X
শনিবার, ১৮ মে ২০২৪
৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

ছোট ভাইয়ের লাশটাও পেলেন না রোকসানা!

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি
০৫ এপ্রিল ২০২১, ২০:৪৯আপডেট : ০৫ এপ্রিল ২০২১, ২০:৫৫

শীতলক্ষ্যার তীরে নদীতে পা ভিজিয়ে ভাইয়ের জন্য অপেক্ষা করছেন মুন্সীগঞ্জের ইসলামপুর এলাকার বাসিন্দা রোকসানা আক্তার। নদীর ওপারে নিজের চোখেই দেখছেন তোলা হচ্ছে ডুবে যাওয়া লঞ্চটিকে। কিন্তু সন্ধান মেলেনি রোকসানার ছোট ভাই তানভীর ইসলামের। বারবার ইচ্ছে করেছে লঞ্চের কাছে গিয়ে দেখতে। কিন্তু এপার থেকে কোনও ট্রলারকেই ওপারে যেতে দিচ্ছে না উদ্ধারকারী দল। কয়েকবার পুলিশ সদস্যদের কাছে অনুরোধ করেও লাভ হয়নি।

সোমবার (৫ এপ্রিল) দুপুরে শীতলক্ষ্যার তীরে অসংখ্য স্বজনদের মতো বসে ছিলেন রোকসানা। তবে সবার থেকে একটু ব্যতিক্রম ছিলেন তিনি। অন্যদের মতো আহাজারি কিংবা পুলিশের কাছে বারবার ছুটে না গিয়ে চুপচাপ বসে আছেন নদী তীরে। শীতলক্ষ্যার নোঙরা কালো পানিতে রেখেছেন পা ভিজিয়ে। যেন দেহের ভেতর জ্বলতে থাকা বিষাদের আগুন শীতলক্ষ্যার পানিতে ঠান্ডা করে নিচ্ছেন। অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে অপেক্ষার প্রহর গুনছেন কেবল।

ছোট ভাই তানভীর ইসলাম (১৯) মুন্সীগঞ্জ সদরের ইসলামপুর এলাকার বাসিন্দা। সবে মাত্র এসএসসি শেষ করে কলেজে ভর্তি হয়েছে। মুন্সীগঞ্জের স্থানীয় একটি কলেজে শুরু করেছে পড়াশোনা। সোমবার লকডাউন হবে দেশজুড়ে। এরপর ঘোরাঘুরি বন্ধ। কৈশোরের দুরন্তপনার কারণে লঞ্চে চড়ে এসেছিল নারায়ণগঞ্জে। সন্ধ্যায় বাড়ি ফেরার পথে আবারও লঞ্চে উঠে সে। কিন্তু বাড়িতে আর ফেরেনি তানভীর।

রোকসানা বলেন, ‘টিভিতে লঞ্চ ডোবার খবর পেয়ে ভাবতেই পারেননি আমার ভাই এই লঞ্চে থাকতে পারে। কিন্তু রাত বাড়তেই ভাইয়ের ফোন বন্ধ এবং খোঁজ না পাওয়ায় অজানা শঙ্কায় ছুটে আসি নারায়ণগঞ্জে। রাত ৩টায় এসে পৌঁছায় নদীর তীরে। তারপর থেকে কেবল অপেক্ষার প্রহর গুনছি। জীবিত বা মৃত, কোনও একভাবে নিজের ছোট ভাইকে শেষবারের মতো দেখতে চাই। ভাইটাকে বুকে জড়িয়ে ফিরতে চাই বাড়িতে।’

এই প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা শেষ করতেই বাড়ি থেকে ফোন আসে, ওপাশ থেকে সন্ধান মিলেছি কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে গুমরে ওঠে চাপা কান্না। তিনি বলে ওঠেন, ‘আমার ভাইডারে পাই নাই গো...ভাইডারে পাই নাই...।’

উল্লেখ্য, রবিবার (৫ মার্চ) বিকালে যাত্রীবাহী লঞ্চ ‘সাবিত আল হাসান’ নারায়ণগঞ্জ থেকে মুন্সীগঞ্জের উদ্দেশে ছেড়ে যায়। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে যাত্রীবাহী লঞ্চটি কয়লাঘাট এলাকায় নির্মাণাধীন শীতলক্ষ্যা সেতুর নিচে এলে এসকে-৩ নামের একটি কোস্টার জাহাজ তাকে ধাক্কা দিয়ে ডুবিয়ে দেয়। সোমবার বেলা সাড়ে ১২টায় ডুবে যাওয়া লঞ্চ ‘সাবিত আল হাসান’কে উদ্ধার করে জাহাজ ‘প্রত্যয়’। পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস, কোস্টগার্ড ও নৌ বাহিনীর সম্মিলিত অভিযানের ১৯ ঘণ্টা পর শেষ হয়েছে উদ্ধার অভিযান। অভিযানে ২৭টি মরদেহ উদ্ধার করেছে তারা। নিহত প্রত্যেক পরিবারকে ২৫ হাজার টাকা করে প্রাথমিক অনুদান প্রদান করছে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসন।

আরও পড়ুন...

ঘাতক জাহাজটিকে খুঁজছে প্রশাসন

২৭ মরদেহ উদ্ধারের পর অভিযান সমাপ্ত ঘোষণা

শীতলক্ষ্যায় ডুবে যাওয়া লঞ্চে মিললো আরও ১৯ মরদেহ

ডুবে যাওয়া লঞ্চ থেকে ৫ নারীর লাশ উদ্ধার

শীতলক্ষ্যায় অর্ধশতাধিক যাত্রী নিয়ে লঞ্চডুবি

 

/আইএ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
সেপটিক ট্যাংক পরিষ্কার করতে নেমে দুই শ্রমিকের মৃত্যু
সেপটিক ট্যাংক পরিষ্কার করতে নেমে দুই শ্রমিকের মৃত্যু
একবছরের জন্য ঘোষিত চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগের কমিটি সাড়ে ৫ বছর পর বিলুপ্ত
একবছরের জন্য ঘোষিত চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগের কমিটি সাড়ে ৫ বছর পর বিলুপ্ত
পেঁয়াজ চুরির অভিযোগে এক ব্যক্তিকে খুঁটিতে বেঁধে নির্যাতন
পেঁয়াজ চুরির অভিযোগে এক ব্যক্তিকে খুঁটিতে বেঁধে নির্যাতন
অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ঢাকা আসছেন
অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ঢাকা আসছেন
সর্বাধিক পঠিত
মামুনুল হক ডিবিতে
মামুনুল হক ডিবিতে
৩০ শতাংশ বেতন বৃদ্ধির দাবি তৃতীয় শ্রেণির সরকারি কর্মচারীদের
৩০ শতাংশ বেতন বৃদ্ধির দাবি তৃতীয় শ্রেণির সরকারি কর্মচারীদের
যাত্রীর জামাকাপড় পুড়িয়ে পাওয়া গেলো সাড়ে চার কোটি টাকার স্বর্ণ
যাত্রীর জামাকাপড় পুড়িয়ে পাওয়া গেলো সাড়ে চার কোটি টাকার স্বর্ণ
সুপ্রিম কোর্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের স্থান পরিদর্শন প্রধান বিচারপতির
সুপ্রিম কোর্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটের স্থান পরিদর্শন প্রধান বিচারপতির
আমেরিকা যাচ্ছেন ৩০ ব্যাংকের এমডি
আমেরিকা যাচ্ছেন ৩০ ব্যাংকের এমডি