X
মঙ্গলবার, ১৭ জুন ২০২৫
২ আষাঢ় ১৪৩২

শতবর্ষী রেলস্টেশনটি ১৮ বছর ধরে বেহাল

আবদুল্লাহ আল মারুফ, কুমিল্লা
০৩ মার্চ ২০২৫, ০৮:০১আপডেট : ০৩ মার্চ ২০২৫, ১৫:১০

এক সময়কার ব্যস্ততম রেলওয়ে স্টেশনটি এখন সুনসান নীরব। ট্রেন আসা-যাওয়া করলেও স্টেশন বন্ধ থাকায় থামে না। ফলে নেই কোনও কোলাহল। দীর্ঘ ১৮ বছর ধরে এভাবে অযত্ন-অবহেলায় পড়ে আছে পূর্বাঞ্চল রেলওয়ের ঢাকা-কুমিল্লা-নোয়াখালী রেললাইনে অবস্থিত শতবর্ষী খিলা স্টেশন। বন্ধ হওয়ার পর থেকে চুরি হয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন স্থাপনা ও মূল্যবান মালামাল। পুনরায় চালু হবে এই স্টেশন এমন অপেক্ষায় রয়েছেন স্থানীয় লোকজন।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, রেলওয়ে স্টেশন আছে, টিকিট কাউন্টারও আছে। সকাল-সন্ধ্যা স্টেশনে জ্বলে বাতি। ট্রেনও আসে। কিন্তু যাত্রীদের যাতায়াতের ব্যবস্থা নেই। এটি কুমিল্লার তিন উপজেলার কেন্দ্রস্থল লাকসাম উপজেলার খিলা রেলওয়ে স্টেশনের বর্তমান চিত্র। ১৮ বছর ধরে মাস্টার না থাকায় যাত্রীরা টিকিট কেটে যাতায়াত করতে পারছেন না। ট্রেনগুলোও এখানে থামে না। এতে বিপাকে পড়েছেন স্থানীয়রা। দেড় যুগ ধরে স্টেশনটি বন্ধ থাকায় খিলা এলাকা অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বলে দাবি স্থানীয়দের।

কুমিল্লা রেলওয়ে কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ১৯০৩ সালে আসাম বেঙ্গল রেলওয়ের পরিচালনায় বেসরকারিভাবে লাকসাম-নোয়াখালী রেলওয়ে শাখা চালু করা হয়। এই লাইনের স্টেশন হিসেবে খিলা রেলওয়ে স্টেশন তৈরি করা হয়। ১৯০৫ সালে এই লাইনটি সরকার কিনে নেয় এবং ১৯০৬ সালে আসাম-বেঙ্গল রেলওয়ের সঙ্গে একীভূত করে দেয়। দেশ স্বাধীনের পর থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত স্টেশনটি চালু ছিল। এখনও এই রেললাইন দিয়ে উপকূল এক্সপ্রেস, ঢাকা-নোয়াখালী এক্সপ্রেস, সমতট এক্সপ্রেস ও নোয়াখালী কমিউটার ট্রেন চলাচল করছে। ২০০৯ সালে জনবল সংকটের কথা বলে কুমিল্লা অঞ্চলে ১৩টি রেলস্টেশন বন্ধ করে দেওয়া হয়। স্টেশন বন্ধ থাকায় যাত্রীরা বিনা টিকিটে ভ্রমণ করছেন। এতে সরকারও রাজস্ব হারাচ্ছে।

খিলা স্টেশন

বন্ধ হয়ে যাওয়া স্টেশনগুলোর মধ্যে রয়েছে- লাকসাম-নোয়াখালী রেল সড়কের দৌলতগঞ্জ, খিলা, বিপুলাসার, লাকসাম-চট্টগ্রাম রেল সড়কের নাওটি, লাকসাম-আখাউড়া রেল সড়কের আলী শহর, ময়নামতি, রাজাপুর, লাকসাম-চাঁদপুর রেল সড়কের শাহতলী, মৈশাদী, বলাখাল ও শাহরাস্তিসহ ১৩টি। 

স্টেশনগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ওই এলাকার যাত্রীরা দুর্ভোগে পড়েছেন। রেলওয়ের সম্পত্তি দখল হওয়ার অভিযোগ উঠেছে। অনেক প্ল্যাটফর্ম নিজেদের কাজে লাগাচ্ছেন স্থানীয় লোকজন।

রেলওয়ের কুমিল্লা কার্যালয়ের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, স্টেশন মাস্টার ও জনবল সংকটের কারণে স্টেশনগুলো বন্ধ হয়ে গেছে। স্টেশন মাস্টার নিয়োগ হলে স্টেশনগুলো পুনরায় চালু হবে।

সরেজমিনে খিলা স্টেশন ঘুরে দেখা যায়, স্টেশনের সামনে রয়েছে ট্রেন চলাচলের দুটি পথ। এর মধ্যে একটিতে মরিচা পড়েছে। আরেকটি ধুলায় ধূসর। তবে এটি দিয়ে ট্রেন চলাচলের চিহ্ন আছে। স্টেশন মাস্টারের কক্ষে ঝুলছে দুটি তালা। বুকিং কাউন্টারে বাসা বেঁধেছে মাকড়সা। পড়েছে ধুলোর আস্তরণ।

যাত্রীদের যাতায়াতের ব্যবস্থা নেই

এ ছাড়া খিলা স্টেশনের ‘খিলা’ লেখাটিও অযত্ন-অবহেলায় মুছে যাওয়ার পথে। পুরোনো কাঠের দরজা-জানালার ফাঁকে লাগানো কাচের অংশ ভেঙে গেছে। উঁকি দিয়ে অন্ধকার কক্ষে দেখা যায়, ভেতরে মাকড়সা জাল বুনেছে। স্টেশন মাস্টারের কার্যালয়ের সামনে বসেছে চায়ের দুটি দোকান। সেখানেও ক্রেতা নেই।

স্টেশনে বসা চায়ের দোকানির মালিক কামাল হোসেনের বাড়ি এখানেই। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘৪০ বছরের বেশি সময় ধরে আমি এই স্টেশনে দোকান করি। সুদিন দেখেছি, এখন দুর্দিনও দেখছি। এক যুগের বেশি সময় ধরে স্টেশনটি অচল। ২০০৮ সাল থেকে স্টেশনটিতে কোনও ট্রেন থামে না। কয়েক বছর আগেও দুই-তিন মিনিটের জন্য দাঁড়াতো, এখন আর থামে না। ফলে স্থানীয়রা ট্রেনে যাতায়াত করতে পারছেন না। কোনও কাজে আসছে না এই স্টেশন। অথচ এটির কারণেই খিলা এলাকার মানুষের উন্নয়ন হয়েছে। একসময় একমাত্র যোগাযোগ ব্যবস্থাই ছিল খিলা স্টেশন। আমরা এখান থেকে যাতায়াত করতাম।’

তিনি বলেন, ‘স্টেশনে আমার একটি দোকান, প্রতিবেশী আরেকজনের আরেকটি চায়ের দোকান। দীর্ঘদিন ধরে দুজনে ছয় হাজার করে ১২ হাজার টাকা ভাড়া দিচ্ছি। স্টেশনটি খুলবে খুলবে ভেবে অপেক্ষায় আছি আমরা। অথচ খোলার কোনও খবর নেই। আমাদের টাকাগুলো লোকসান যাচ্ছে। ক্রেতা নেই। যাত্রী থাকলেই তো ব্যবসা হবে। পুরো স্টেশন আমি ঝাড়ু দিই। সন্ধ্যায় বাতি জ্বালিয়ে দিই। সকালে এসে বন্ধ করি। পাহারাদারের মতো আছি। সকাল-বিকাল স্থানীয়রা আড্ডা দেয়। আমরা চাই স্টেশনটি চালু হোক।’

স্টেশন মাস্টারের কক্ষে ঝুলছে দুটি তালা

স্থানীয় বাসিন্দা খিলা বাজারের ব্যবসায়ী ফখরুল কাইয়ুম টুলু বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘খিলা বাজারের আজকের যে উন্নয়ন, তা কিন্তু এই রেলওয়ে স্টেশনকে ঘিরেই। এটি লাকসাম-মনোহরগঞ্জ ও নাঙ্গলকোট থানার মিলনস্থল। এখানে যাত্রীর ভিড় থাকতো সবসময়। অথচ কেন কোন কারণে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে, তা আমরা জানি না। এই এলাকার ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা, সহজ যাতায়াত, ব্যবসা-বাণিজ্যসহ নানা কারণে স্টেশনটি চালু রাখা প্রয়োজন ছিল। এখনও চাহিদা আছে। ট্রেনও চলে। কিন্তু এখানে থামে না।’

তিনি বলেন, ‘এখানে স্টেশন মাস্টার নেই। কোনও কর্মচারী নেই। সবকিছু বেহাল অবস্থায় পড়ে আছে। আমরা আবারও স্টেশনটি চালুর দাবি জানাই। এলাকার মানুষের যাতায়াতের জন্য হলেও এটি চালু হোক।’ 

খিলা রেলওয়ে স্টেশনটি কেন বন্ধ, তা জানেন না চট্টগ্রাম বিভাগীয় রেলওয়ে ব্যবস্থাপক এ বি এম কামরুজ্জামান। এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘খোঁজ নিয়ে জানতে হবে, কেন স্টেশনটি বন্ধ।’

/এএম/
সম্পর্কিত
ঈদের ফিরতি যাত্রার চতুর্থ দিনকমলাপুরে উপচে পড়া ভিড়, মাইকিং করেও মাস্ক পরানো যাচ্ছে না
ট্রেনের ফিরতি যাত্রায় স্বস্তি, নেই শিডিউল বিপর্যয়
কমলাপুরে ট্রেনে ফিরতি যাত্রীদের ঢল, নেই স্বাস্থ্যবিধির বালাই
সর্বশেষ খবর
করোনার বুস্টার ডোজ নিলেন পরিকল্পনা উপদেষ্টা
করোনার বুস্টার ডোজ নিলেন পরিকল্পনা উপদেষ্টা
দ. চীন সাগর থেকে মধ্যপ্রাচ্যের দিকে মার্কিন বিমানবাহী রণতরী
ইরান-ইসরায়েল সংঘাতদ. চীন সাগর থেকে মধ্যপ্রাচ্যের দিকে মার্কিন বিমানবাহী রণতরী
পরীক্ষা কেন্দ্রে মানতে হবে স্বাস্থ্যবিধি, পরতে হবে মাস্ক
করোনা-ডেঙ্গু সংক্রমণ বৃদ্ধিপরীক্ষা কেন্দ্রে মানতে হবে স্বাস্থ্যবিধি, পরতে হবে মাস্ক
রিজার্ভ ২০ বিলিয়ন ডলারের ঘর অতিক্রম করবে কবে
রিজার্ভ ২০ বিলিয়ন ডলারের ঘর অতিক্রম করবে কবে
সর্বাধিক পঠিত
নগরভবনে সভা করছেন ইশরাক, নামের সঙ্গে ‘মাননীয় মেয়র’
নগরভবনে সভা করছেন ইশরাক, নামের সঙ্গে ‘মাননীয় মেয়র’
ইরানে ইসরায়েলি হামলার নিন্দা থেকে সরে দাঁড়ালো ভারত?
ইরানে ইসরায়েলি হামলার নিন্দা থেকে সরে দাঁড়ালো ভারত?
ইরানের ঘুরে দাঁড়ানোর ক্ষমতা ‘অবমূল্যায়ন’ করেছে ইসরায়েল
ইরানের ঘুরে দাঁড়ানোর ক্ষমতা ‘অবমূল্যায়ন’ করেছে ইসরায়েল
তেহরানের আকাশসীমায় পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার দাবি ইসরায়েলের
তেহরানের আকাশসীমায় পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার দাবি ইসরায়েলের
ক্রিকেটার সাকিবসহ ১৫ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা
ক্রিকেটার সাকিবসহ ১৫ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা