সর্বোচ্চ ১৫টি পর্যন্ত মাছ নিয়ে এসেছেন তারা। প্রতিটি পাঙাশের ওজন ছয় থেকে ১২ কেজি। 

দাম ভালো পেয়ে খুশি জেলেরা

ইলিশ শিকারে যাওয়া জেলেদের ইলিশ কম পাওয়ার আক্ষেপ থাকলেও হাসিমুখে ছিলেন পাঙাশ পাওয়া জেলেরা। তারা বলছেন, বড় আকারের হওয়ায় ভালো দাম পেয়ে খুশি তারা। কার্তিক মাসে নদীতে ছোট-বড় মাছ বেশি ধরা পড়ে। তাই এখন ইলিশ ধরা অনেক জেলে পাঙাশ শিকার করছেন।

একসঙ্গে এত পাঙাশ আগে কখনও ধরা পড়েনি বলে জানিয়েছেন জেলে ও মাছ ব্যবসায়ীরা

চাঁদপুরের বহরিয়া এলাকার জেলে আব্দুর রহিম বলেন, ‘আমার যে জাল তাতে পাঙাশ মাছ ধরা পড়ে বেশি। ইলিশ রক্ষায় নদীতে অভিযান দেওয়ার পর থেকে বেশি পরিমাণ পাঙাশ পাওয়া যাচ্ছে। আগে ছোট আকারেরগুলো ধরা পড়তো। এখন বড়গুলো ধরা পড়ছে। দাম ভালোই পাচ্ছি আমরা।’

মেঘনায় এখন পাঙাশের মৌসুম চলছে জানিয়ে হাইমচরের জেলে জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘কার্তিক মাস থেকে শুরু করে এক-দেড় মাস পাঙাশ বেশি ধরা পড়ে। এখন বড় আকারের মাছগুলো বেশি ধরা পড়ছে।’ 
 
মেঘনায় পাঁচ থেকে ১২ কেজি ওজনের পাঙাশ ধরা পড়ছে জানিয়ে পুরানবাজার এলাকার জেলে জালাল উদ্দিন বলেন, ‘একদিনে আমার জালে ১০টি ধরা পড়েছে। বাজারে ৭০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেছি।’

আড়তদাররা জানিয়েছেন, সরবরাহের তুলনায় ক্রেতা কম থাকায় দাম কমেছে পাঙাশের। নিষেধাজ্ঞার আগে প্রতি কেজি এক হাজার থেকে এক হাজার ১০০ টাকায় বিক্রি হলেও এখন বিক্রি হচ্ছে ৭০০-৭৫০ টাকা। আগামী আরও কয়েকদিন ভালো সরবরাহ থাকার আশা তাদের।

গত এক সপ্তাহ ধরে বাজারে পাঙাশ মাছ বেশি আসছে জানিয়ে বড়স্টেশন মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের আড়তদার হাসিবুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘৯-১০ কেজি ওজনের পাঙাশ ৭০০-৭৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। তবে যখন বাজারে মাছ কম থাকে তখন এক হাজার টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়।’

মৎস্য বিভাগের তথ্যমতে, জাটকা ও মা ইলিশ সংরক্ষণের কারণে প্রতি বছর দুই মাস ২২ দিন নদীতে সব ধরনের মাছ ধরা বন্ধ থাকে। এ কারণে পাঙাশের বিচরণ ও বড় হওয়ার সুযোগ বেড়েছে। ফলে প্রতি বছর বাড়ছে উৎপাদন। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে মেঘনা নদীতে ধরা পড়েছিল ৮৪ মেট্রিক টন পাঙাশ। গত বছর তা বেড়ে হয়েছিল ৩৫০ মেট্রিক টন। এ ছাড়া জেলার অন্যান্য নদীতে ধরা পড়েছিল ৭৭ মেট্রিক টন।

ইলিশ সম্পদ ব্যবস্থাপনার কৌশল কাজে লাগছে

বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের চাঁদপুর নদীকেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. আবু কাউছার দিদার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ইলিশ সম্পদ ব্যবস্থাপনার কৌশল; যেটি আমরা প্রয়োগ করে থাকি সেটি ইলিশ ও নদীর অন্যান্য মাছের উৎপাদন বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। ফলে আমাদের নদ-নদীতে পাঙাশের উৎপাদন দিন দিন বাড়ছে। মা ইলিশ রক্ষায় ২২ দিন এবং জাটকা সংরক্ষণের জন্য দুই মাস মাছ ধরা বন্ধ থাকে। এতে পাঙাশের বিচরণ ও উৎপাদনে সহায়ক হচ্ছে। গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে পুরো মেঘনা নদীতে এক হাজার ৭০০ মেট্রিক টনে উন্নীত হয়েছে। যা পাঁচ বছরের তুলনায় অনেক বেশি।’

পাঙাশের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘নদীর পাঙাশ এক্সিলেন্স সোর্স অব লিংক প্রোটিন। যেখানে মাসল উৎপাদন ও ওজন বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। পাশাপাশি ১০০ গ্রাম মাছে প্রায় ১৫-২০ গ্রাম লিংক প্রোটিন পাওয়া যাচ্ছে। এটি শরীরের টিস্যু রিপেয়ার, এনজাইম প্রোডাকশনসহ গ্রোথের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।’

প্রচুর পরিমাণ পাঙাশ ধরা পড়ায় খুশি জেলে ও আড়তদাররা

ইলিশ সম্পদ উন্নয়নে পরিচালিত অভিযানগুলোর কারণেই নদীতে পাঙাশের উৎপাদন বেড়েছে বলে জানালেন জেলা মৎস্য কর্মকর্তা গোলাম মেহেদী হাসান। তিনি বলেন, ‘নভেম্বর থেকে জুলাই পর্যন্ত ১২ ইঞ্চির নিচে (৩০ সেন্টিমিটার) পাঙাশ মাছ ধরা নিষিদ্ধ। এর পোনা রক্ষায় অভিযান অব্যাহত আছে।’

নদীতে পাঙাশের উৎপাদন বেড়েছে

নদীর পাঙাশ বেশিরভাগই মেঘনার লোয়ার অঞ্চল অর্থাৎ চাঁদপুর, ভোলা, বরিশাল অঞ্চলে ধরা পড়ে। এ ছাড়া পাবনা, নাটোর, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জসহ আরও কয়েকটি জেলার নদীতে স্বল্প পরিমাণ ধরা পড়ে।

মৎস্য অধিদফতরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত পাঁচ বছরে দেশে মোট পাঙাশের উৎপাদন কমলেও নদীতে উৎপাদন বেড়েছে প্রায় ৫৫০ মেট্রিক টন। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে নদী, পুকুর, বিল মিলে সর্বমোট উৎপাদন হয়েছে চার লাখ ৫৩ হাজার ৩৮৩ মেট্রিক টন। এর মধ্যে মেঘনায় এক হাজার ১৩৬ মেট্রিক টন, পদ্মায় ২৫৭ মেট্রিক টন এবং অন্যান্য নদীর ১৮৩ মেট্রিক টন মিলে মোট ধরা পড়েছে এক হাজার ৫৭৬ মেট্রিক টন।

২০২২-২৩ অর্থবছরে নদী, বিল ও পুকুর মিলে উৎপাদন হয়েছে চার লাখ তিন হাজার ২৮৩ মেট্রিক টন। এর মধ্যে মেঘনায় এক হাজার ৬১৮ মেট্রিক টন, পদ্মায় ৩০৬ মেট্রিক টন এবং অন্যান্য নদীতে ১৯৯ মেট্রিক টন মিলে মোট এক হাজার ১২৩ মেট্রিক টন নদীতে ধরা পড়েছে।

/এএম/
সম্পর্কিত
নিখোঁজের ২ দিন পরে যমুনায় ভেসে উঠলো কলেজশিক্ষার্থীর মরদেহ
ক্রেতা নেই, তবু চড়া সবজির দাম
৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষসাগরে ফিরছেন জেলেরা, চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি
সর্বশেষ খবর
নিরাপদ ক্যাম্পাসের দাবিতে ঢাবি ছাত্রদলের বিক্ষোভ
নিরাপদ ক্যাম্পাসের দাবিতে ঢাবি ছাত্রদলের বিক্ষোভ
সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামানের তিন সহযোগীর দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা
সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামানের তিন সহযোগীর দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা
এস আলমের ২০০ একর জমি জব্দের আদেশ
এস আলমের ২০০ একর জমি জব্দের আদেশ
রাসায়নিক অস্ত্র কনভেনশনের সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত
রাসায়নিক অস্ত্র কনভেনশনের সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত
সর্বাধিক পঠিত
শপথের সুযোগ নেই, পরিপক্ব আচরণ প্রত্যাশা করি: আসিফ মাহমুদ
শপথের সুযোগ নেই, পরিপক্ব আচরণ প্রত্যাশা করি: আসিফ মাহমুদ
ম্যাক্রোঁকে আক্রমণ ট্রাম্পের, বললেন যুদ্ধবিরতি নয়, বড় কিছু ঘটছে
ম্যাক্রোঁকে আক্রমণ ট্রাম্পের, বললেন যুদ্ধবিরতি নয়, বড় কিছু ঘটছে
জয়ের পথে ইসরায়েল: নেতানিয়াহু
জয়ের পথে ইসরায়েল: নেতানিয়াহু
রিজার্ভ ২০ বিলিয়ন ডলারের ঘর অতিক্রম করবে কবে
রিজার্ভ ২০ বিলিয়ন ডলারের ঘর অতিক্রম করবে কবে
হিমাগারে আলু সংরক্ষণের মূল্য নিয়ে দ্বন্দ্বের অবসান, ভাড়া নির্ধারণ
হিমাগারে আলু সংরক্ষণের মূল্য নিয়ে দ্বন্দ্বের অবসান, ভাড়া নির্ধারণ