X
শুক্রবার, ০৩ মে ২০২৪
১৯ বৈশাখ ১৪৩১

হৃদয় মণ্ডলের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের উসকানি দেয় বহিরাগতরা

বাংলা ট্রিবিউন রিপোর্ট
০৮ এপ্রিল ২০২২, ১৯:৫৬আপডেট : ০৮ এপ্রিল ২০২২, ২০:১৫

মুন্সীগঞ্জের বিনোদপুর রামকুমার উচ্চবিদ্যালয়ের বিজ্ঞানের শিক্ষক হৃদয় চন্দ্র মণ্ডলকে ধর্ম অবমাননার অভিযোগে আটক করা হয়েছে। গ্রেফতারের আগে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে তার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় বহিরাগতদের ইন্ধনে স্কুলে কয়েকজন শিক্ষার্থী হৃদয় মণ্ডলকে অপমান করারও চেষ্টা করে। পরে তারা সংঘবদ্ধভাবে শিক্ষকের বাড়িতে হামলারও চেষ্টা চালায়। 

‘ধর্ম অবমাননার কথা শুনিনি, প্রধান শিক্ষকের কথায় মামলা করেছি’

ঘটনার দিন স্কুলে যা ঘটেছিল তার বর্ণনা দিয়েছেন স্থানীয় এক সাংবাদিক। তিনি বলেন, একজন শিক্ষকের বিরুদ্ধে আন্দোলন হচ্ছে এরকম খবর পেয়ে আমি সেই স্কুলে যাই। স্কুলের ভেতর শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন স্থানে জটলা করে দাঁড়িয়েছিল। স্কুলের ভেতর বহিরাগত মানুষও ছিল অনেক। আমি কয়েকজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করলাম। তারা জানায়, নবী ও ধর্ম নিয়ে অবমাননাকর মন্তব্য করেছে তাদের স্কুলের বিজ্ঞান শিক্ষক। তারা আমাকে বলছিল, বিজ্ঞান আগে না ধর্ম আগে, বিজ্ঞান আর ধর্মের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে শিক্ষক ধর্ম অবমাননাকর মন্তব্য করেছেন। তবে ১০ জন শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বললেও একজনও স্পষ্ট করে বলতে পারেনি তাদের স্যার আসলে কী বলেছেন। 

হৃদয় মণ্ডলের পরিবারে আতঙ্ক, স্কুলে যাচ্ছে না ছেলে

এ সময় বহিরাগতদের ইন্ধনে শিক্ষককে অপমান করার চেষ্টা হয় বলে জানান ওই সাংবাদিক। তিনি বলেন, স্কুলে অবস্থানকালে দেখতে পাই কিছু শিক্ষার্থী জুতার মালা বানিয়ে নিয়ে এসেছেন। যে বানিয়ে এনেছে তার স্কুল ইউনিফর্ম ছিল না। সেই-ই মূলত শিক্ষার্থীদের একত্রিত করেছে আন্দোলনের জন্য। ওই কিশোর জুতার মালা নিয়ে এসে স্কুলের অফিসের সামনে গিয়ে বলছিল, স্যারকে  জুতার মালা পরে এলাকা ঘুরতে হবে। এরপর সেখানে পুলিশ আসে। পুলিশ সবাইকে মাঠের সামনে একত্রিত করে বোঝানোর চেষ্টা করে।

বিজ্ঞানের শিক্ষক হৃদয় মণ্ডলকে ফাঁসানো হয়েছে

পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আন্তরিক চেষ্টা চালায় জানিয়ে ওই সাংবাদিক বলেন, পুলিশের এএসপি তখন বলেন, তোমরা শান্ত হও, এ ঘটনা আমরা দেখছি। তোমরা ক্লাসে ফিরে যাও। আমাদের ওপর ভরসা রাখতে পারো। আমি তখন ছাত্রদের ভিড়ের মধ্যে দাঁড়িয়েছিলাম। দুই জন বহিরাগত ব্যক্তি এ সময় ছাত্রদের উসকে দিয়ে বলেছে, ‘তোরা পুলিশের কথা শুনবি না। জুতার মালা পরে ঘুরতেই হবে।’ এ পরিস্থিতিতে বহিরাগত দুই জনের নাম-পরিচয় নিশ্চিত হতে পারিনি। ছাত্ররাও পুলিশের কথা শুনছিল না। এমনকি তারা পুলিশের কাছেও তাদের শিক্ষককে জুতার মালা পরে ঘুরতে বলে। কিন্তু পুলিশ তাদের সরিয়ে দেয়। পরে বহিরাগত অনেক মানুষ স্কুলের ভিতর আসার চেষ্টা করে। তখন স্কুলের গেট বন্ধ করে দেওয়া হয়। ছাত্ররাও আরেকটি গেট দিয়ে বাইরে চলে যায়। তারা অনেক উত্তেজিত ছিল। এ সময় স্কুলের পাশেই ছাত্ররা শিক্ষকের বাসার সামনে গিয়ে কিছু একটা করার চেষ্টা করছিল। কিন্তু পুলিশ তা হতে দেয়নি। পরে শিক্ষককে পুলিশের গাড়িতে করে থানায় নেওয়া হয়। 

যে কারণে জামিন হয়নি বিজ্ঞানের শিক্ষক হৃদয় মণ্ডলের

শিক্ষক হৃদয় চন্দ্র মণ্ডলের স্ত্রী ববিতা হালদার বলেন, ঘটনার দিন আমি হাসপাতালে ডিউটিতে ছিলাম। আমার ছেলে ফোন করে জানায়, অনেক মানুষ লাঠিসোঁটা নিয়ে আমাদের বাড়ি ঘেরাও করেছে। তারা দরজা ধাক্কাচ্ছিল। ওরা তার বাবাকে গালিগালাজ করছিল। তারা স্লোগান দিচ্ছিল- মণ্ডলের গালে জুতা মারো তালে তালে। পরে পুলিশ তাদের সরিয়ে দেয়। 

প্রধান শিক্ষক মো. আলাউদ্দিন আহম্মেদ ঘটনা দিনের বর্ণনা দিয়ে বলেন, এসএসসি মডেল টেস্ট পরীক্ষার পর কিছু শিক্ষার্থী আমার কাছে একটি আবেদন নিয়ে আসে। তারা অভিযোগ করেন, শিক্ষক হৃদয় চন্দ্র মণ্ডল আমাদের মহানবী মোহাম্মদ (সা.)-কে নিয়ে কটূক্তি করেছে। ছাত্ররা তার শাস্তি চায়। তখন আমি তাদের বলি, শিক্ষক যদি এ রকম কিছু বলে থাকে তাহলে শাস্তি হবে। শিক্ষার্থীদের আশ্বস্ত করে ফেরত পাঠিয়ে দেই। কিন্তু, কিছুক্ষণ পর তারা স্কুলের মাঠে বিক্ষোভ শুরু করে, সেখানে স্থানীয়রাও ছিল। পরে মাইকিং করে বহিরাগতদের স্কুল মাঠ ত্যাগ করতে বলা হয়। তবে তা না হওয়ায় পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে ভেবে পুলিশকে খবর দেই।

এদিকে মামলার বাদী স্কুলের ইলেকট্রিশিয়ান মো. আসাদ বলেন, ঘটনার দিন আমি স্কুলেই ছিলাম। শিক্ষক ক্লাসে কি বলেছেন, তা আমি শুনিনি। শিক্ষার্থীরা যখন বিক্ষোভ করছিল, তখন তাদের কাছ থেকে শুনেছি শিক্ষক হৃদয় চন্দ্র মণ্ডল ধর্ম অবমাননা করে ক্লাসে কথা বলেছেন। শিক্ষার্থীরা নাকি সেটা রেকর্ডও করেছে। কিন্তু, সেটাও আমি শুনিনি। তবে, প্রধান শিক্ষকের নির্দেশে আমাকে মামলার বাদী বানানো হয়েছে। ঘটনা নিয়ে প্রধান শিক্ষকসহ অন্যান্য শিক্ষক, অভিভাবক ও পুলিশরা নিজেদের মধ্যে অনেক কথাবার্তা বলেছেন। তবে সেসব আমি কিছুই জানি না। আমি পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেছি। মামলা বা আইনের কোনও ধারা বুঝি না। এমনকি ঠিকমতো রিডিংও পড়তে পারি না। এজাহার লিখে আমার সামনে পাঠ করে শোনানো হয়েছে। তারপরে আমি স্বাক্ষর করেছি। 

উপজেলা চেয়ারম্যান আনিসউজ্জামান আনিস বলেন, ঘটনার দিন আমিসহ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, পুলিশ ও অন্যরা সেখানে উপস্থিত ছিলাম। আমরা শিক্ষার্থীদের বলি যে শিক্ষকের বিরুদ্ধে তোমাদের অভিযোগ তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বিচার করা হবে। তোমরা শান্ত হও। শিক্ষার্থীরা প্রথমে সেটা মেনে নিয়েছিল। পরে বহিরাগতদের সঙ্গে নিয়ে শিক্ষকের বাসায় হামলা করার চেষ্টা করে। আমার ধারণা বহিরাগতরা বিষয়টিতে ইন্ধন দিয়েছে। 

তিনি জানান, স্থানীয় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আলমগীর বহিরাগত কারা ছিল ও কারা শিক্ষকের বিরুদ্ধে আন্দোলনে উসকানি দিয়েছে সে বিষয়ে ভালো বলতে পারবেন।  

তবে, স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মহিউদ্দিন খান আলমগীরকে একাধিকবার কল দিলেও তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

 

/টিটি/এমওএফ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
অপহৃত ১০ বাংলাদেশিকে ফেরত দিয়েছে আরাকান আর্মি
অপহৃত ১০ বাংলাদেশিকে ফেরত দিয়েছে আরাকান আর্মি
ধানমন্ডিতে ছাদ থেকে পড়ে গৃহকর্মী আহত 
ধানমন্ডিতে ছাদ থেকে পড়ে গৃহকর্মী আহত 
ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে সকার স্কুলের বাছাইয়ে ৩ বাংলাদেশি কিশোর
ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে সকার স্কুলের বাছাইয়ে ৩ বাংলাদেশি কিশোর
দীর্ঘ অপেক্ষার পর ঢাকায় স্বস্তির বৃষ্টি, কমলো তাপমাত্রা
দীর্ঘ অপেক্ষার পর ঢাকায় স্বস্তির বৃষ্টি, কমলো তাপমাত্রা
সর্বাধিক পঠিত
পদ্মা নদীতে চুবানো নিয়ে যা বললেন ড. ইউনূস
পদ্মা নদীতে চুবানো নিয়ে যা বললেন ড. ইউনূস
পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষ, খুলনা-মোংলায় শুরু হচ্ছে ট্রেন চলাচল
পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষ, খুলনা-মোংলায় শুরু হচ্ছে ট্রেন চলাচল
আরও কমলো সোনার দাম
আরও কমলো সোনার দাম
অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা অবৈতনিক হচ্ছে
অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা অবৈতনিক হচ্ছে
লাউ খেলে মিলবে এই ৮ উপকারিতা
লাউ খেলে মিলবে এই ৮ উপকারিতা