লক্ষ্মীপুরে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-৩-এর স্টেনোটাইপিস্ট মো. আশরাফুজ্জামানকে মারধরের ঘটনায় দুই আইনজীবীর বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।
তারা হলেন- আইনজীবী আশিকুর রহমান ও মিরাজ উদ্দিন। তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছেন অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সদর আদালতের বিচারক আবু সুফিয়ান মোহাম্মদ নোমান।
সোমবার (১৬ জুন) দুপুরে চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের প্রশাসনিক কর্মকর্তা ইমরান হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এর আগে, রবিবার আহত আশরাফুজ্জামান বাদী হয়ে এ মামলা করেন। অভিযুক্ত আইনজীবী আশিক লক্ষ্মীপুর পৌর শহরের দক্ষিণ মজুপুর এলাকার আলী আজ্জমের ছেলে ও মিরাজ রামগতি উপজেলার চরসীতা গ্রামের হরমুজুল হকের ছেলে।
এজাহার উল্লেখ করা হয়, ঈদের ছুটি শেষে রবিবার আদালতের প্রথম কার্যদিবস ছিল। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে অভিযুক্ত আইনজীবী মিরাজ ও আশিক সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-৩-এর এজলাসে আসেন। একপর্যায়ে তারা চিৎকার-চেঁচামেচি করে জোরপূর্বক বিচারপ্রার্থীদের বের করে দেওয়ার চেষ্টা চালায়। কিন্তু বিচারপ্রার্থীরা বের হতে অস্বীকার করে। এতে অভিযুক্তরা এজলাসের দরজা বন্ধ করে দেয় ও পরে লাথি মেরে দরজা ভেঙে ফেলার চেষ্টা করে। এ সময় স্টেনোটাইপিস্ট আশরাফুজ্জামান ও জারিকারক আনোয়ার হোসেন সুমন তাদের বাধা দেয়। এ ঘটনায় ক্ষিপ্ত হয়ে তারা আশরাফুজ্জামানের মাথায় আঘাত করে। আইনজীবী আশিকের আঘাতে তার বাম চোখের কোনায় রক্তাক্ত জখম হয়। একপর্যায়ে তার পরনে থাকা জামা ছিঁড়ে ফেলে। তাকে বাঁচাতে এলে জারিকারক সুমনও মারধরের শিকার হয়।
আদালত সূত্র জানায়, গত ৬ জুন সদর মডেল থানায় লক্ষ্মীপুর জজ আদালতের আইনজীবী আবু তৈয়ব একটি চুরির মামলা দায়ের করেন। এতে রায়পুর প্রিন্সিপাল কাজী ফারুকী স্কুল অ্যান্ড কলেজের ইংরেজি বিভাগের প্রভাষক আহমেদ কাউসার উদ্দিন জামান ও ট্রাকচালক রুবেল হোসেন গ্রেফতার হয়ে কারাগারে ছিলেন। গত ৯ জুন তারা আদালতে জামিন প্রার্থনা করেন। সেখানে উল্লেখ করা হয়- মামলার বাদী আইনজীবী, এজন্য আদালতে আসামিদের পক্ষে কোনও আইনজীবী জামিন শুনানিতে অংশ নেয়নি। আইনজীবী না পেয়ে জামিন শুনানির জন্য আসামিরা লক্ষ্মীপুর লিগ্যাল এইড অফিসে আইনি সহায়তা চায়। সেখান থেকে দুই জন আইনজীবীকে শুনানি করতে বলা হলেও তারা হেনস্তার ভয়ে জামিন শুনানিতে অংশ নেননি। এরপর ১০ জুন সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-৩-এর বিচারক এম সাইফুল ইসলাম আসামিদের জামিন মঞ্জুর করেন। ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করেই রবিবার আইনজীবীরা আদালত বর্জনের ঘোষণা দেন। এতে আদালতের কার্যক্রম চলাকালে তারা এসে বাধা সৃষ্টি করেন। পরে তারা কর্মচারীদের ওপর হামলা চালায়।
আইনজীবী আশিকুর রহমান বলেন, ‘আদালত বর্জনের বিষয় জানাতে আমরা এজলাসে যাই। এ ঘটনায় স্টেনোটাইপিস্টসহ কর্মচারীরা আমাদের ওপর হামলা করে। আমাকেই তারা প্রথম আঘাত করেছে। আমি কাউকে আঘাত করিনি।’
লক্ষ্মীপুর জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মো. রফিক উল্যাহ বলেন, ‘আইনজীবীদের বিরুদ্ধে মামলার ঘটনাটি নিয়ে এখনও আমরা কোনও সিদ্ধান্ত নিইনি। মামলা নিয়ে অফিসিয়ালভাবে বসে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। আমাদের কার্যক্রম স্বাভাবিক রয়েছে। আমরা চাই না কোর্টের পরিস্থিতি উত্তপ্ত হোক।’