গণঅভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলায় প্রকাশ্যে হত্যা, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি ও অপরাজনীতি চলছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির এক পক্ষের নেতারা। শনিবার (১ ফেব্রুয়ারি) বিকালে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে এ অভিযোগ করেন তারা।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে উপজেলা বিএনপির সভাপতি অধ্যাপক জসিম উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘গত ১৭ বছর ধরে রাউজানের সাধারণ মানুষ স্বাভাবিকভাবে জীবনযাপন করতে পারেননি। বাকস্বাধীনতা বলতে কিছুই ছিল না। আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীদের হাতে রাউজানবাসী জিম্মি ছিল। দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর এলাকার সাধারণ জনগণের মাঝে স্বস্তি আসে। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে একটি পক্ষ যারা দীর্ঘ সময় এলাকায় ছিল না, তারা পতিত আওয়ামী লীগের সঙ্গে আঁতাত করে তাদের নেতাকর্মী নিয়ে পুরোনো কায়দায় বাড়িঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা-ভাঙচুর, লুটপাট, চাঁদাবাজি ও খুনের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে। এতে সাধারণ মানুষ আবারও নিরাপত্তাহীনতায় অসহায় হয়ে পড়েছেন।’
জসিম উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘৫ আগস্ট রাউজান থানায় হামলা করে কারা অস্ত্র লুটপাটের সঙ্গে জড়িত, তা প্রশাসনসহ সরকারের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর অজানা নয়। ওসব লোক প্রশাসনের নাকের ডগায় ঘুরে বেড়াচ্ছে। তাদের সঙ্গে প্রশাসনের সখ্যতা দেখে রাউজানের সচেতন এবং শান্তিপ্রিয় মানুষ বিস্মিত।’
তিনি আরও বলেন, ‘রাউজানের ৪৮টি ইটভাটা থেকে দুই লাখ করে প্রায় কোটি টাকা চাঁদা তুলে কার হাতে দিয়েছে একটি পক্ষ, তা কারও অজানা নয়। রাঙামাটি থেকে চট্টগ্রামগামী কাঠবোঝাই প্রতি ট্রাক থেকে বন বিভাগের মাধ্যমে ৩০০ টাকা করে চাঁদা কার কাছে যায়। গহিরা, রাউজান, মুন্সিরঘাটা, নোয়াপাড়া এলাকার বিভিন্ন ব্যবসায়ী ও লোকজনের কাছ থেকে চাঁদাবাজির কোটি কোটি টাকা কোথায় যাচ্ছে, তা জনগণ জানতে চায়। এলাকায় কাদের নেতৃত্বে চাঁদাবাজি চলছে, তা প্রশাসন জানলেও রহস্যজনকভাবে কাউকে গ্রেফতার করছে না। তারা পশ্চিম গুজরায় ১৫ শতাংশ চাঁদা না দেওয়ায় ব্রিজের নির্মাণকাজ বন্ধ করে দিয়েছে। চাহিদা মতো চাঁদা আদায় করতে না পেরে তারা সিআইপি ইয়াছিনের বাড়িতে হামলা করে অগ্নিসংযোগ করেছে। সিআইপি ফোরকানের ওপরও হামলা করেছে তারা। এ ছাড়া বিভিন্ন ব্যবসায়ী ও প্রবাসীদের জিম্মি করে চাঁদা আদায় করছে। এসব চাঁদাবাজি ও লুটপাটের টাকা কার হাতে যাচ্ছে, তা সবাই জানে। বড় অংকের চাঁদা নিয়ে আওয়ামী লীগ সন্ত্রাসীদের বিএনপিতে আশ্রয় দিচ্ছে তারা। শুধু রাউজানে নয়, তারা বাইরেও চাঁদাবাজিতে ব্যস্ত। পাহাড়তলী ইউনিয়নের তথাকথিত সাধারণ সম্পাদক দাবিদার মোজাহের আলম নগরের খুলশির এক বাসায় ডিজিএফআইয়ের পরিচয়ে ডাকাতি করতে গিয়ে প্রশাসনের হাতে ধরা পড়েছে।’
জসিম উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘গত ২৪ জানুয়ারি চাঁদা না দেওয়ায় রাউজানের নোয়াপাড়ায় জাহাঙ্গীর আলম নামের একজন শুঁটকি ব্যবসায়ীকে দিনদুপুরে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। এই হত্যাকাণ্ডকে রাজনৈতিক রূপ দেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে এবং এটাকে প্রতিদ্বন্দ্বী গ্রুপের নেতাকর্মীদের নাম জড়ানোর চেষ্টা চালাচ্ছে। আমরা বলতে চাই, এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে বিএনপির নেতাকর্মীকে যেন জড়ানো না হয়। হত্যাকাণ্ডের সময় যে সিসিটিভির ফুটেজ পাওয়া গিয়েছে, তা দেখে প্রকৃত হত্যাকারীদের গ্রেফতারের দাবি জানাচ্ছি।’
সংবাদ সম্মেলনে উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘রাউজানের এখনকার পরিস্থিতি খুবই খারাপ। সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, হত্যা, নির্যাতন ও অপরাজনীতির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিরোধ করার আহ্বান জানাচ্ছি। প্রশাসনকে চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ করছি।’
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, রাউজান উপজেলা বিএনপি দুই ভাগে বিভক্ত। এর মধ্যে একটির নেতৃত্বে আছেন চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির সভাপতি গোলাম আকবর খন্দকার। অপর অংশের নেতৃত্বে আছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমমিটির ভাইস চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী। শনিবার সংবাদ সম্মেলন করেছেন গোলাম আকবর খন্দকারের অনুসারী নেতাকর্মীরা। তারা মূলত গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীর অনুসারীদের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ করেছেন।
গত ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর রাউজানে বিএনপির এ দুই পক্ষের নেতাকর্মীদের মধ্যে অন্তত ৩০ বার সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঘটেছে নোয়াপাড়া ইউনিয়নে। এসব ঘটনায় থানায় ১২টির মতো মামলা হয়েছে। সংঘর্ষে কেউ নিহত না হলেও আহত হন উভয়পক্ষের অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন উত্তর জেলা যুবদলের সভাপতি হাসান মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন, রাউজান পৌর বিএনপির সভাপতি আবু মোহাম্মদ ও সাধারণ সম্পাদক ইফতেখার উদ্দিন খান প্রমুখ।