X
মঙ্গলবার, ০৭ মে ২০২৪
২৪ বৈশাখ ১৪৩১

গাজরে ভাগ্য বদল চাঁন মিয়ার

মতিউর রহমান, মানিকগঞ্জ
১০ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ১৪:৩৬আপডেট : ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ১৪:৫৫

গাজরের ক্ষেতে কাজ করছেন চাষিরা একটা সময় সিংগাইরের চর দূর্গাপুর গ্রামের চাঁন মিয়ার (৫০) দিন চলতো অভাব-অনটনে। ছিল টানাটানির সংসার। এখন তিনি সচ্ছল। গাজর চাষে পাল্টে গেছে চাঁন মিয়ার ভাগ্য। গাজর চাষ করেই তিন মেয়েদের পড়াশোনা করিয়ে বিয়ে দিয়েছেন। ছেলেকে বিদেশে পাঠিয়েছেন।

সম্প্রতি ওই প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হয় চাঁন মিয়ার। তিনি জানালেন, ১২ বছর ধরে গাজর আবাদ করছেন। প্রথম দিকে অল্প জমিতে চাষ শুরু করেন তিনি। লাভ হওয়ায় ধীরে ধীরে তিনি গাজর চাষের পরিমাণ বাড়াতে শুরু করেন। চলতি বছর তিনি ২০ বিঘা জমিতে গাজর চাষ করেছেন। ইতোমধ্যে আট বিঘার মতো জমির গাজর বিক্রি করেছেন। ফলন ও দাম-দুটোই ভালো পেয়েছেন।

গাজরের ইউনিয়ন জয়মন্টপ

সিংগাইরের জয়মন্টপ ইউনিয়নের অনেকে গাজর চাষ করেন। বিশেষ করে শীত মৌসুমে এ ফসলের আবাদ করেন। যাদের জমি নেই তারা অন্যের বর্গা নিয়ে গাজর আবাদ করে লাভবান হয়েছেন।

গাজরের ক্ষেতে চাঁন মিয়া কথা হয় দূর্গাপুর গ্রামের কৃষক জাহেদ আলীর সঙ্গে। তিনি বলেন, চলতি বছর সাত বিঘা জমিতে গাজর চাষ করেছেন। জমি তৈরি,গাজরের চারা, এবং কীটনাশক বাবদ ১ লাখ ৮০ হাজার টাকার মতো খরচ হয়েছে। আর তিন মাসে তিনি ১ লাখ ৭০ হাজার টাকা আয় করেছেন। গাজর পরিপক্ক হওয়ার পর ক্ষেত থেকেই পাইকারি ব্যবসায়ীর কাছে ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা বিক্রি করেছেন।

ভাকুম গ্রামের হুকুম আলী গত ২৫ বছর ধরে গাজর চাষ করছেন। তিনি বলেন, অন্য সবজির চেয়ে গাজর চাষে শ্রম কম দিতে হয়, দামও ভালো পাওয়া যায়। এবার ৯ বিঘা জমিতে গাজর আবাদ করেছেন।

চাঁন মিয়া, জাহেদ আলী আর হুকুম আলীর মতো পার্শ্ববর্তী চর দূর্গাপুর গ্রামের আবদুল হান্নান, আক্কাস আলী, ভাকুম গ্রামের জালাল শিকদার, সুরুজ বেপারী, গোলাম নবী, আজিমপুর গ্রামের দুলাল শেখসহ অনেকেরই গাজর চাষে দিন বদলে গেছে।

এ বিষয়ে জয়মন্টপ এলাকার দায়িত্বপ্রাপ্ত উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা ইমরান হোসেন বলেন, আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারে গাজর চাষিদের উৎসাহিত করার পাশাপাশি তাদেরকে প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ দেওয়া হয়ে থাকে।

গাজরের ক্ষেত সিংগাইর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা টিপু সুলতান বলেন, এ বছর উপজেলায় ১ হাজার ১২৫ হেক্টর জমিতে গাজরের আবাদ হয়েছে। এতে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৪৩ হাজার মেট্রিক টন। উপজেলায় ওরেঞ্জ কিং জাতের গাজরের আবাদ হয়ে থাকে। এ জাতের বীজ জাপান থেকে ব্যক্তিগত উদ্যোগে আমদানি করতে হয়। তবে বীজের গুণাগুণ ও মূল্য নির্ধারণে বীজ বিক্রেতাদের সতর্ক করা হয়েছে।

তিনি বলেন, সিংগাইরের মাটি ও পরিবেশ গাজর চাষের উপযোগী। স্বাদ ও মানে উৎকৃষ্ট হওয়ায় সারাদেশেই এখানকার গাজরের সুনাম ছড়িয়ে পড়েছে।

দূর্গাপুর গ্রামের পাইকারি ব্যবসায়ী আবু বকর জানালেন, এবার তিনি জয়মন্টপ এলাকায় প্রায় ৭০ বিঘা জমির গাজর কিনেছেন। ইতিমধ্যে ২৫ বিঘা জমির গাজর গাজীপুরের কোনাবাড়ী এলাকায় বাজারে পাঠিয়েছেন। এতে তার প্রায় ১ লাখ টাকা লাভ হবে।

ক্ষেত থেকে তোলা গাজর তার মতো দেশের বিভিন্ন জেলার ব্যবসায়ীরা গাজর কিনতে আসেন জয়মন্টপে। স্থানীয়ভাবে উপজেলা ও জেলা সদরের বিভিন্ন বাজারে পাঠানো হয়। তবে এসব গাজরের অধিকাংশ পাঠানো হয় ঢাকার কাওরান বাজারসহ অন্যান্য জেলাগুলোতেও।

জয়মন্টপ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন বলেন, স্থানীয়ভাবে একটি হিমাগার নির্মাণ করা হয়েছে। এলাকায় আরও হিমাগার থাকলে গাজরের বীজ ও গাজর সংরক্ষণ করে লাভবান হতো এলাকার কৃষক।  

 

/এসটি/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে শিলাইদহ কুঠিবাড়িতে নানা আয়োজন
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে শিলাইদহ কুঠিবাড়িতে নানা আয়োজন
তুরস্ক নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ শুভেচ্ছা সফরে চট্টগ্রাম বন্দরে
তুরস্ক নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ শুভেচ্ছা সফরে চট্টগ্রাম বন্দরে
কৃষকদের হয়রানি করলে কঠোর ব্যবস্থা, খাদ্যমন্ত্রীর হুঁশিয়ারি
কৃষকদের হয়রানি করলে কঠোর ব্যবস্থা, খাদ্যমন্ত্রীর হুঁশিয়ারি
গাজায় ত্রাণ প্রবেশের প্রধান দুটি ক্রসিং বন্ধ রেখেছে ইসরায়েল: জাতিসংঘ
গাজায় ত্রাণ প্রবেশের প্রধান দুটি ক্রসিং বন্ধ রেখেছে ইসরায়েল: জাতিসংঘ
সর্বাধিক পঠিত
ভিটামিন ডি কমে গেলে কীভাবে বুঝবেন?
ভিটামিন ডি কমে গেলে কীভাবে বুঝবেন?
যে শিশুকে পাচারের অভিযোগে মিল্টনের বিরুদ্ধে মামলা
যে শিশুকে পাচারের অভিযোগে মিল্টনের বিরুদ্ধে মামলা
ছাত্রলীগ সহসভাপতি সাদ্দামের বছরে আয় ২২ লাখ, ব্যাংকে ৩২ লাখ, উপহারের স্বর্ণ ৩০ ভরি
হরিরামপুর উপজেলা নির্বাচনছাত্রলীগ সহসভাপতি সাদ্দামের বছরে আয় ২২ লাখ, ব্যাংকে ৩২ লাখ, উপহারের স্বর্ণ ৩০ ভরি
বৃষ্টি ও বন্যার কী পূর্বাভাস পাওয়া গেলো?
বৃষ্টি ও বন্যার কী পূর্বাভাস পাওয়া গেলো?
যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে রাজি হামাস, অগ্রহণযোগ্য বলছে ইসরায়েল
যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে রাজি হামাস, অগ্রহণযোগ্য বলছে ইসরায়েল