ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলায় টিকিট কেটে মহানগর এক্সপ্রেস ট্রেনে ওঠা এক যাত্রীকে মারধর করায় রেলওয়ের এক কর্মচারীকে বরখাস্ত করা হয়েছে। রবিবার (৩০ মার্চ) বিকালে তাকে বরখাস্ত করা হয়।
বরখাস্ত হওয়া কর্মচারীর নাম কাউসার মিয়া। তিনি ওই ট্রেনের পাওয়ারকার অপারেটর হিসেবে কর্মরত ছিলেন। বিষয়টি বাংলা ট্রিবিউনকে নিশ্চিত করেছেন কসবা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ছামিউল ইসলাম।
উপজেলা প্রশাসন ও কসবা রেলওয়ে স্টেশন সূত্রে জানা গেছে, রবিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশন থেকে ঢাকাগামী মহানগর এক্সপ্রেস ট্রেনে ওঠেন কসবা উপজেলার সায়েদাবাদ এলাকার বাসিন্দা ফুল মিয়া (৬২)। তিনি কসবায় আসতে আসনবিহীন একটি টিকিট কেটে ট্রেনের পাওয়ারকার বগিতে অবস্থান করেন। একপর্যায়ে সেখানে ফাঁকা জায়গা পেয়ে বসে পড়েন। বেলা আড়াইটার দিকে ট্রেনটি ফেনী রেলওয়ে স্টেশন এলাকায় পৌঁছে। সেসময় ট্রেনের পাওয়ারকার অপারেটর কাউসার মিয়া টিকিট আছে কিনা ফুল মিয়ার কাছে জানতে চান। আসনবিহীন টিকিট দেখালে সেখানে বসায় ফুল মিয়ার কাছে ২০০ টাকা দাবি করেন কাউসার। টিকিট আছে টাকা কেন দেবো বললে খেপে গিয়ে তাকে মারধর শুরু করেন তিনি। এরপর বৃদ্ধ ফুল মিয়ার কাছে ঘটনা শুনে মোবাইলে ভিডিও করে ফেসবুকে পোস্ট করেন ট্রেনে থাকা কসবার আরেক যাত্রী। স্থানীয় লোকজন ট্রেনের উপকূল ট্রেনের একটি ফেসবুক পেজেও সেই ভিডিও পোস্ট করেন। মুহূর্তের মধ্যেই ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়ে। বিকাল সাড়ে ৩টার পর থেকে কসবার স্থানীয় লোকজন, শিক্ষার্থী, রাজনৈতিক নেতাকর্মীসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ কসবা রেলস্টেশনে জড়ো হন। বিকাল ৪টার দিকে ট্রেন অবরোধসহ অভিযুক্ত ট্রেনের কর্মচারীর শাস্তি দাবিতে তারা ট্রেনের জন্য অপেক্ষা শুরু করেন। তখন ট্রেনের চালক কসবার আগের স্টেশন মন্দবাগে ট্রেন দাঁড় করিয়ে রাখেন। ঘণ্টাখানেক অপেক্ষার পর বৃদ্ধ যাত্রীর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে কাউসারকে আটক করেন ট্রেনের নিরাপত্তাকর্মীরা। পাশাপাশি স্থানীয় লোকজন তার বিচার দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করেন।
খবর পেয়ে কসবা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ছামিউল ইসলাম, পুলিশ ও সেনাবাহিনী রেলওয়ে স্টেশনে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। বিকাল পৌনে ৫টার দিকে ট্রেনটি কসবা স্টেশনে পৌঁছে। স্থানীয় লোকজন ও ট্রেনের পরিচালকসহ অন্যদের কথা মতো কাউসার ফুল মিয়ার কাছে ক্ষমা চান। সেইসঙ্গে কাউসারকে বহিষ্কার করা হয়েছে জানালে স্থানীয়রা শান্ত হন। বিকাল ৫টার দিকে কসবা স্টেশন ছেড়ে যায় ট্রেনটি।
ইউএনও মো. ছামিউল ইসলাম বলেন, ‘ট্রেনের ওই কর্মচারী বৃদ্ধ যাত্রীর সঙ্গে খারাপ আচরণসহ তাকে মারধর করেন। এ সংক্রান্ত একটি ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল হয়। স্থানীয় জনতা, শিক্ষার্থী ও রাজনৈতিক নেতাকর্মীরা একত্র হয়ে কসবা রেলওয়ে স্টেশনে জড়ো হন। এটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা বলে স্থানীয়দের শান্ত করেছি। ট্রেনের ওই কর্মচারীকে বরখাস্ত করা হয়েছে। এ খবর পাওয়ার পর উত্তেজিত জনতা শান্ত হন।’
কসবা রেলস্টেশনের মাস্টার মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, ওই কর্মচারীকে চাকরি থেকে স্থায়ীভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। বিকাল ৫টার দিকে ট্রেনটি ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়।