জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে (এনবিআর) আবারও উত্তেজনা চরমে উঠেছে। এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমানের অপসারণ দাবিতে চলমান আন্দোলনের মধ্যে ‘প্রতিহিংসাপরায়ণ ও বিধিবহির্ভূত’ বদলি আদেশের প্রতিবাদে মঙ্গলবার (২৪ জুন) প্রতীকী কর্মসূচি পালন করেছেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এদিন বদলি হওয়া পাঁচ জন উপ-কর কমিশনার নতুন কর্মস্থলে যোগ না দিয়ে রাজস্ব ভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বদলির আদেশ ছিঁড়ে ফেলেন।
রবিবার (২২ জুন) পাঁচ উপ-কর কমিশনারকে তাৎক্ষণিক বদলি করে এনবিআর। এর মধ্যে দুজন ছিলেন আয়কর গোয়েন্দা ও তদন্ত ইউনিটে, একজন বোর্ড অফিসে এবং বাকি দুজন ঢাকার কর অঞ্চল-১৬ ও কুমিল্লা কর অঞ্চলে কর্মরত ছিলেন।
বদলিকৃত কর্মকর্তারা হলেন— উপ-কর কমিশনার শাহ্ মোহাম্মদ ফজলে এলাহী, যাকে আয়কর গোয়েন্দা ও তদন্ত ইউনিট থেকে ময়মনসিংহ কর অঞ্চলে বদলি করা হয়েছে; উপ-কর কমিশনার মোহাম্মদ শিহাবুল ইসলাম, যাকে কর অঞ্চল-১৬ (ঢাকা) থেকে খুলনা কর অঞ্চলে; এবং উপ কর কমিশনার মো. আব্দুল্লাহ ইউসুফ, যাকে এনবিআর বোর্ড অফিস থেকে বগুড়া কর অঞ্চলে বদলি করা হয়েছে।
এছাড়া উপ-কর কমিশনার ইমাম তৌহিদ হাসান শাকিলকে আয়কর গোয়েন্দা ইউনিট থেকে কুমিল্লা কর অঞ্চলে এবং উপ কর কমিশনার নুসরাত জাহান শমীকে কুমিল্লা থেকে রংপুর কর অঞ্চলে বদলি করা হয়েছে।
তবে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা নতুন কর্মস্থলে যোগ না দিয়ে বদলির আদেশের কপি সংবাদ সম্মেলনে ছিঁড়ে ফেলেন এবং একে ‘চাকরি বিধি ও মানবিকতার পরিপন্থি, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত শাস্তিমূলক ব্যবস্থা’ হিসেবে আখ্যা দেন।
চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ক্ষোভ ও অভিযোগ
সংবাদ সম্মেলনে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের নেতারা অভিযোগ করেন, বদলির মাধ্যমে আন্দোলনকারীদের দমন করা হচ্ছে। তারা বলেন, ‘প্রতিহিংসামূলক এই বদলিগুলো সরকারের ঘোষিত আলোচনাকেন্দ্রিক সমাধান প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করছে। এনবিআর চেয়ারম্যান ব্যক্তিগত জিঘাংসা চরিতার্থ করতে চাকরি বিধির তোয়াক্কা করছেন না।’
তারা আরও অভিযোগ করেন, অফিস সময় শেষে নিজেদের পূর্বঘোষিত সেমিনার আয়োজনের জন্য বারবার অনুরোধ করা হলেও কক্ষ বরাদ্দ দেওয়া হয়নি, বরং চিঠি তিনি ছুড়ে ফেলে দেন।
শাটডাউনের হুমকি
চলমান উত্তেজনার মধ্যে সোমবার এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ ঘোষণা দেয়, চেয়ারম্যানকে আগামী শুক্রবারের মধ্যে অপসারণ না করা হলে শনিবার (২৯ জুন) থেকে কর, কাস্টমস ও ভ্যাট বিভাগের সব দপ্তরে ‘লাগাতার কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি শুরু হবে। আন্তর্জাতিক যাত্রীসেবার ক্ষেত্রে শাটডাউন কার্যকর হবে না বলে জানানো হয়।
পটভূমি ও প্রেক্ষাপট
এর আগে মে মাসে সরকার এনবিআর পুনর্গঠনের অংশ হিসেবে দুটি বিভাগ— রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা— গঠনের জন্য অধ্যাদেশ জারি করে। এতে অসন্তোষ দেখা দিলে কর্মকর্তারা কলম বিরতি ও বিক্ষোভ শুরু করেন। সরকারের পক্ষ থেকে আলোচনার আশ্বাসের পর আন্দোলন কিছুটা স্তিমিত হয়। তবে চেয়ারম্যানের পদত্যাগ দাবি ও অপসারণের বিষয়টি আন্দোলনকারীদের মধ্যে এখনও অটল রয়েছে।
বর্তমানে এনবিআর চেয়ারম্যান সেনা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিরাপত্তায় অফিস করছেন। যদিও দাপ্তরিক কার্যক্রম চালু রয়েছে, তবু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে তার সম্পর্ক এখনও দূরত্বপূর্ণ।
উল্লেখ্য, এনবিআরের চলমান অস্থিরতা শুধু প্রতিষ্ঠানটির অভ্যন্তরীণ পরিবেশ নয়, রাজস্ব আহরণ ও কর প্রশাসনের কার্যক্রমেও প্রভাব ফেলছে। সংশ্লিষ্ট মহল মনে করছে, দ্রুত রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক সমঝোতার মাধ্যমে সংকট নিরসন না হলে এর প্রভাব পুরো অর্থনীতিতেই নেতিবাচকভাবে পড়তে পারে।