চট্টগ্রামে বামপন্থী ছাত্রসংগঠনগুলোর মোর্চা গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের কর্মসূচিতে হামলার ঘটনায় করা পুলিশের মামলায় গ্রেফতার দুই আসামির একজন জামিন পেয়েছেন। বৃহস্পতিবার বিকালে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আবু বক্কর সিদ্দিক শুনানি শেষে জামিনের আদেশ দেন। আরেক আসামি মো. সেলিমের জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন বিচারক।
বিষয়টি নিশ্চিত করে নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (প্রসিকিউশন) মফিজ উদ্দিন বলেন, ‘কোতোয়ালি থানায় পুলিশের করা দ্রুত বিচার আইনের মামলায় গ্রেফতার দুই আসামিকে আদালতে হাজির করা হলে তাদের জামিনের আবেদন করেন আইনজীবীরা। এর মধ্যে ওবাইদুর রহমান নামের এক আসামি বেসরকারি বিজিসি ট্রাস্ট ইউনিভার্সিটির আইন বিভাগের অষ্টম সেমিস্টারের শিক্ষার্থী। বর্তমানে তার পরীক্ষা চলায় জামিন আবেদন মঞ্জুর করেন আদালত। অন্য আসামিকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।’
মুক্তিযুদ্ধকালে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় জামায়াত নেতা এ টি এম আজহারুল ইসলামের মৃত্যুদণ্ডাদেশ থেকে খালাসের প্রতিবাদে বুধবার বিকালে কর্মসূচি ঘোষণা করে গণতান্ত্রিক ছাত্র জোট। কর্মসূচি শুরুর পরপর সেখানে মিছিল নিয়ে আসে ‘শাহবাগবিরোধী ঐক্য’। বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে দুই পক্ষ মুখোমুখি হলে তাদের সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে পুলিশ। এ সময় শাহবাগবিরোধী ঐক্যের লোকজন ছাত্র জোটের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালান। এতে ১২ জন আহত হন।
হামলার সময় ঘটনাস্থল থেকে ওবাইদুর ও সেলিমকে আটক করে নিয়ে যায় পুলিশ। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে দ্রুত বিচার আইনে আটক দুজনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতপরিচয় ২০ জনকে আসামি করে কোতোয়ালি থানায় মামলা করে। এতে বলা হয়, আসামিরা দেশীয় অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে আধিপত্য বিস্তারের লক্ষ্য আকস্মিক ও দলবদ্ধভাবে রামদা, লোহার খন্তা নিয়ে এলাকায় মহড়া দিয়ে জনমনে আতঙ্ক, ত্রাস ও রাস্তায় যান চলাচলে বাধা দেয়।
আটক দুজনের মুক্তির দাবিতে গতকাল এশার নামাজের পর কর্মসূচি ঘোষণা করেন শাহবাগবিরোধী ঐক্যের নেতাকর্মীরা। তবে ব্যানারে তাদের নাম ইংরেজিতে ‘অ্যান্টি-শাহবাগ মুভমেন্ট’ লেখা ছিল। রাত সাড়ে ৮টার দিকে নগরের কোতোয়ালি থানার সামনে অবস্থান নেন তারা। রাত ১১টা পর্যন্ত তারা সেখানে অবস্থান করেন। পরে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে চলে যান।
এদিকে গতকালের হামলার ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক ছড়িয়ে পড়েছে। ভিডিওতে এক নারীসহ দুজনকে পেছন থেকে এক ব্যক্তিকে লাথি মারতে দেখা যায়। যে ব্যক্তিকে লাথি মারতে দেখা গেছে, তিনি ছাত্রশিবিরের সাবেক কর্মী বলছেন ছাত্র জোটের নেতাকর্মী ও প্রত্যক্ষদর্শীরা। তিনি ‘শিবির ক্যাডার’ হিসেবে পরিচিত বলছেন তারা।
তবে ছাত্রশিবির বলছে, তিনি শিবিরের দায়িত্বশীল কোনও পদে নেই। শিবিরের কেউ এ কাজে জড়িত নন। ১৫ সেকেন্ডের ওই ভিডিও দেখা যায়, হামলার পর প্রেসক্লাবের পাশে একটি ভবনের নিচে আশ্রয় নেন গণতান্ত্রিক ছাত্র জোটের নেতাকর্মীরা। সেখানে একজন পুলিশ সদস্যকেও দেখা গেছে। ওই ব্যক্তি পুলিশের চোখ এড়িয়ে নেতাকর্মীদের পেছন যান। সেখানে দাঁড়িয়ে হঠাৎ একজনকে লাথি মারেন তিনি। এরপর ঘুরে আবার আরেক নারীকে লাথি মারেন।
শাহবাগবিরোধী ঐক্যের প্রধান সমন্বয়কারী আবরার হাসান রিয়াদ বলেন, শাহবাগ আন্দোলনের নামে এসব বাম সংগঠন শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদ কায়েমে সহযোগিতা করেছিল। এখন তারা আবার ষড়যন্ত্র করছে। আমরা প্রতিহত করবো।